Loading..

খবর-দার

১৭ এপ্রিল, ২০২১ ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ

শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা


শিশুর ঘরোয়া স্বাস্থ্যকর খাবার

শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারিবারিক স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাইরের খাবারগুলো শিশুর বড় ধরনের অসুস্থতা ও মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। এ ছাড়া করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ঘরে তৈরি খাবারের অভ্যাসটি গড়ে তোলা যায়। পরবর্তী সময়ে সেই অভ্যাস ধরে রাখতে পারলে বাইরের খাবারের প্রতি তাদের অনাগ্রহ হতে পারে।
শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য শস্যজাতীয়, প্রোটিন, শাকসবজি ও ফল, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ ও পানি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি খাদ্য গ্রুপে যে পুষ্টি উপাদান থাকে তা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

                  ** শস্যজাতীয় খাবার **
শস্যজাতীয় খাবারগুলো হলো ভাত, রুটি, মুড়ি, চিড়া, খই, সুজি—যা দেশি খাবার। এসব শিশুর বৃদ্ধি বিকাশ ও প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এ ছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’ ও ‘ফাইবার’।

বার্গার বা ফাস্ট ফুডের পরিবর্তে নিজ হাতে বানানো মুড়ির মোয়া, বিভিন্ন চালের পিঠা, সুজির হালুয়া, চিড়ার পোলাও, চিড়ার বিরিয়ানি, খিচুড়ি ইত্যাদি খাবার বেশ সুস্বাদু ও বেশি পুষ্টিকর।

               *** প্রোটিন ও ফ্যাট ***

শিশুর বিকাশ, দেহের অ্যান্টিবডি তৈরি এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রোটিন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের খাবার হলো মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি, ছোলা ইত্যাদি। এসব খাবারে পর্যাপ্ত আয়রন, জিংক, ভিটামিন বি১২, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চর্বি ও ক্রিমযুক্ত সস দিয়ে তৈরি খাবারের পরিবর্তে দই ও বাদাম দিয়ে আরো মুখরোচক করে পরিবেশন করুন। এ ছাড়া মাছের বড়া, মাছের কাটলেট, মাংসের চাপ, ডিমের বড়া, ডালের বড়া, বুটের হালুয়া, বাদামের গুঁড়া দিয়ে সুজি, সেমাই রান্না করে খাবারটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারেন।

             *** ফল ও শাক-সবজি ***

আজকাল শিশুরা ফল ও শাক-সবজি খেতে চায় না। তারা জাংক ফুড ও প্যাকেটজাত খাবারে বেশি আকৃষ্ট হয়। তাই ভিটামিন, মিনারেলস ও ফাইবারের ঘাটতি দেখা দেয়। অল্প বয়সে ওজনাধিক্য, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি রোগে ভোগে তারা। পারিবারিক পুষ্টিশিক্ষার অভাব ও নানা ধরনের অপপ্রচারই আসলে এসবের জন্য দায়ী। অনেক সময় অভিভাবকরা শিশুকে খুশি করার জন্য চিপস হাতে ধরিয়ে দেন। অথচ এসব খাবার অস্বাস্থ্যকর। অন্যদিকে টেলিভিশনে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন দেখে এসব খাবার খেতে চাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই টেলিভিশনে এসব বিজ্ঞাপনের সামনে শিশুকে বেশিক্ষণ রাখবেন না।

জাংক ফুড ও প্যাকেটজাত খাবারের পরিবর্তে ঘরে বানানো সবজির বড়া, সবজির স্যুপ, সবজির রোল, ফলের স্মুদি, ফলের ডেজার্ট ইত্যাদি দিয়ে বানানো খাবার পরিবেশন করুন। শিশুরা যেন আকৃষ্ট, সেভাবে তার রুচি অনুযায়ী পরিবেশন করুন।

           ***  ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়াম ***

শিশুরা সেলফোন, টেলিভিশন ও গেম খেলতে বেশি সময় ব্যয় করে ঘরে। ফলে তারা বাইরে সূর্যালোকের সংস্পর্শে যায় না। এ জন্য দেখা দেয় ভিটামিন ‘ডি’ ঘাটতিজনিত সমস্যা। অথচ স্বাস্থ্যকর হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ দরকার শিশুদের। এ জন্য খেতে হবে দুধ, দই, ঘি, মাখন, চিজ, তিল ইত্যাদি।

শিশুকে দুধ দিয়ে সুজি, সেমাই, পায়েশ, স্মুদি, ডেজার্ট, ঘি দিয়ে গরম ভাত খাওয়ান। যারা দুধ, দই, ঘি খেতে চায় না, সেসব শিশুকে ছানা, পুডিং, তিলের নাড়ু বানিয়ে দিতে পারেন। তবে যেসব শিশুর পেটের সমস্যা সিলিয়াক ডিজিজ আছে বা দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

               *** স্বাস্থ্যকর পানীয় ***

বয়স অনুযায়ী পানির চাহিদা রয়েছে শিশুদের। তারা চটজলদি হাতের কাছে যা পায় তা-ই খেয়ে পানির চাহিদা মেটায়। বাইরে ড্রিংকস বা কোমল পানীয়ের মতো বিভিন্ন মিষ্টান্ন পানীয় পান করে ফেলে। এসব বেশির ভাগ পানীয়তে রয়েছে ফসফরিক এসিড, যা শিশুর কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ছাড়া এগুলো শিশুর দাঁতেরও ক্ষতি করে। এর পরিবর্তে ঘরে তৈরি ফলের জুস, লেবু পানীয়, বিশুদ্ধ পানীয় খেতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

            ***** খাবারে আনুন বৈচিত্র্য ****

জন্মদিনের মতো অনুষ্ঠানে বাইরে খাবার অর্ডার না দিয়ে ঘরে বানানো খাবার দিয়ে পরিবেশ আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। যেমন—হার্ট আকৃতির স্যান্ডউইচ, কেক কাটা, জ্যামিতিক আকারে ফল সাজানো ইত্যাদি।

এ ছাড়া তারা ক্রাঞ্চি রঙের টেক্সচার পছন্দ করে। তাই তাদের খাবারে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটগুলোতে বাদাম ও বীজ ব্যবহার করুন। টমেটো, শসা, গাজর, লেটুস দিয়ে খাবারগুলো রঙিন ও বিভিন্ন ফল, শাক-সবজি ও বাদাম দিয়ে আরো আকর্ষণীয় করে তুলুন।

            **** যেসব খাবার নয় ****

প্যাকেটজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড বর্জন করুন। এসব খাবারে লবণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, চিনি বেশি থাকে এবং ফাইবার ও পুষ্টির পরিমাণ কম থাকে। এতে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে হ্রাস, শিশুর স্থ্থূলতা ও টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

এ ছাড়া অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় ও খাবার বর্জন করুন।

               **** কিছু করণীয় *****

♦ শিশুকে একই সময়ে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে ক্ষুধার্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে এবং শিশুকে খাবার খেতে উৎসাহিত করবে।

♦ ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর নামতা তৈরি করে দিন।

♦ বিভিন্ন রঙের খাবার পরিবেশন করুন, যাতে খেতে আগ্রহী হয়।

♦ খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের সময় শিশুকে সরাসরি দেখান। এতে তার খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

♦ পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করুন। সপ্তাহে এক দিন হলেও এটি করুন। এতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়।

♦ খাওয়ার সময় মোবাইল ও টিভি দেখা বন্ধ করুন।

♦ খাওয়ার সময় প্রতিটি খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন।

♦ সময় নিয়ে, আনন্দময় করে খাওয়ান।

♦ সব ধরনের খাবার খেতে ভালোবাসতে শেখান। এতে বিভিন্ন খাবারের স্বাদ ও গন্ধের পরিচয় পাবে।

♦ প্রতিটি খাবারে লবণ ও চিনির পরিমাণ কম রাখুন।