Loading..

খবর-দার

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০১:১০ অপরাহ্ণ

নতুন রেকর্ড: সমুদ্র পথে আসছে পৌনে ছয় লাখ টন পেঁয়াজ

নতুন রেকর্ড: সমুদ্র পথে আসছে পৌনে ছয় লাখ টন পেঁয়াজ


ভারতের বিকল্প দেশগুলো থেকে পৌনে ছয় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি মাসে প্রথম ২০ দিনে এসব পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন তাঁরা। এত কম সময়ে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহে এটি রেকর্ড বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগামী মাসের শুরু থেকে এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর থেকেই এ মাসের শুরুতে ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া শুরু করেন। এ মাসের শুরু থেকে ভারত রপ্তানি বন্ধের দিন (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা দুই লাখ ২৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন। রপ্তানি বন্ধের পর রোববার পর্যন্ত চার কর্মদিবসে আরও সাড়ে তিন লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন তাঁরা।

অর্থাৎ এ মাসের ২০ দিনে মোট ৫ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৫ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। এর মধ্যে গত ১৭ সেপ্টেম্বর একদিনে সর্বোচ্চ বা এক লাখ ৫৮ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন দুই শতাধিক ব্যবসায়ী। মোট ৮৩৫টি চালানে এসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনার কথা রয়েছে। এ সপ্তাহেই আমদানি অনুমতির পরিমাণ ছয় লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।


ঢাকার অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজহার আলী প্রথম আলোকে বলেন, যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে তা রেকর্ড। এই পেঁয়াজ আমদানি হলে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। কোনো সংকট থাকবে না।

পেঁয়াজের মতো কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রথমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে আমদানির অনুমতি নিতে হয়। এটি কৃষিপণ্য আমদানির প্রাথমিক ধাপ। এই অনুমতি নেওয়ার আগে ব্যবসায়ীরা রপ্তানিকারক দেশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেন। আর অনুমতি নেওয়ার পর ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা হয়। আমদানির অনুমতি নেওয়া হলেও সব পণ্য দেশে আসার নিশ্চয়তা নেই। জাহাজে পণ্য ওঠানোর পরই মূলত নিশ্চিত হওয়া যায় আমদানি পণ্য দেশে আসছে কি না। এরপরও আমদানির অনুমতি নেওয়া পেঁয়াজের সিংহভাগই দেশে আনা হবে এটি বলা যায়।

ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন। ঋণপত্র খোলার পর এসব পেঁয়াজ কনটেইনারবাহী জাহাজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে করে সমুদ্রপথে আনা হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। বিকল্প দেশের বন্দরে জাহাজে বোঝাই করার পর পেঁয়াজ আমদানিতে দেশভেদে ন্যূনতম ১৫ থেকে এক মাস সময় লাগতে পারে বলে জাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ভারত রপ্তানি বন্ধের প্রায় এক মাস পর আমদানির অনুমতি নেওয়ার হিড়িক পড়ে। তবে এবার রপ্তানি বন্ধের আগে থেকেই বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে শুরু করেন তারা। এখন দিন দিন রেকর্ড হচ্ছে।

এবার পেঁয়াজ আমদানিতে বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ছোট ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেশি। বড়দের মধ্যে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ গত রোববার নেদারল্যান্ডস থেকে এক চালানে ২২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহ করেছে। এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক কাজী সালাহউদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, নেদারল্যান্ডস থেকে দ্রুততম সময়ে এই পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা চলছে। এটা মাত্র শুরু বলা যায়। পর্যায়ক্রমে আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, রপ্তানি বন্ধের আগে ভারত থেকে এ মাসের প্রথম ১৪ দিনে প্রায় ৪৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। স্থলবন্দরে আটকে থাকা আরও প্রায় ১৫ হাজার টন পেঁয়াজ এখন খালাস হচ্ছে। এ হিসেবে এ মাসে পেঁয়াজের আর সংকট হবে না। পেঁয়াজ সংকট শুরু হওয়ার আগে আগামী মাসের শুরুতে বন্দরে পৌঁছাতে শুরু করবে বিকল্প দেশের পেঁয়াজ। ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখলেও বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি হবে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো