Loading..

ম্যাগাজিন

২৮ এপ্রিল, ২০২১ ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় আইঙ্গত সহায়তা দিবস কি?

জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস

২৮ এপ্রিল ২০২1

আজ ২৮ এপ্রিল ২০২1, জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য আইনের সমান আশ্রয় লাভের কথা বারবার বলা হলেও ২০০০ সালের পূর্বে কোনো সরকারই এ লক্ষ্যে কোনো আইন প্রণয়ন করেনি। ফলে অসহায়, দরিদ্র, অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আইনি সাহায্য লাভের সহজগম্যতার পথটি ছিল অবরুদ্ধ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০০ সালে প্রথম বারের মত অসহায়, অসচ্ছল, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আইনি সেবা গ্রহণের পথ সুগম করার লক্ষ্যে প্রণয়ন করে “আইনগত সহায়তা প্রদান আইন- ২০০০”। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল দিনটিকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। অসহায়, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন করাই এ দিবসের মূল লক্ষ্য।

আইনের চোখে সবাই সমান। সংবিধানের এই ব্রতকে সামনে রেখে সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরীহ, অবহেলিত, অসহায় মানুষের দিকে হাত বাড়িয়ে তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রুপান্তর করার জন্য অঙ্গীকারবন্ধ। যেখানে ধনী, গরীব নির্বিশেষে সকল মানুষ সমানভাবে হবে আইনের শাসন লাভের অধিকারী। তাই জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আনিসুল হক, এমপি জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার জাতীয় পরিচালনা বোর্ডের মাননীয় চেয়ারম্যান। মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্বে, তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয়, সকল পর্যায়ে সরকারি আইনগত সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। অসহায় কারাবন্দীদের আইনগত সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে এই সংস্থা। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে বিস্তৃত সরকারি আইনি সেবা। সরকারি এই সেবা থেকে বাদ পড়েনি অসহায় শ্রমিকরাও। শুধু তাই নয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশীদার হিসেবে আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা বাস্তবায়ন করছে অনবদ্য ডিজিটাল সেবা।

নিম্নে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ (ফেব্রুয়ারি) সাল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্জন সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করা হলোঃ

গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসমূহঃ

v জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ (ফেব্রুয়ারি) সাল পর্যন্ত সরকারি খরচে সারাদেশে ৫,০৭,০৪০ (পাঁচ লক্ষ সাত হাজার চল্লিশ জন) জন দরিদ্র অসহায় মানুষকে আইনগত সহায়তা প্রদান করেছে।

v এ পর্যন্ত সর্বমোট ১,২৬,৪৯২ টি লিগ্যাল এইড মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

v দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে ২০,০৯২ জন দরিদ্র অসহায় বিচারপ্রার্থী সুপ্রীম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা প্রাপ্ত হয়েছে।

v আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার জটিলতায় অনেক কারাবন্দি কারাগারে অসহায় জীবনযাপন করছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ২০১২ সাল থেকে ২০২০ (ফেব্রুয়ারি) সাল পর্যন্ত কারাগারে আটকে থাকা ৭৭,০৬৫ জন অসহায় কারাবন্দিকে সরকারি আইনগত সহায়তা প্রদান করে বিচার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে।

v জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা জুলাই, ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ (ফেব্রুয়ারি) সাল পর্যন্ত পর্যন্ত ৬৪ টি লিগ্যাল এইড অফিস এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলার শ্রমিক আইন সহায়তা সেল এর মাধ্যমে ৩৩,০৮৬ টি বিরোধ/মোকদ্দমার মধ্য থেকে ২৭,৭২৮ টি বিরোধ/মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে মোট ৩৫,৩৬,১৩,৪২২/- (পঁয়ত্রিশ কোটি ছত্রিশ লক্ষ তেরো হাজার চারশত বাইশ) টাকা আদায় করে দিয়ে আদালতের মামলাজট হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। আর এ সেবার মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৪০,৭৬৫ জন। সাধারণ মানুষ লিগ্যাল এইড অফিসের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সেবা গ্রহণ করে তাদের সাথে পক্ষদের চলমান ৭৪৮ টি মামলা আদালত থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

v বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেশের জনগনকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ বিনাখরচে আইনি পরামর্শ প্রদান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সরকারি আইনগত সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০ কলসেন্টার উদ্বোধন করেন। টোল ফ্রি ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে সহজেই দেশের যে কোন প্রান্ত হতে যে কেউ লিগ্যাল এইড সম্পর্কিত তথ্যসহ আইনি পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে। এই হেল্পলাইনের মাধ্যমে ২৮ এপ্রিল ২০১৬ খ্রি: হতে ফেব্রুয়ারি/২০২০ খ্রি: সময়ে মোট ৮৩,৯১৮ জন আইনি পরামর্শ গ্রহণ করেছে।

v বিগত ২০১৩ সালে দুর্ভাগ্যজনক রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইউএনডিপির সহায়তায় শ্রমিক আইন সহায়তা সেল গঠন করে অসহায় শ্রমিকদের বিনামূল্যে সরকারি আইনি সহায়তা প্রদান করছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছর হতে ২০১৯-২০২০ (ফেব্রুয়ারি) অর্থ বছর পর্যন্ত ১৮,২০৭ জন অসহায় শ্রমিককে আইনি সহায়তা প্রদান করে চাকরি পুনর্বহালসহ মোট ৩,৩২,৩৮,৪১০/-টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে।

v সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে আরো কার্যকর, গতিশীল ও সেবাবান্ধব করার লক্ষ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা লিগ্যাল এইড অফিসের জনবল বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বমোট নতুন ১০৪ টি পদ সৃজন করা হয়েছে, বর্তমানে পদসমূহের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

v “ডিজিটাল লিগ্যাল এইড ” নিশ্চিত করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আনিসুল হক, এম.পি মহোদয় ২০১৮ সালের ০৩ অক্টোবর “ডিজিটাল লিগ্যাল এইড অফিস ম্যানেজম্যান্ট” ডাটাবেজ সফটওয়্যার এবং “বিডি লিগ্যাল এইড এ্যাপস ” উদ্বোধন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ১ লা নভেম্বর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ তারিখ থেকে এর ৬৭ টি কার্যালয়ে একযোগে চালু করেছে ডিজিটাল লিগ্যাল অফিস ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম। সকল লিগ্যাল এইড অফিসের :

আইনি পরামর্শ কার্যক্রম;

আপোস মিমাংসা কার্যক্রম;

মামলায় আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম;

আইন সচেতনতামূলক কার্যক্রম;

প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ ও অর্থ ব্যয়

সর্বোপরি লিগ্যাল এইড অফিসের সমস্ত কার্যক্রম অনলাইন সিস্টেমে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয় তার অধীনস্থ সকল দপ্তরের সার্বিক কার্যক্রম দেখতে পারছে, গুণগত মান বজায় রাখতে পারছে, কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারছে ।

v BD Legal Aid এ্যাপসটি আইনগত সহায়তা কার্যক্রমের প্রচার ও প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। Google Play Store থেকে যে কেউ এই এ্যাপসটি ডাউনলোড করতে পারবে।

v ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে আইন ও বিচার বিভাগ লিগ্যাল এইড অফিসারের কর্মকে বিচারিক কর্ম হিসেবে ঘোষণাক্রমে প্রজ্ঞাপন জারী করে ।

সাম্প্রতিক কার্যক্রম :

করোনাভাইরাসের এই সংকটকালীন সময়ে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের একান্ত উদ্যোগে ও নির্দেশনায় সাধারণ অসহায় মানুষদের আইনগত পরামর্শের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা করার জন্য ১২ ই এপ্রিল ২০২০ থেকে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার জাতীয় হেল্পলাইন ১৬৪৩০ টোলফ্রি নম্বরটি ৮ ঘন্টার পরিবর্তে ২৪ ঘন্টার জন্য চালু করেছে। করোনাভাইরাসের এই লকডাউন সময়ে ১২ এপ্রিল থেকে ২৭ শে এপ্রিল পর্যন্ত ১৬৪০ জন মানুষ বিনামূল্যে আইনগত পরামর্শ সেবা গ্রহণ করেছে।

এই ক্রান্তিকালীন সময়ে অসহায় শ্রমিকরা ফোন করে তাদের আইনগত সমস্যা জানাচ্ছে এবং শ্রম আইন অনুসারে তাদের আইনগত অধিকার কি সে বিষয়ে জানতে পারছে। পারিবারিক সহিংসতা বা যেকোন আইনি বিষয়ে মানুষ আমাদের সরণাপন্ন হচ্ছে। সারাদেশের লিগ্যাল এইড অফিসারদের এই সেবার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে, জরুরী আইনি সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী লিগ্যাল এইড অফিসারদের কাছে কল ট্রান্সফার করা হচ্ছে।

আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগোষ্ঠীর আইনি অধিকার নিশ্চিতকল্পে তাদেরকে আইনগত সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে এভাবেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা।

তথ্যসুত্র- জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস এর ফেসবুক গ্রুপ থেকে

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি