Loading..

খবর-দার

২০ জানুয়ারি, ২০২১ ০৯:০৬ অপরাহ্ণ

মা" সম্পর্কিত শিক্ষণীয় টুকরো কাহিনী ... পড়ে দেখুন
মা" সম্পর্কিত শিক্ষণীয় টুকরো কাহিনী ...
পড়ে দেখুন
জগৎ সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালোবাসা আমাদের সমস্ত বেদনা দূর করে দেয় তিনিই হলেন "মা"।
মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দুঃখে-কষ্টে, সংকটে-উত্থানে যে মানুষটি স্নেহের পরশ বিছিয়ে দেয় তিনি হচ্ছেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন মা।
মা হচ্ছেন জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম.কে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, তা হল- আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া, তাদের সাথে অসদাচারণ করা কিংবা তাদের আঘাত দেওয়া, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। [বুখারি]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কোন আমল বা কাজ আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়? তিনি উত্তরে বলেন, সময়মত নামায আদায় করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরপরে কি? তিনি উত্তর করলেন, পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর কি? তিনি উত্তর করলেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। [বুখারি, মুসলিম]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আছ রা. বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমন করল এবং বলল, আমি আপনার কাছে হিজরত ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের বায়আত হতে এসেছি। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন, তার পিতামাতা বেঁচে আছে কিনা। লোকটি উত্তর করল, হ্যাঁ, উভয়েই বেঁচে আছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার পিতামাতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের সেবা কর। [বুখারি, মুসলিম]
এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ওলামায়ে কেরাম বলেন, যদি ফরজে আইন না হয় তবে পিতামাতার অনুমতি ব্যতীত জিহাদ কিংবা দীন শিক্ষা করার জন্য নিজ শহরের বাইরে যাওয়া যাবে না।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জিহাদের উদ্দেশ্যে ইয়ামেন থেকে মদীনায় হিজরত করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়ামেনে তার কোন আত্মীয়-স্বজন আছে কিনা? লোকটি উত্তর করল, সেখানে তার পিতামাতা রয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, সে তার পিতামাতার অনুমতি নিয়ে এসেছে কিনা? লোকটি উত্তর করল, না। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি তোমার পিতামাতার কাছে ফিরে যাও। হিজরতের জন্যে তাদের অনুমতি নিয়ে আস। যদি তারা তোমাকে অনুমতি দেয় তবে জিহাদে গিয়ে শরিক হও। যদি তারা তোমাকে অনুমতি না দেয় তবে তাদের সাথে অবস্থান কর এবং ভালোভাবে তাদের সেবা যত্ন কর। [আবু দাউদ, আহমদ]
হিজরত ও জিহাদ আল্লাহ তাআলার কাছে দুটি প্রিয়তম বস্তু। বস্তুত, যদি কারও পিতামাতা অসুস্থ কিংবা বৃদ্ধ হয়ে যায় তবে তাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ আমল থেকে পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখন পিতামাতার সেবা করাই তার প্রধান কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় এবং এর ফলে হিজরত ও জিহাদকারীদের সমতুল্য সওয়াব সে প্রাপ্ত হবে। এসব হাদীস থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, যদি কেউ পিতা মাতার বৃদ্ধ বয়সে বা তাদের অসুস্থতার সময় কোন জাগতিক ইচ্ছা কিংবা প্রয়োজনে তাদের উপেক্ষা বা অবহেলা করে তবে সে গুরুতর পাপের অপরাধী বিবেচিত হবে।
বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি তার বৃদ্ধ মাতাকে হারাম শরীফে নিয়ে আসে। সে তাকে তার কাঁধে নিয়ে কাবা শরীফের চারপাশে তাওয়াফ করতে থাকে। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, আমি কি এখন আমার মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন করেছি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উত্তর দিলেন, তুমি তোমার মায়ের একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের হকও আদায় করনি। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খন্ড]
একজন অমুসলিম মায়ের প্রতিও দয়া প্রদর্শন আসমা বিনতে আবু বকর রা. বর্ণনা করেন, তার মাতা অমুসলিম অবস্থায় তাকে দেখতে মদীনায় আসেন। তিনি রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, আমার মা অমুসলিম। কিন্তু তিনি আমার কাছে কিছু পেতে আশা করছেন। আমি কি তাকে সন্তুষ্ট করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। [বুখারি, মুসলিম]
আসমা ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহিয়সী স্ত্রী আয়েশা রা. এর বৈমাত্রেয় বড় বোন। আবু বকর রা. মুসলমান হওয়ার পুর্বে তাকে (তার মাকে) তালাক দিয়েছিলেন। সে ইসলাম গ্রহণ করেনি এবং হুদায়বিয়ার সন্ধির পর অমুসলিমরা যখন মদীনায় আসার অনুমতি পায়, সে তখন তার মেয়েকে দেখতে মদীনায় আসে। যখন আসমা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি তার মায়ের সাথে কেমন আচরণ করবেন? তিনি তার মায়ের প্রতি সদয় ও বিবেচক হতে নির্দেশ দিলেন, সে একজন অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে পিতা-মাতার বাধ্যগত সন্তান হওয়ার তাওফীক দিন। আমীন।