Loading..

ভিডিও ক্লাস

১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

জিহবা সংযত রাখা || হাদিস শরীফ || ৯ম - দশম শ্রেণী || মোঃ ফরিদ উদ্দিন || BY Nidm

মানুষ জিহ্বা দ্বারা কথা-বার্তা বলে থাকে। জিহ্বার ব্যবহার ছাড়া কোনো মানুষই কথা বলতে পারেন না। এ কারণে জিহ্বার অপর নাম জবান। যে জবানি থেকে মানুষের কথা প্রকাশ পায়। হাদিসে পাকে জিহ্বার হেফাজতের ব্যাপারে প্রিয়নবি অনেক উপদেশ প্রদান করেছেন। মহান আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেনঃ مَّا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ سورة ق ﴿١٨﴾ অর্থঃ মানুষ এমন কোন কথা বলে না, যা লিপিবদ্ধ করা হয় না। (সূরা ক্কাফঃ ১৮) জিহ্বা একটি নরম গোস্তের টুকরা হলেও এটি মহান আল্লাহ তা’আলার একটি বড় নিয়ামত। এটি দিয়ে যেমন অগণিত পুণ্যের কাজ করা যায়, ঠিক এর বিপরীত অসংখ্যা গুনাহের কাজ এটি দিয়েই সংগঠিত হয়। শ্রেষ্ঠতম সম্পদ তথা ঈমান এই জিহবা দিয়ে উচ্চারিত হয়, অপর দিকে কুফরীও এই জিহবা দিয়েই বের হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক বস্তু তা উপস্থিত হোক বা অনুপস্থিত, স্রষ্টা হোক বা সৃষ্টি, জানা অথবা অজানা, বাহ্যিক অথবা আভ্যন্তরীণ সকল কিছুই এই নরম গোস্তের খণ্ড দিয়েই বর্হিগমন ঘটে। উদাহরণ স্বরূপঃ জ্ঞান যে বস্তুকে বেষ্টন করে, জিহবা তা বর্ণনা করে তা সত্য হোক বা মিথ্যা হোক। জ্ঞানের বাইরে কিছুই নেই। এটি এমন এক বৈশিষ্ট্য যা জিহবা ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ প্রতঙ্গের মধ্যে পাওয়া যায় না। যেমনঃ চোখের কাজ দেখা, কানের কাজ শোনা, পায়ের কাজ চলাচল করা ইত্যাদি। কিন্তু জিহবার কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত। এর কোন সীমা পরিসীমা নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি তার জিহবাকে সংযত রাখে না, শয়তান তাকে দিয়ে অনেক কিছু বলাতে পারে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে পারে। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেনঃ ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِى النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ ». قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ. অর্থঃ জিহবার কারণেই মানুষকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তিরমিযি ও ইবনে মাজা) জিহবার কারণেই শত্র“ বন্ধুতে পরিণত হয়, আবার খুবই নিকটতম বন্ধু শত্র“ হয়ে যায়। জিহবার শক্তি তরবারির চেয়েও ধারালো। একজন আরব্য কবি ইয়াকুব হামদূনী (রহ.) যথার্থই বলেছেনঃ وقد يُرْجَى لجُرْح السيف بُرْءٌ ** ولا بُرْءٌ لما جرح اللِّسانُ جِرَاحَاتُ السِّنَانِ لَهَا التِئَامٌ ** وَلا يَلْتَامُ مَا جَرَحَ الِّلسَانُ وَجُرْحُ السَّيْفِ تَدْمِلُهُ فَيَبْرَا ** وجُرْحُ الَّدهَرِ مَا جَرَح اللِّسانُ আশা করা যায় তরবারীর আঘাতের ক্ষম নিরাময় হবে। কিন্তু জিহ্বার আঘাতের ক্ষত নিরাময় হয় না। তরবারীর আঘাতে যদি কোন ক্ষত হয় তা চিকিৎষার মাধ্যমে সারানো সম্ভব, কিন্তু জিহবার মাধ্যমে যে ক্ষত হয় তা সারানো সম্ভব নয়। তরবারীর আঘাত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়। কিন্তু জিহ্বার আঘাত সারা জীবন রয়ে যায়। নবী কারিম (সঃ) এরশাদ করেছেনঃ 4672 الصَّمْتُ حِكَمٌ, وَقَلِيلٌ فَاعِلُهُ) رواه البيهقي: অর্থঃ চুপ থাকা প্রজ্ঞা ও সাবধানতা। (বায়হাকী: ৪৬৭২) তিনি আরো বলেছেনঃ مَنْ صَمَتَ نَجَا যে চুপ থাকে সে মুক্তি পায়। হযরত ওকবা ইবনে আমের বলেন, আমি রাসূলকে (সা.) জিঙ্গেস করলাম মুক্তির উপায় কি? নবীকুল শীরমনি সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী (সা.) বললেনঃ أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ (رواه الترمذي وحسنه) অর্থঃ জিহবাকে সংযত রাখ, ঘরের মধ্যে থাক এবং গোনাহের জন্য কান্নাকাটি কর (তিরমিযি ও হাসান)। ইমাম বুখারী উল্লেখ করেছেনঃ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ * صحيح البخارى (رواه البخاري) অর্থঃ হযরত সাহাল ইবনে সাদ বলেন, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেনঃ যে আমাকে জিহবা ও লজ্জাস্থানের নিশ্চয়তা দিবে, আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব। (সহীহুল বুখারী) হযরত এবনে মাসউদ (রা.) সাফা পাহাড়ে উঠে বলতেনঃ يَا لِسَانُ قُلْ خَيْرًا تَغْنَمْ وَاسْكُتْ عَنْ شر تسلم مَن قبلِ أن تَندم إني سمعتُ رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقول: أكثر خطايا ابن ءادم من لسانه (رواه الطبراني وغيره) অর্থঃ হে জিহবা ভাল কথা বল গনিমত পাবে, এবং অনিষ্ট থেকে অনুতপ্ত হওয়ার পূর্বে চুপ কর, বিপদমুক্ত থাকবে (তাবরানী)। লোকেরা জিজ্ঞেস করলঃ এটা কি আপনি নিজের পক্ষ থেকে বলছেন? তিনি বললেনঃ না। বরং আমি আল্লাহ রাসল (সা.) কে বলতে শুনেছি, বণি আদমের অধিকাংশ গোনাহ তার জিহবার মধ্যে। হযরত ওমর (রা.) বলেনঃ عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ كَفَّ لِسَانَهُ سَتَرَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَوْرَتَهُ ، وَمَنْ مَلَكَ غَضَبَهُ وَقَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَذَابَهُ ، وَمَنِ اعْتَذَرَ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَبِلَ عُذْرَهُ – رواه الطبراني في الأوسط والبيهقي في الشعب অর্থঃ যে জিহবা সংযত রাখে মহান আল্লাহ তার দোষক্রটি গোপন রাখেন। যে রাগ সংবরন করে আল্লাহ তাকে আজাব থেকে রক্ষা করেন। যে আল্লাহর সামনে ওযর পেশ করে আল্লাহ তার ওযর কবুল করেন। (বায়হাকী ও তাবরানী)