Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

০৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ০৯:০৬ অপরাহ্ণ

পবিত্র যাকাত উনার নিছাব কাকে বলে?
পবিত্র যাকাত উনার নিছাব কাকে বলে:
যে পরিমাণ অর্থ-সম্পদ বা নগদ অর্থ কোন ব্যক্তির সাংসারিক সকল মৌলিক প্রয়োজন বা চাহিদা মিটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ যা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা ঐ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ নির্দিষ্ট তারিখে পূর্ণ এক বছর ঐ ব্যক্তির মালিকানায় থাকলে তা থেকে পবিত্র যাকাত প্রদান করা ফরয হয়, নূন্যতমভাবে ঐ পরিমাণ অর্থ-সম্পদকে পবিত্র শরীয়ত উনার পরিভাষায় ‘নিছাব’ বলে। আর যিনি নিছাব পরিমাণ মাল-সম্পদের মালিক হন উনাকে ছাহিবে নিছাব বলে। মাল-সম্পদের প্রকৃতি বা ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন মালের নিছাব বিভিন্ন রকম। (ফিকাহর কিতাবসমূহ)
الاصلية الحوائج (আল হাওয়ায়িজুল আছলিয়্যাহ) বা মৌলিক প্রয়োজনীয় বস্তু বা সম্পদ:
কোন মু’মিন-মুসলমান উনার কার্পণ্য ও অপচয় ব্যতিরেকে মধ্যমপন্থায় নিজের ও পরিবারের চাহিদা মিটানোর বা পূরণের জন্য যা যা আবশ্যক মূলত সেটিই হচ্ছে মৌলিক প্রয়োজনীয় বস্তু। যেমন- খাদ্যদ্রব্য, পরিধেয় বস্ত্র, বসবাসের স্থান অর্থাৎ থাকার ঘর, ঘরের আসবাবপত্র, চিকিৎসার অর্থকড়ি তথা ঔষধপত্র, গৃহস্থলি সামগ্রী, পেশাসংক্রান্ত উপকরণ, কারখানাার যন্ত্রপাতি ও স্থান, যাতায়াত তথা যোগাযোগের বাহন খরচ এগুলোর উপর যাকাত নেই। (হিদায়া, কুদূরী)
নিছাবের মূল বিষয়বস্তু ও পরিমাণ প্রসঙ্গে:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে- “আর তাদের তথা ধনীদের মালে রয়েছে নির্ধারিত হক অভাবী ও বঞ্চিতের।” (পবিত্র সূরা মাআরিজ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
উক্ত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে বুঝা গেল যে, পবিত্র যাকাত উনার সুনির্দিষ্ট হক্ব মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক নির্ধারিত। তা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে, যেমন-
“হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তোমার ২০০ দিরহাম তথা সাড়ে ৫২ তোলা (বা প্রায় ৬০০ গ্রাম) রৌপ্যমুদ্রা থাকে এবং তোমার মালিকানায় এক বছর পূর্ণ হয়, তাহলে তাতে ৫ দিরহাম তথা ২.৫% বা ১৫ গ্রাম রূপা পবিত্র যাকাত ফরয হবে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে তোমাকে কোন পবিত্র যাকাত দিতে হবে না, যতক্ষণ না তুমি ২০ দীনার বা মিছকাল তথা সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণের মালিক হও। যখন তোমার নিকট ২০ দীনার বা মিছকাল তথা সাড়ে ৭ তোলা বা প্রায় ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ হবে এবং তাতে এক বছর পূর্ণ হবে, তখন তা থেকে অর্ধ দীনার বা অর্ধ মিছকাল তথা চল্লিশ ভাগের এক ভাগ পবিত্র যাকাত প্রদান করতে হবে। এর বেশি যা হবে, তা থেকে এ হিসেবেই দিতে হবে। (আবূ দাউদ শরীফ)
শতকরা ২.৫% হারে পবিত্র যাকাত উনার দলীল:
উপরোল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে চল্লিশে এক টাকা, একশততে আড়াই টাকা, দুইশততে পাঁচ টাকা, হাজারে পঁচিশ টাকা পবিত্র যাকাত ধার্য করা হয়েছে। এভাবে যত উর্ধ্বে যাক না কেন সে অনুযায়ী পবিত্র যাকাত দিতে হবে। (আবূ দাউদ শরীফ)
পবিত্র যাকাত উনার নিয়ত থাকা আবশ্যক: 
পবিত্র যাকাত পরিশোধ বা আদায়ে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। এটা ফরয ইবাদত, এর নিয়ত করা ওয়াজিব। মুখে উচ্চারণ করা বা পবিত্র যাকাত গ্রহণকারীকে শুনিয়ে বলা প্রয়োজন নেই। তবে মনে মনে নিয়ত অবশ্যই করতে হবে যে ‘আমি পবিত্র যাকাত আদায় করছি’ অন্যথায় পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। তা সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে। তবে নিয়ত ছাড়াই সমস্ত সম্পদ ব্যয় করলে তার উপর আর কোন পবিত্র যাকাত উনার হুকুম বর্তাবে না। (কুদূরী, আল হিদায়া)
বর্তমানে সোনা ও রূপায় কোনটি নিছাব হিসেবে উত্তম:
