Loading..

খবর-দার

২২ এপ্রিল, ২০২১ ০৩:২৪ অপরাহ্ণ

দশম শ্রেনীর_ শারীরিক শিক্ষা মোঃমেহেদুল ইসলাম, মাহমুদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ,ক্ষেতলাল,জয়পুরহাট,০১৭২৫৯৯৮৪৭৭

ডেস্ক রিপোর্টবাংলাদেশের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খেলার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়  সমাদৃত খেলা হচ্ছে হাডুডু বা কাবাডি। বাংলাদেশের অধিকাংশ জায়গায় এই খেলা হাডুডু নামেই পরিচিত। এই খেলা বাঙালির লোকজীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী। ব্যাপক জনপ্রিয়তা  লোকায়ত ঐতিহ্যের জন্যে এই খেলা বাংলাদেশের জাতীয় খেলার মার্যাদা পেয়েছে।

কাবাডি এশিয়া মহাদেশের গ্রীষ্মকালীন দেশ সমূহের একটি জনপ্রিয় খেলা। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি প্রাচীন খেলা। এই উপমহাদেশে অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন নামে  খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। যেহেতু আঞ্চলিক খেলাতাই কোনো বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন ছিল না।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলার পোশাকি নাম কাবাডি। কিছু দিন আগে পর্যন্ত হাডুডু খেলা ছিল বিনোদনের অন্যতম উৎস। হাডুডু প্রতিযোগিতার বিজয়ীদলকে পুরস্কারস্বরূপ ষাঁড়খাসিপিতলের কলসি কিংবা সোনারূপার মেডেল উপহার দেওয়া হতো। এটি একটি দলীয় খেলা এবং  খেলায় খরচ বলতে কিছুই নেই।

ধারণা করা হয় যে প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মানুষ একক ভাবে বা দলীয় ভাবে শিকার করতে এবং বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শিখেছিলতখন কাবাডির সূচনা। পুরো দক্ষিণ এশিয়াতে কাবাডি প্রচলিত থাকলেও এর উৎপত্তি স্থল পাঞ্জাব। কাবাডির উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি মত হচ্ছেমহাভারতে বর্ণিত অভিমন্যু কর্ত্তৃক কৌরব সৈন্যদের চক্রব্যুহ ভেদ করার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনা থেকে ধারণা নিয়ে  খেলার সৃষ্টি হয়।

কাবাডি খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে প্রচলিত আরেকটি ধারণা হচ্ছে এটি আরম্ভ হয় তামিলনাড়তে। দুটি বাচ্চা ছেলের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা থেকে এর ধারণা পাওয়া যায়যদিও দম ধরে রাখার বিষয়টি তাতে পরে যুক্ত হয়। তামিল এলাকায়  খেলাটি কাবাডিসাডুগুডিগুডুগুডুপালিঞ্জাডুগুডু  সাডুগুডাত্থি নামে পরিচিত। কাবাডি শব্দটি খুব সম্ভবত উৎপত্তি হয়েছে তামিল কাই (হাত পিডি (ধরাশব্দ থেকে।

 খেলা ভারত  পাকিস্তান কাবাডিবাংলাদেশে হাডুডুনেপালে ডুডুশ্রীলংকায়গুডুগুডুথাইলান্ডে থিকাব  মালয়েশিয়ায় ছি গুডু গুডু নামে প্রচলিত ছিল। ব্যক্তি  দলগত ভাবে শত্রপক্ষের আক্রমণ প্রতিহতকরণ এবং তড়িৎ পাল্টা আক্রমণের কৌশল চর্চা করতে গিয়েই  খেলার উদ্ভব।  খেলায় সফলতার পূর্বশর্ত হচ্ছে শারীরিক  মানসিক ক্ষিপ্রতাপেশীর ক্ষিপ্রতাফুসফুসের শক্তি  সহনশীলতাদ্রুত চিন্তা  সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা  তা প্রয়োগের সামর্থ্য এবং সর্বোপরি প্রতিপক্ষের কৌশল  মনোভাব অনুধাবনের যোগ্যতা।

একটি ঐক্যবদ্ধ নিয়মে খেলাটি প্রচলনের জন্য ১৯৫০ সালে ভারতে জাতীয় কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়।

১৯৫৩ সালে এই ফেডারেশন কাবাডি খেলার নিয়মকানুন প্রণয়ন করে। কয়েক বছর বিচার বিশ্লেষণ করে ১৯৬০ সালে কিছু নিয়মকানুন সংশোধন  সংযোজন হয়। ১৯৭৪ সালে ভারত  বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম কাবাডি টেস্ট বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় কাবাডি দল ৫টি টেস্টে অংশগ্রহণ করে   জয়লাভ করে।  প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহের সৃষ্টি করে। ফিরতি টেস্ট খেলার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় কাবাডি দল ১৯৭৯ সালে ভারতে যায়।

১৯৮৭ ভারতের ইস্পাতনগরী নামে খ্যাত মধ্য প্রদেশের ভিলাই স্টিল মিলের গেস্ট হাউজে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারত বাংলাদেশ  নেপালের প্রতিনিধিবৃন্দ যোগদান করেন। উক্ত বৈঠকে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। এরই সূত্র ধরে ১৯৮০ সালে প্রথম এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়।  প্রতিযোগিতায় ভারতবাংলাদেশ  নেপাল অংশগ্রহণ করে। ভারত চ্যাম্পিয়ন  বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়।

স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের খেলাধুলার গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ফেডারেশন পুনর্গঠন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে পশ্চিম বাংলার আসানসোলে ভারতের জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রতিযোগিতা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ থেকে কাজী আনিছুর রহমান  আমীর হামজা আসানসোলে যান। তখন থেকে ভারতীয় কাবাডি খেলার নিয়মকানুন অনুসরণ করা হয়।

১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৮০ সালে ভারতের এনআইএস থেকে কাবাডি খেলার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে আবদুল হক বাংলাদেশে কাবাডি খেলার কলাকৌশল  নিয়মকানুন প্রবর্তন করেন।

বাংলাদেশের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে কাবাডি খেলা নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন থেকে কাবাডি খেলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখে। ১৯৯০ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে এই খেলাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। এরপর থেকে কাবাডি খেলা নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে এশিয়ান গেমসে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

বর্তমানে কাবাডি খেলা কয়েকটি দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ভারতবাংলাদেশপাকিস্তানশ্রীলংকানেপালভুটানজাপানথাইল্যান্ডইরানমালয়েশিয়া  কোরিয়া অন্যতম।মোঃমেহেদুল ইসলাম

শারীরিক শিক্ষক

মাহমুদপুর উচ্চ বিদ্যালয়

ক্ষেতলাল ,জয়পুরহাট

[email protected]

01855931759