Loading..

মুজিব শতবর্ষ

২২ মার্চ, ২০২১ ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারি শিক্ষকদের প্রত্যাশা পিতার স্বপ্ন কন্যার হাত ধরেই বাস্তবায়িত হোক।

পদ্মাসেতু ছিল দেশবাসীর স্বপ্ন, বিশ্বের বিষ্ময় শেখ হাসিনা করছেন বাস্তবায়ন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পদ্মাসেতু আজ আর স্বপ্ন নয়, রূঢ় বাস্তবতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বপ্ন ছিল বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ করা। স্বাধীনতা উত্তরকালে ভঙ্গুর অর্থনীতি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু একযোগে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে তাঁর ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। পঁচাত্তরের নির্মম ট্র্যাডিজির কারণে বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুযোগ পাননি। এখন বেসরকারি শিক্ষকদের প্রত্যাশা পিতার স্বপ্ন কন্যার হাত ধরেই বাস্তবায়িত হোক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ যাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল একটি শোষণ ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। রাজনীতির বাইরেও বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত বিভিন্ন ভাষণ, আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি, ১৯৭০ এর নির্বাচনী ইশতেহার, বায়াত্তরের সংবিধানে ঘোষিত শিক্ষা সম্পর্কিত ধারা এবং কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন থেকে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও মমত্ববোধের সুস্পষ্ট প্রতিফলন ফুটে উঠে। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায় ১৯৭২-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন ছিল বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ করা।
বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগের ম্যানিফেস্টোতে শিক্ষানীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল-
“রাষ্ট্রের প্রত্যেকের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে। শিক্ষা ব্যবস্থা রাষ্ট্রের হাতে থাকিবে এবং প্রত্যেক নারী–পুরুষের পক্ষে শিক্ষা বাধ্যতামূলক করিতে হইবে। দেশের সর্বত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিয়া শিক্ষা সহজলভ্য করিতে হইবে। উচ্চতর শিক্ষা বিশেষ করিয়া কারিগরি শিক্ষার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র খুলিতে হইবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি বৃত্তির সাহায্যে উচ্চতর শিক্ষা উৎসাহিত করতে হবে। মাতৃভাষাকে শিক্ষার বাহন করিতে হইবে।”
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু বেতার ভাষণে শিক্ষা সম্পর্কে তাঁর দর্শন তুলে ধরে বলন, “সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাখাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হইতে পারে না।”
১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পূর্বে শাসনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত এক আলোচনায় বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্টভাবে বলেন, “আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যাতে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হন সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সব রকম চেষ্টা করা হবে। এজন্য কেবল তাদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি ও বৈষয়িক সুবিধা দিলে চলবে না, সঙ্গে সঙ্গে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিক্ষকদের ন্যয্য মর্যাদা এবং সম্মানও দিতে হবে।”
বাহাত্তরের সংবিধানে আলোকে একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে ১৮ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সমন্বয়ে ১৯৭২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, “বর্তমান শিক্ষার নানাবিধ অভাব ও ক্রুটি বিচ্যুতি দুরীকরণ, শিক্ষার মাধ্যমে সুষ্ঠু জাতি গঠনের নির্দেশনা দান এবং দেশকে আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে বলীয়ান করার পথ নির্দেশের উদ্দেশেই সরকার এ কমিশন নিয়োগ করেছেন।” কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ রিপোর্ট বাস্তবায়নের মাঝপথেই পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ায় কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়িত হয়নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন শিক্ষা কমিশন ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশমালার আলোকে জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন যাহা ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে পাস হয়। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, প্রায় এক দশক অতিক্রান্ত হলেও একটি যুগোপযোগী শিক্ষা আইনের অভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি, বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও ভরসার স্থল, আপনি দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী। আপনার নেতৃত্বে দেশ অনেক দুর এগিয়ে। বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশকে সমীহ করে। আপনি নিজেও স্বীয় দক্ষতা ও যোগ্যতাবলে খ্যাতির চূড়ায় আসীন। অথচ আপনারই আস্থাভাজন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজ অর্ধাহারে, অনাহারে কিংবা উৎসব-পার্বণে মলিন মুখে থাকবে তা নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত নয়। তাই আমরা যে মহানব্রত নিয়ে এ সেবামূলক পেশায় আত্মনিয়োগ করেছি তা যেন স্বার্থক ও সফল হয় তার কাণ্ডারী একমাত্র আপনিই হতে পারেন। আপনার একটি সাহসী সিদ্ধান্তই বদলে যেতে পারে আমাদের ভাগ্যের চাকা। শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধিত হতে পারে বৈপ্লবিক উন্নয়ন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের প্রস্তাবনার আলোকে আপনি নিজেও জাতীয়করণের প্রসঙ্গটি মহান সংসদে আলোচনা করেছেন। আপনি কিছু অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছেন। আমি আপনার সাথে একমত পোষণ করেই বলছি, আপনি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাছাই করেই জাতীয়করণের ব্যবস্থা নিন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জাতির পিতার রক্ত যাঁর শিরা-উপশিরা ও ধমনীতে প্রবাহিত, তিনি বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে একদিন না একদিন জাতীয়করণ করবেন। আশার কথা যে, আপনি ইতমধ্যেই দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কিছু প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছেন। এজন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই। লক্ষ যেহেতু শিক্ষার মানোন্নয়ন তাই বিচ্ছিন্নভাবে নয়, দেশের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর মুজিববর্ষেই জাতীয়করণ করে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষকের মনের মনিকোঠায় ঠাঁই করে নেবেন এবং বাংলাদেশের শিক্ষার ইতিহাসে মুজিববর্ষের সাথে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে রাখবেন ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা পাঁচ লক্ষাধিক এমপিওভূক্ত বেসরকারি শিক্ষক এখন জাতীয়করণ ফোবিয়ায় আক্রান্ত। একজন শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার শিক্ষকরা আপনা পানে তাকিয়ে আছে। জাতির সংকটময় মুহুর্তে আপনাকে দেখেছি কান্ডারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে। শিক্ষাবান্ধব তকমাটিও আপনাকেই মানায়। তাই আমাদের এ দুঃসময়ে আপনাকেই ত্রাণকর্তা হিসেবে কাছে পাবো এ প্রত্যাশা করছি। আপনি সবই জানেন এবং বুঝেন। তাই প্রত্যাশা করছি মুজিববর্ষই হউক বেসরকারি শিক্ষকদের মুক্তির সোপান। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা উপহার হিসেবে পেতে চাই বহুল প্রত্যাশিত জাতীয়করণের ঐতিহাসিক ঘোষণা। মুজিববর্ষ বয়ে আনুক আলোকবর্ষ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি