Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

০৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৬:১০ অপরাহ্ণ

বৃহত্তর সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুস শহীদ স্মৃতি সংসদ

বৃহত্তর  সিলেটের কনিষ্ঠতম মুক্তিযোদ্ধা প্রিয় মোঃ আব্দুস শহীদ।

সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা সোনার বাংলা আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে যে সকল সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও দেশের প্রতি সীমাহীন প্রেম ও ভালবাসায়,তাদেরই একজন বৃহওর সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুস শহীদ ।

ঢাকার ধানমন্ডি ভূতের গলিতে ১৯৫৭ সালের ২রা জুন জন্মগ্রহন করেন তিনি।

ছোট বেলা থেকেই তিনি খুব মেধাবী,সাহসী ও চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন।বাবা মায়ের বড় সন্তান ছিলেন বলে তাকে নিয়ে খুব চিন্তাও ছিল তার বাবা মায়ের।ছোট বেলায় বেশ কয়েকবার পালিয়ে তিনি তার ফুপ্পির বাড়ি বেড়াতে যান।

১৯৭১ইং সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ মুক্তিযোদ্ধা শহীদকে অনেক অনুপ্রাণিত করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। মাত্র ১৪ বছর বয়সে দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তার মামার সাথে হবিগঞ্জ ট্রেজারি অফিসে যান।তার মামা ছিলেন স্কুল শিক্ষক ,তার মামা হবিগঞ্জে গিয়েছিল চেক দিয়ে বেতন উঠাইতে ট্রেজারি অফিস থেকে।সেখান থেকে তিনার মামার চোখ ফাকি দিয়ে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অম্পিনগরে দীর্ঘ এক মাস ট্রেনিং শেষেখোয়াই ৩নং সেক্টর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।যুদ্ধকালীন সময়ে তিনার সহযোদ্ধাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট ছিলেন বলে তাকে সবাই ছোট শহীদ বলে ডাকত।

যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি রেকি(তথ্য সংগ্রহ)করিতেন বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ।যুদ্ধের সময় তিনি অনেক জায়গায় রেকি করিয়া বা তথ্য সংগ্রহ করিয়া তার গ্রুপ কমান্ডারকে দিতেন।একদিন রেকি করিতে যাওয়ার পর রোজার ঈদের তিনদিন আগে পাকিস্তান রেলওয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদ সহ সঙ্গে থাকা আরও চারজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল।ধরিয়ে দেওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনি একমাত্র ব্যাক্তি বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন।বাকী চারজনকে ঐ রাতেই মেরে ফেলেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা।শুধু তিনার বয়স কম থাকার দরুন আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন।কিন্তু সেই রাতে তিনাকে পাকিস্তানী বাহিনীরা খুবই বেরহম প্রহার করেছিল।যার ফলে তিনি ডান কানে কিছুই শুনতে পেতেন না,তাছাড়া তিনার সম্পূর্ণ দাঁত লড়িয়া গিয়াছিল যা অসময়েই পড়িয়া গিয়াছিল।১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে কালেঙ্গায় ‘এন্টি ট্যাঙ্ক মাইন’ লাগিয়ে পাকিস্তানী মেজর ইউসুফ খাঁনকে হত্যার মাধ্যমে পুরস্কৃত হন তিনি। যুদ্ধের সময় তিনি অনেক জায়গায় ‘রেকি’ (তথ্য সংগ্রহ) করতে যেতেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর সাব-সেক্টর কমান্ডার এজাজ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে হবিগঞ্জ পি টি আই স্কুলে অবস্থান করেন, এবং হবিগঞ্জের পোদ্দার বাড়ি সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন নিয়োজিত ছিলেন।

২০১৯ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নেন দেশের এই বীর সন্তান। রাষ্ট্রীয় মর্যাদার মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাকে বিদায় জানায়।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের কোর্টআন্দরে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।