Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৪:২৭ অপরাহ্ণ

পাক হানাদার মুক্ত শেরপুর উপজেলা।
আজ ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গ্রাস থেকে মুক্ত হয় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা শহর। সারা দেশ তখনও উত্তাল। চলছে তুমুল যুদ্ধ। এরই মাঝে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ন্ত্রণ নিলে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা এলাকা।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল শেরপুরে প্রথম পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাকবাহিনী বাঘড়া কলোনী গ্রামের ৩২ জন নিরীহ লোককে ইটখোলার বধ্যভূমিতে ধরে এনে ২৫-২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন পাকসেনাদের ব্রাশফায়ারে বাগড়া গ্রামের আলী আকবর, আজিজার মণ্ডল, সাত্তার মণ্ডল, আফজাল শেখ, আয়েজ মণ্ডল, আকবর মণ্ডল, দুলু মণ্ডল, জহির মণ্ডল, মোফাজ্জল মণ্ডলসহ ২৫-২৬ জন মারা যান। ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী ঘোগাব্রিজের নিকট মোতাচ্ছের প্রামাণিক, মোসলেম প্রামাণিক, আব্বাস, বিশা শেখ, ময়েন শেখ, চণ্ডিপুরের কলিম শেখ, বগুড়া শহরের মেহের আলী শেখসহ অন্তত ৩ শতাধিক নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে। একই দিন দড়িমুকন্দ গ্রামে পাকবাহিনীর নির্মম অত্যাচারে ২৬ জন নিরীহ গ্রামবাসি নিহত হয়। এছাড়াও মে মাসে পাকবাহিনী কল্যাণী গ্রামের শতাধিক নিরীহ লোককে হত্যা করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় গাছ কেটে পাকিস্তানিদের বাধা দেওয়ার চেষ্টাসহ সামান্য অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি।
এরপর দেশ স্বাধীনের পূর্ণ প্রতিজ্ঞা ও প্রস্তুতি নিয়ে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে তৎকালীন শেরপুর ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে মুক্তিবাহিনী। কমান্ডার নিযুক্ত হন ন্যাপ নেতা সিদ্দিক হোসেন বারী। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে শেরপুর সরকারি ডিজে মডেল হাইস্কুল চত্ত্বরে। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন থানার তৎকালীন হাবিলদার আব্দুল হালিম। তাকে সহযোগিতা করেন থানার দারোগা ওয়াজেদ মিয়া।
পরবর্তীতে আরও বেশি সংগঠিত ও প্রশিক্ষিত হয়ে বিভিন্নভাবে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৩ ডিসেম্বর বিকালে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়। রাজাকাররা আশ্রয় নেয় বিহারি অধ্যুষিত ঘোলাগাড়ি গ্রামে।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় জেলার সারিয়াকান্দি থানা (বর্তমান উপজেলা) থেকে বাচ্চুর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ও ধুনট থানা (বর্তমান উপজেলা) থেকে আকরাম হোসেন খাঁন ও ইউসুফ উদ্দিনের নেতৃত্বে শাহজাহান আলী, খন্দকার আজিজুল হক, মওলা বক্স, মমতাজ উদ্দিন, আব্দুল জলিল, আব্দুর রাজ্জা, ইমান আলী, শাহাবুদ্দিনসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা শেরপুর উপজেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এরপর তারা ঘোলাগাড়ি গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে রাজাকার মুক্ত করেন। এ সময় রাজাকার আলী আকবর, বুলু আক্তার, দিল মাহমুদ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে মারা যায়। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর পার্কের মাঠে (বর্তমানে টাউনক্লাব পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা অর্নাস কলেজ) স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর থেকে ১৪ ডিসেম্বর শেরপুর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে থাকে বিভিন্ন পর্যায়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।