পবিত্র যাকাত যে সময়ে ফরয হয় সে সময়ে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমান ছিল বিধায় সোনা ও রূপা উভয়টিই নিছাবের মূল সূত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই এ সূত্রানুসারে উভয়ের যে কোন একটির মূল্য ধরলেই চলবে।
তবে বর্তমানে যেহেতু রূপার মূল্য সোনার মূল্য অপেক্ষা অনেক কম তাই সতর্কতা ও পরহেযগারী হলো অল্পটি নেয়া। অর্থাৎ সোনা ও রূপা উভয়টার মধ্যে যেটাকে নিছাব হিসেবে গ্রহণ করলে গরীবের উপকার হয় সেটাকেই নিছাব হিসেবে গ্রহণ করা উত্তম ও তাক্বওয়ার অন্তর্ভূক্ত। এতে একদিকে যেমন পবিত্র যাকাত দাতার (ইবাদাতকারীর) সংখ্যা বাড়বে অন্যদিকে গরীবের বেশি উপকার হবে; যা পবিত্র যাকাত, ছদাকাত ও ইনফাকের মৌলিক চাহিদা। এটাই ইমাম ও মুজতাহিদীনগণ উনাদের গ্রহণযোগ্য মত। (কুদূরী, হিদায়া)
উল্লেখ্য: ১ ভরি = ১ তোলা বা ১১.৩৩ গ্রাম। সুতরাং ৭.৫ ভরি = ৮৫ গ্রাম (প্রায়), ৫২.৫ ভরি = ৫৯৫ গ্রাম (প্রায়)।
পবিত্র যাকাত উনার প্রকারসহ নিছাবের দলীল:
স্বর্ণের পবিত্র যাকাত: এ প্রসঙ্গে ফিকাহর কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
“বিশ মিছকাল অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা কম পরিমাণ স্বর্ণের পবিত্র যাকাত ওয়াজিব হয় না। অতএব, কারো কাছে যদি বিশ মিছকাল অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ এক বছর অধিনে থাকে তাহলে অর্ধ মিছকাল অর্থাৎ চল্লিশ ভাগের এক ভাগ স্বর্ণ পবিত্র যাকাত দিতে হবে।” (কুদূরী, আল হিদায়া)
রৌপ্যের পবিত্র যাকাত: এ প্রসঙ্গে ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ করা হয়-
“রৌপ্য (এর মূল্য) দুইশত দিরহামের কম অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলার কম হলে তার পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। দুইশত দিরহাম অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য এক বছর মালিকের অধিনে থাকলে তখন এতে পাঁচ দিরহাম তথা চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হিসেবে তথা শতকরা আড়াই ভাগ হিসেবে পবিত্র যাকাত দিতে হবে।” (কুদূরী, আল হিদায়া)
ব্যবসার পণ্য বা আসবাবপত্রের পবিত্র যাকাত (সোনা-রূপার নিছাবে রূপার মূল্য ধরে): 
“ব্যবসায়ের মাল যে প্রকারেরই হোক না কেন, তার দাম সোন-রূপার নিছাব পরিমাণ হলেই পবিত্র যাকাত ওয়াজিব হয় সোনা অথবা রূপার মধ্য থেকে যার দাম ধরলে গরীব-মিসকীনের বেশি উপকার হয় তার দাম বা মূল্যই ধরে পবিত্র যাকাত দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সোনার চেয়ে রূপার মূল্যকেই প্রাধান্য দিয়ে পবিত্র যাকাত আদায় করা উত্তম। কেননা সোনার দাম ধরে দিলে অনেকের পবিত্র যাকাত আসবে না।” (কুদূরী, আল হিদায়া)
গৃহপালিত বিচরণ ও বর্ধনশীল পশুর পবিত্র যাকাত: (এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পরে আসতেছে)
ফসলের পবিত্র যাকাত: (যাকে পরিভাষায় উশর বলা হয়) (এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পরে আসতেছে)
পবিত্র রোযা উনার পবিত্র যাকাত: (যাকে যাকাতুল ফিতর বা ছদকাতুল ফিতর বলে উল্লেখ করা হয়)। ততসঙ্গে পবিত্র কুরবানী, তবে ছদকাতুল ফিতর এবং পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হলেও হুকুমের কিছুটা তারতম্য রয়েছে। সেটা হচ্ছে এই যে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন ছুবহে ছাদিকের পূর্বে ছাহিবে নিছাব তথা নিছাব পরিমাণ মালের মালিক হলে তার উপর ছদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। এ ক্ষেত্রে নিছাব বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। একইভাবে ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্জ শরীফ কোন ব্যক্তি ছাহিবে নিছাব হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রেও নিছাব বছর পূর্ণ হওয়ার শর্ত নয়। (হিদায়া, কুদূরী)
যে যে সম্পদ বা মালের যাকাত ফরয:
পবিত্র যাকাত মুসলমান উনাদের প্রায় যাবতীয় মালেই ফরয, যদি তার নিছাব ও শর্ত পূরণ হয়। যেমন- সোনা-রূপা, নগদ অর্থ, যমীনে উৎপন্ন ফসল ও ফলফলাদি, যমীনে প্রাপ্ত গুপ্ত ধন, খণিতে প্রাপ্ত খণিজ দ্রব্য, ব্যবসায়ের পণ্যদ্রব্য, গৃহপালিত পশু, যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এসকল প্রকার মালেই পবিত্র যাকাত ফরয। (আল হিদায়া)

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি