Loading..

খবর-দার

১৯ এপ্রিল, ২০২১ ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ

তুখোড় গণিত শিক্ষক আব্দুল গাফ্ফারের দিন কাটে পথে পথে

অভিজাত পরিবারে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম তার। ছাত্র হিসেবে ছিলেন তুখোড় মেধাবী। কর্মজীবনে পেয়েছিলেনঅঙ্কের জাদুকরখেতাব। কঠিন জটিল অঙ্কের সমাধান করতেন খুবই সহজে। সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ঢাকায় শিক্ষকতাও করেছেন। একই সঙ্গে গণিত পদার্থ বিজ্ঞানের পণ্ডিত হিসেবে নিজ এলাকায় ছিলেন অধিক পরিচিত

বীজগণিতের উৎপাদক বিশ্লেষণের ফর্মুলা আবিষ্কার করে হৈ চৈ ফেলে দেয়া সেই আব্দুল গাফ্ফারের দিন কাটে এখন পথে পথে। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। গায়ে ময়লা কাপড়, মাথা ভর্তি এলোমেলো চুল। আপন মনে হেঁটে চলেন পথে পথে

একজন মেধাবী শিক্ষকের এমন করুণ পরিণতি দেখে পরিচিত জনরা হতবাক হলেও তার চিকিৎসার দায়িত্ব কেউ নেন না। অথচ তার শিক্ষা কত মেধাবীর সাফল্যের ভীত গড়ে দিয়েছে। আব্দুল গাফফারের অনেক ছাত্র আজ প্রশাসনের উচ্চপদে কর্মরত। ময়লা-ছেড়া জামাকাপড় গায়ে দিয়ে আব্দুল গাফ্ফার বছরের পর বছর ঘুরছেন পথে পথে। মসজিদ, স্কুল ব্যবসা প্রতষ্ঠানের বারান্দাই এখন তার ঠাইখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেধাবী শিক্ষক আব্দুল গাফ্ফার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খামারাইল গ্রামের কাজী আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। এলাকায় তাদের পরিবার অভিজাত সম্ভ্রান্ত হিসেবে পরিচিত। আব্দুল গাফ্ফারের মেজ ভাই কাজী আব্দুল গনি নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব হিসেবে অবসর নিয়েছেন। ছোট ভাই কাজী আব্দুল কাদের ঢাকায় আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। 

গ্রামবাসী জানায়, মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারান আব্দুল গাফ্ফার। এরপর তিন ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েন তার মা কাজী বদরুন্নেছা। সন্তানদের নিয়ে চলে যান মহেশপুর পৌর এলাকার জলিলপুর মোল্লা পাড়ায় নিজের বাবার বাড়িতে। বদরুন্নেছার দ্বিতীয় বিয়ে হয় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি তৃতীয় বিয়ে হয় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ছাউলিয়া গ্রামে

এদিকে, নানা নুরুদ্দীন আহম্মেদের বাড়িতে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন আব্দুল গাফ্ফার। বেড়ে ওঠেন তুখোড় মেধাবী ছাত্র হিসেবে। এলাকায় তার মেধার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএসসি এমএসসি পাস করে ঢাকার মানিকনগর পরে মতিঝিল মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন

গাফফার বিয়ে করেন নড়াইলে। তার স্ত্রীও ছিলেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাদের সংসার টেকেনি। ৩০ বছর ঢাকায় বসবাসের পর মহেশপুর ফিরে আসেন গাফফার

আব্দুল গাফ্ফারের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ছিরবা আক্তার ঝর্ণা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার শাশুড়ি বদরুন্নেছা বেঁচে থাকতে মাঝে মধ্যে আমার ভাসুর আব্দুল গাফ্ফার বাড়িতে আসতেন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ মার্চ আমার শাশুড়ি মারা যান। এরপর আর কখনো আসেননি তিনি। আমার ছেলেও তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি

অনেকে তার এই পরণতির নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করছেন। তবে আব্দুল গাফ্ফার কিছু কথা সাংবাদিকদের সঙ্গে বলেছেন। তিনি জমিজমা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন। তিনি বলছেন, তার ভাইয়েরা জমি লিখে নিতে চায়। 

খালিশপুরের গোয়ালহুদা গ্রামের সিমেন্ট ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, গত ১০ বছর আব্দুল গাফ্ফার স্যার তার বাড়িতে থাকেন। তিনি দিনে একবার খান। প্রায় সময় রোজা থাকেন। নিয়মিত ছাত্র পড়ান, কিন্তু কোন টাকা পয়সা নেন না। তবে কম কথা বলেন। অসুস্থ হলে প্রিয় ছাত্ররা তাকে দেখাশোনা করেন। ওষুধ কিনে দেন। 

বর্তমান শামিম রেজা নামে এক ছাত্র আব্দুল গাফ্ফারের দেখভাল করছেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা শহরে আব্দুল গাফ্ফারের মূল্যবান জমি রয়েছে। এই জমি নিতে চান ভাইয়েরা

এদিকে মাতৃকুল পিতৃকুল মিলে অনেক জমি পেয়েছেন তিনি। স্ত্রী সন্তান না থাকায় সব জমি ভাইয়েরা রেজিষ্ট্রি করে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। চিন্তায় তিনি ব্যাকুল। তবে এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে তিনি পাগল বা মস্তিস্ক বিকৃত নন। আগে তিনি গোসল করে পরিপাটি পোশাকে চলাফেরা করতেন। গত এক বছর আব্দুল গাফ্ফার গোসল করেন না। গাফ্ফারের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী (মায়ের তৃতীয় পক্ষ) ছিবরা আক্তার ঝর্ণা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, তার ভাসুর ইচ্ছা করেই এমন করে থাকেন। কারণ জমিজমা নিয়ে তিনি বেশি চিন্তা করেন। 

এছাড়া তার শাশুড়ি বদরুন্নেছার জমিও প্রথম পক্ষের ভাই লিখে নিয়েছেন। ফলে, শাশুড়ির আরও দুই পক্ষের জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে ছিবরা আক্তার ঝর্ণা দাবি করেন। তবে সব বিষয়ে আব্দুল গাফ্ফারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন মৃত্যু পথযাত্রী। আমার সময় খুবই কম