Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

২৬ অক্টোবর, ২০২০ ০৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা

ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা

সলামী সহযোগিতা সংস্থা বা সংক্ষেপে ওআইসি একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী সংস্থা। ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধের পর ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট ইসরাইল জেরুজালেমের পবিত্র মসজিদুল আকসায় অগ্নিসংযোগ করে। এতে মসজিদের কাঠের তৈরি ছাদ,আটশ বছরের পুরনো কার্পেটসহ অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস হয়ে যায়। উল্লেখ্য, মক্কা মুয়াজ্জেমায় অবস্থিত বায়তুল্লাহ মুসলমানের কিবলাহ নির্ধারণের আগে মসজিদুল আকসা ছিল মুসলমানদের সর্ব প্রথম কিবলাহ। অগ্নিসংযোগের সময় জেরুজালেমের প্রধান মুফতি ছিলেন আমিন আল হুসাইনি। তিনিই সর্বপ্রথম ঘটনাটি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর গোচরীভূত করেছিলেন। ফলে মসজিদুল আকসায় অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি বিদ্যুৎগতিতে মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় সৌদী আরবের তৎকালীন বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আবদুল আজিজ তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় কর্তব্য নির্ধারণে বিশ্বের অপরাপর মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের এক জরুরী সম্মেলন আহবানের প্রস্তাব করেছিলেন যাতে আরব-অনারব নির্বিশেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর এই স্পর্শকাতর বিষয়টির ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগে গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়। উক্ত আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট ১৪ টি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ মিশরের রাজধানী কায়রোতে এক জরুরী বৈঠকে মিলিত হন। ১ মাস পর অর্থাৎ ২২-২৫ সেপ্টেম্বর মরক্কোর রাবাতে আরব-অনারব নির্বিশেষে ২৫ টি মুসলিম দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন স্ব-স্ব দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা। এটিই ছিল ওআইসির প্রথম শীর্ষ সম্মেলন। পরবর্তিতে ওআইসির রূপরেখা চূড়ান্ত করতে ১৯৭০ সালের মার্চে সৌদি আরবের জেদ্দায় মুসলিম বিশ্বের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিলিত হন। উক্ত সম্মেলনে ২৫ টি মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণের সিদ্ধান্তক্রমে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা নামে এই প্রতিষ্ঠানটি আত্মপ্রকাশ করে। একই দিন তাঁরা ওআইসি চার্টার স্বাক্ষর করেন। শুরুতে ওআইসির সদস্য সংখ্যা ছিল ২৪। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর পশ্চিম আফ্রিকামধ্য এশিয়াদক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলাদেশ-পাকিস্তানসহ মোট সদস্য দেশের সংখ্যা ৫৭। এই সংস্থা মূলতঃ মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। ১৯৭২ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ওআইসি। এতে পর্যবেক্ষক হিসেবে ওআইসির সঙ্গে যুক্ত আছে পাঁচটি দেশ (রাশিয়া, বসনিয়া, থাইল্যান্ড, সিএআর ও তুর্কি সাইপ্রাস) এবং সাতটি সংগঠন ও সংস্থা।

জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা হিসেবে ওআইসির একটি জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি দল রয়েছে। জাতিসংঘের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ আন্ত:দেশীয় সংগঠন হচ্ছে ওআইসি। ওআইসির সরকারি ভাষা আরবি, ইংরেজি, এবং ফরাসি। ওআইসি চার্টার অনুসারে সংগঠনটি ইসলামিক মূল্যবোধ রক্ষায় সারাবিশ্বে কাজ করছে । এছাড়া, সংস্থা মুসলিম উম্মাহর একক মুখপত্র হিসেবে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ইসলামী কৃষ্টি-সংস্কৃতি, শিক্ষা-বিজ্ঞানভিত্তিক সৌভ্রাতৃত্বমূলক সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বজায়ে তৎপর । এককথায় বলা যায় ওআইসি মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত কন্ঠস্বর।

মহাসচিবই ওআইসির নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। ওআইসির প্রথম মহাসচিব ছিলেন মালয়েশিয়ার টুংকু আবদুর রহমান এবং বর্তমান (১১তম) মহাসচিব সৌদি আরবের ড. ইউসুফ বিন আহমদ আল উসাইমিন। সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মহাসচিব নির্বাচনে ভোট দেন। ওআইসি চার্টার মতে একজন ব্যক্তি পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য সর্বোচ্চ দুইবার মহাসচিব হতে পারেন।

মূল সংগঠনের বাইরে ওআইসির ছয়টি সহযোগী, ১৮টি অধিভুক্ত, সাতটি বিশেষায়িত সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এবং চারটি স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে। এ ছাড়া ওআইসি চারটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ছয়টি আঞ্চলিক অফিস পরিচালনা করে। সৌদি আরবের জেদ্দায় সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।

মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের শীর্ষ সম্মেলন ওআইসির প্রধান কার্যক্রম। তিন বছর পর পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনেও মহাসচিব ওআইসির শীর্ষ সম্মেলন আহবান করতে পারেন। এ পর্যন্ত ১৪টি সাধারণ এবং সাতটি বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৬৯ সালে মরোক্কোর রাবাতে ওআইসির প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ওআইসির ১৪ তম শীর্ষ সম্মেলন ৩১ মে এবং ১ জুন ২০১৯ তারিখে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত হয়। এর বাইরে সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়েও একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেমনপররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, শ্রম, নারী ইত্যাদি বিষয়ক মন্ত্রীরা পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নচিন্তা থেকে বৈঠক করেন। ১৯৯০ সালের ৫ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে ইসলামে মানবাধিকারবিষয়ক কায়রো ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি গঠনমূলক মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন ও সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার করা হয়।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি