Loading..

খবর-দার

২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ০৩:৪০ অপরাহ্ণ

রূপসী চিকরাশির নানা গুণ

                                 ঢাকার মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে চিকরাশি বৃক্ষ

বিশ বছর আগেও গাছটি ছিল অচেনা। একজন বৃক্ষপ্রেমী শালবনে এই গাছ দেখে ফোনে তার বর্ণনা শুনিয়ে পরিচয় জানতে চান। বর্ণনা শুনে আমি হাবুডুবু খেতে থাকি! তাৎক্ষণিকভাবে তূণ গাছের কথা মনে পড়ে। কারণ, বর্ণনার সঙ্গে এ গাছের কিছুটা সাদৃশ্য আছে। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারলাম না। 

কয়েকদিন পর তিনি গাছটির পাতাসহ কিছু ছবি পাঠান। মিলিয়ে দেখি এ-তো চিকরাশি। বন-পাহাড়ের গাছ। একসময় শালবনে অঢেল থাকলেও এখন সংখ্যায় একেবারেই নগণ্য। দারুমূল্য থাকায় কাঠ ব্যবসায়ীদের লালসার শিকার। বৃক্ষায়নের মাধ্যমে বনে আবার গাছটি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। শুধু দারুমূল্যেই নয়, গাছটি গড়নের দিক থেকেও নান্দনিক।

এক সময় চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা এবং সিলেট ও কুমিল্লায় মোটামুটি সহজলভ্য ছিল, এখন নেই বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদউদ্যানে কয়েকটি গাছ আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক নামে পরিচিত। যেমন বোগাপোমা, পাববা ইত্যাদি। ইংরেজি নাম Burma almond wood, Chittagong wood এবং Indian mahogany। মালয় নাম ছেরানা পুটিহ, সানটাং পুটিহ। মিয়ানমারের নাম তাওয়াইনমা, ইয়েইনমা।

স্থানভেদে গাছ মাঝারি বা দীর্ঘাকৃতির হতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা বেশ বড়, রং গাঢ় সবুজ, কিনারা ঢেউ খেলানো, শিরা সুস্পষ্ট এবং আগার দিক ক্রমশ সরু। ফুল হলুদ বা লাল, ৫টি মুক্ত পাপড়িতে ছড়ানো, পরাগধানি মোমবাতির মতো, ফোটে পর্যায়ক্রমে। ফল উপবৃত্তাকার, বেলনাকার, ডালের আগায় গুচ্ছবদ্ধ বা জোড়ায় জোড়ায়, বাইরের আবরণ কাষ্ঠল, পাকলে ধূসর বাদামি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফল পাকার মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। বীজ বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রাকৃতিকভাবেই চারা জন্মে। কাণ্ডের মূল সারাংশ লালচে বা ধূসর বাদামি রঙের।                                                                  চিকরাশি (Chukrasia tabularis) সমতলের চিরসবুজ বনের গাছ। সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩০০ থেকে ৮০০ মিটার উঁচুতে এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৮০০ থেকে ৩৮০০ মিলিমিটারে এই গাছ ভালো জন্মে। আমাদের সমতলের লোকালয়গুলোতে খুব একটা দেখা যায় না।

এই গাছের কাঠ পাতলা করে কেটে অলঙ্কৃত করে অন্য কাঠের ওপর বসানোর কাজে বেশ উপযুক্ত। ফুল থেকে লাল ও হলদে রঞ্জক দ্রব্য পাওয়া যায়। পাতায় শতকরা ২২ ভাগ ট্যানিন আছে। কাঠ উৎকৃষ্টমানের বাক্স ও সিন্দুক বানানোর কাজে লাগে। তা ছাড়া রেলওয়ের স্লিপার তৈরি এবং দরজা-জানালায়ও ব্যবহার্য। বাকল জ্বরসহ নানা রোগের মহৌষধ। আদি আবাস বাংলাদেশ, ভারত এবং মিয়ানমার হলেও বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।