Loading..

খবর-দার

০২ এপ্রিল, ২০২১ ১০:০০ পূর্বাহ্ণ

আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে স্বাধীনতার প্রকৃত মর্ম বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন।

শান্তিপূর্ণভাবে ধর্ম প্রচারের জন্য স্বাধীন ভূখণ্ডের অতি প্রয়োজন রয়েছে। তাইতো স্বাধীনতাকে ইসলাম যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তেমনি দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধকেও অতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। 

মহানবীর (সা.) হৃদয়ে স্বদেশ প্রেম যেমন ছিল তেমনি তার পবিত্র সাহাবায়ে কেরামদের মাঝেও বিদ্যমান ছিল। মহানবী (সা.) জানতেন যে স্বাধীন ভূখণ্ড ছাড়া সঠিকভাবে ইসলাম প্রচার সম্ভব নয়, এজন্যই তিনি মক্কাকে করেছিলেন স্বাধীন।

জন্মভূমির প্রতি মহানবীর (সা.) ভালোবাসার কোন কমতি ছিলনা। তিনি (সা.) মক্কা থেকে মদীনার পথে হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে তিনি বার বার ফিরে তাকাচ্ছেন মক্কার দিকে, চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। 

মক্কার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন ‘হে মক্কা! তুমি আমার কাছে সমস্ত স্থান থেকে অধিক প্রিয়, আমি মক্কাকেই ভালোবাসি। আমার মন মানছে না। কিন্তু তোমার লোকেরা আমাকে এখানে থাকতে দিল না, সব কিছুর মালিক তুমি। মক্কার মানুষদের ঈমানের আলোয় উজ্জল কর। ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত কর’ (মুসনাদ আহমদ ও তিরমিজি)। 

একটু ভেবে দেখুন! স্বদেশের প্রতি কতই না গভীর প্রেম ছিল তার। যে দেশের লোকেরা তার ওপর এতো জুলুম অত্যাচার করেছে তার পরেও মাতৃভূমির প্রতি কত অগাদ ভালোবাসা। একেই না বলে স্বদেশপ্রেম। 

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌম রক্ষায় হজরত রাসুল করিম (সা.) যখনই আহ্বান করেছেন তখনই সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সর্বোতভাবে এ ডাকে সাড়া দিয়েছেন। 

তারা জানতেন, নিজেদের বিশ্বাস, আদর্শ ও দ্বীন-ধর্মমত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের প্রয়োজন। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যেমন আন্তরিক ছিলেন, তেমনি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন দেশপ্রেম ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায়। 

মাতৃভূমির প্রতি রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসার নমুনা দেখুন, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসেবে রাসুলের (সা.) সাথে গেলাম। অভিযান শেষে রাসুল (সা.) যখন ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তার চোখে পড়লে নবীজীর চেহারাতে আনন্দের আভা ফুটে উঠত আর তখন মহানবী (সা.) বললেন, এই উহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে, আমরাও একে ভালোবাসি’ (বোখারি ও মুসলিম)। 

একজন নাগরিকের দায়িত্ব হল, তার ভূখণ্ড, মাতৃভূমি এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ভালোবাসা। এটাই আমাদের প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উত্তম আদর্শ। 

আমরা দেখি, যে মক্কা নগরী থেকে আল্লাহর নবী বিতাড়িত হলেন, ১০ বছর পর শত-সহস্র সাহাবায়ে কেরামের বিশাল বহর নিয়ে যখন পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি বিজয় মিছিল-শোভাযাত্রা কিছুই করেননি। গর্ব-অহংকার করেননি, বাদ্য-বাজনা বাজাননি। 

নবীজীর অবস্থা কি ছিল? আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওযী (রহ.) তার গ্রন্থ ‘যাদুল মাআদে’ উল্লেখ করেন, আল্লাহর নবী একটি উষ্ট্রীর উপর আরোহণাবস্থায় ছিলেন, তার চেহারা ছিল নিম্নগামী। (অর্থাৎ, আল্লাহর দরবারে বিনয়ের সাথে তিনি মক্কায় প্রবেশ  করেন) সর্বপ্রথম তিনি উম্মে হানীর ঘরে প্রবেশ করেন। সেখানে আট রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। (এই নামাজকে বলা হয় বিজয়ের নামাজ।) 

এরপর নবীজী (সা.) হারাম শরিফে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন। 

তিনি বলেন, হে মক্কার কাফের সম্প্রদায়! তের বছর ধরে আমার উপর, আমার পরিবারের ওপর, আমার সাহাবাদের উপর নির্যাতনের যে স্টিম রোলার চালিয়েছ, এর বিপরীতে আজকে তোমাদের কি মনে হয়,  তোমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব? 

তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা কঠিন অপরাধী। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, আপনি আমাদের উদার ভাই, উদার সন্তান, আমাদের সাথে উদারতা,  মহানুভবতা প্রদর্শন করবেন। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। 
আল্লাহর নবী (সা.) বললেন- হ্যাঁ, আমি আজ তোমাদের সকলের জন্য হযরত ইউসুফ (আ.) এর মত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলাম। যাও তোমাদের থেকে কোন প্রতিশোধ নেওয়া হবেনা। (সুনানে বাইহাকি)

এখানেই ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, অনবদ্যতা, অনন্যতা। শান্তিপূর্ণভাবে মক্কা বিজয় করে মহানবী (সা.) পুরো বিশ্বকে এই শিক্ষাই দিলেন যে, আমরা শান্তির পক্ষে, বোমাবাজি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, খুনাখুনি, ত্রাস এবং লুন্ঠনের  বিপক্ষে। 

আর মহানবী (সা.)-এর এই মহান আদর্শের ফলেই তো পশুতুল্য মানুষকে তিনি ফেরেশতায় রুপান্তর করেছিলেন। কতই না চমৎকার তার আদর্শ, বিশ্বস্ততা, একনিষ্ঠতা, সত্য, ন্যায় এবং  ইসলামের শান্তির কথা বলে, কোটি কোটি হৃদয়কে আকর্ষিত করেছিলেন। 

সবাইকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে এনে দিয়েছিলেন প্রকৃত স্বাধীনতা। সমাজে তার (সা.) লড়াই ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াই, আর এ লড়াই তিনি করেছিলেন ভালোবাসার মাধ্যমে। কোনো ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে নয়। 

তিনি (সা.) শুধুমাত্র স্বাধীনতা বা একটি সুন্দর সমাজই প্রতিষ্ঠা করেননি বরং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা কি? ইসলাম পালন করলে কি লাভ এবং ইসলাম পৃথিবীতে কেন এসেছে এ সব কিছুই তিনি (সা.) তার কর্ম দ্বারা শিখিয়ে গিয়েছেন। 

ইসলাম প্রকৃতই যে জীবনের সকল ক্ষেত্রে শান্তির নিশ্চয়তা দেয় তা-ও তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। এই শান্তির ধর্মে কোন ধরণের বল প্রয়োগের শিক্ষা নেই। কাউকে হত্যার ব্যাপারে ইসলামের নবী বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা করা হবে তা হবে রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত’ (বোখারি)। 

তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে সবাই যেন স্বাধীনভাবে তার ধর্ম-কর্ম পালন করতে পারে সেই বিষয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করা। 

আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে স্বাধীনতার প্রকৃত মর্ম বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন।

Collected...