Loading..

প্রকাশনা

২২ এপ্রিল, ২০২১ ০৪:৪১ অপরাহ্ণ

নিমাই চন্দ্র মন্ডল, সহকারী শিক্ষক, পলাশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনিরামপুর, যশোর।

                                       বিদ্যাসাগর

পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে ভগবতীর কোলে আসে এক শিশু সন্তান ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৮২০ সালে নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়। জন্মেছিলেন প্রাচীন রক্ষণশীল দরিদ্র ব্রাক্ষণ পরিবারে। গ্রামীণ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, নিরক্ষরতার নিমজ্জিত এক সমাজে তিনি লালিত-পালিত।                ১৮৩৯ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজ থেকে বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেণ । ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজ পাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিধবা বিবাহ প্রচলন বহুবিবাহ ও বাল্য বিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তাঁর অক্লান্ত সংগ্রাম আজও স্মরানয়। তিনি দয়ার সাগর বলে পরিচিতি। ২২শে জানুযারী ১৫০ টাকা বেতনে কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।

তাঁর জীবদ্দশায় প্রচলিত অর্থে ধর্ম বিষয়ে কোন আগ্রহ দেখাননি। একাত্তর বছরের যাপিত জীবনে ধর্ম, ঈশ্বর নিয়ে কোন অলৌকিক ধ্যান-ধারণাকে প্রশ্রয় দিতে তাঁকে দেখা যায়নি। বিহারীলাল সরকার উল্লেখ করেছেন, গলায় উপবীত থাকলেও ব্রাক্ষণের জন্য সমাজমান্য ক্রিয়াকলাপ তিনি মানতেন না, সন্ধ্যা আহ্নিক করতেন না, গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতেন না। প্রতিমাপুজোকে দেখতেন লৌকিক দৃষ্ঠিতে। এখানে লক্ষণীয়, তিনি কোন প্রথাগত ধর্মবোধে আস্থা না রেখে কর্তব্য, ন্যায়- বোধ ইত্যাদির সঙ্গে অলৌকিক বিষয়ে বিশ্বাস এবং উপাসনা- প্রণালীকেও ধর্মের মর্যদা দিয়েছেন। গোটা জীবন দিয়ে তিনি প্রমান করেছেন, আসলে তিনি ঈশ্বর ও ধর্ম বিষয়ে একান্তভাবেই নিস্পৃহ, বরং অখন্ড মানবতার ধর্মেরই পূজারী। বিদ্যাসাগর উপনয়নের পর অভ্যাস করিয়াও গায়ত্রী মন্ত্র পর্যন্ত ভুলিয়া গিয়াছিলেন। জগতের মধ্যে কেবল হিন্দুগণ দেবদেবী প্রতিমার প্রতি যেরুপ হ্নদয়ের সহিত ভক্তি প্রকাশ করেন, তিনি জনক-জননীকে বাল্যকাল হইতে তদ্যুপ আন্তরিক শ্রদ্ধা ও দেবতাস্বরুপ জ্ঞান করিতেন। ধর্ম সম্পর্কে তাঁর যেমন অবজ্ঞা ছিল না, তেমনি কোন ধর্মকে কখনো আঘাত করেননি, বর্জন করার পরামর্শ দেননি।                

বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। নারী শিক্ষার বিস্তারের পথিকৃৎ। তিনি উপলব্ধি করেন যে, নারীজাতী উন্নতি না ঘটলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃতি উন্নতি সম্ভাব নয় । কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মায়ের স্মৃতি উদ্দেশ্যে নিজ গ্রামে বীরসিংহে ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বাষট্টি বছর বয়সে পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত ঘটেছিল। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে বলেছিলেন; ‘তুমি যেসব কর্ম করছ, এসব সৎকর্ম। যদি ‘আমি কর্তা’ এই অহঙ্কার ত্যাগ করে নিস্কামভাবে করতে পার, তাহলে খুব ভাল । নিস্কাম কর্ম করতে করতে ঈশ্বরেতে ভক্তি ভালবাসা আসে। এইরুপ নিস্কাম কর্ম করতে করতে ঈশ্বারলাভ হয়। ঈশ্বারচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৯১ সালের ২৯শে জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                               

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি