Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

০১ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ০১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

মাতৃ ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি

ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হলো। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকার রাজপথে জীবন উৎসর্গ করার স্মৃতি এ মাসেই সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই স্মৃতির সাড়ম্বর উদ্‌যাপন চলে সারা মাস ধরে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে মাসব্যাপী চলে একুশের গ্রন্থমেলা; আয়োজিত হয় জাতীয় কবিতা উৎসব। প্রকাশিত হয় অনেক স্মরণিকা, শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়; জেলা শহরগুলোতেও। সংবাদপত্রগুলোতে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও বাংলা ভাষাবিষয়ক লেখালেখি শুরু হয়। সম্প্রচারমাধ্যমেও শুরু হয় নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার। এসব উদ্যোগ–আয়োজনের বাহ্যিক আড়ম্বরের পাশাপাশি চিন্তাভাবনার জগতেও একটু সাড়া পড়ে। সংখ্যায় কম হলেও এমন মানুষ আছেন, যাঁরা ফেব্রুয়ারির এসব আনুষ্ঠানিকতার সুবাদে বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থা, তার ভবিষ্যৎ ইত্যাদি বিষয়ে চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেন; কেউ সংবাদমাধ্যমে, কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, সভা–সেমিনারে, কেউ কেউ ঘরোয়া বা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়।

ফেব্রুয়ারিকে যখন আমরা ভাষার মাস বলছি, তখন অবশ্যই এটা ভাষা নিয়ে আলাপ–আলোচনা করার প্রাসঙ্গিক সময়। এই মাসে আমরা মোটা দাগে কতগুলো জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হই। যেমন, যে বাংলাকে আমরা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি, সেই ভাষার এখন কী অবস্থা। মর্যাদার দিক থেকে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার যে জাতীয় অঙ্গীকারটি প্রায়ই উচ্চারিত হয়, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? মাতৃভাষা বাংলার প্রতি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের, বিশেষত নবীন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি কী। শিক্ষার্থী সমাজ, শিক্ষিত কর্মজীবী সমাজ, অফিস–আদালত, শিল্প–ব্যবসা, সেবা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন, সামগ্রিকভাবে নাগরিক সমাজ বাংলা ভাষাকে কীভাবে মূল্যায়ন করে।

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা আশাভঙ্গের দুঃখ বোধ করি: আমরা বলি, মাতৃভাষা বাংলা আমাদের অনাদরের শিকার হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মাতৃভাষার প্রতি আমাদের আচরণ এখন বিমাতাসুলভ। এটা করা হয় ইংরেজি ভাষার প্রতি আমাদের আগ্রহের সঙ্গে বাংলার তুলনা করতে গিয়ে। শিক্ষিত তরুণ সমাজের কাছে আজ বাংলার গুরুত্ব নেই, কারণ বাংলা ভাষার জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে না। সেটা করে ইংরেজি ভাষা। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজির প্রাধান্য শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। কিন্তু তার ফলে ফরাসি, জার্মান, রুশ, চীনা, জাপানি ইত্যাদি ভাষাভাষী মানুষের কাছে নিজ নিজ মাতৃভাষার গুরুত্ব, মর্যাদা, সমাদর কিছুই কমছে না। তাহলে বাঙালির কাছে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা ও সমাদর কেন কমেছে এবং আরও কমে যাচ্ছে?

এসব বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার দায়িত্ব জাতীয় নীতিনির্ধারকদের। ভাষার গুরুত্ব তার ব্যবহারে; জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া , স্বাধীনতার পরপর যেসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগের সূচনা করা হয়েছিল, সেগুলো  এগিয়ে নেওয়া , ও তাপর্যালোচনা করা প্রয়োজন। উচ্চ আদালতে বাংলার পূর্ণাঙ্গ প্রচলন কিভাবে করা যায় তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। সরকারি–বেসরকারি অফিস–আদালতে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলার ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলা সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রেতাসাধারণের জন্য ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপন ইংরেজি ভাষায় প্রচার করার কোনো প্রয়োজন বা উপযোগিতা নেই; এর পরিবর্তে বাংলায় বিজ্ঞাপন তৈরি ও প্রচার করা উচিত। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রচারের কথা ভাবা যেতে পারে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সব দেশি প্রতিষ্ঠানের নামফলক বাংলায় লেখা শুরু হোক, পণ্য কেনাবেচার রসিদ কেন বাংলায় হবে না? প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার সব স্তরে বাংলা ভাষা শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। এসব বিষয়ে চিন্তাভাবনা এই ভাষার মাসেই শুরু হোক।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি