প্রধান শিক্ষক
৩০ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:১২ পূর্বাহ্ণ
**সুরা ইয়াসিনের ফজিলত জেনে নিই**…, মোছাঃ মারুফা বেগম, প্রধান শিক্ষক, ডিমলা, নীলফামারী।
**সুরা ইয়াসিনের ফজিলত জেনে নিই**…
পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা ইয়াসিন
বিশেষ তাৎপর্য ও গুরুত্ব বহন করে। সুরা ইয়াসিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)- এর নবুয়ত
লাভের প্রথম দিকে এবং হিজরতের বহু আগে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৮৩, রুকু পাঁচটি। বিশ্বজাহান সৃষ্টির প্রায় দুই হাজার
বছর পূর্বে মহান রাব্বুল আলামিন এ সূরা তেলাওয়াত করে ফেরেশতাদের শুনিয়েছিলেন। সূরা
ইয়াসিনের বৈশিষ্ট্য, সৌরভ, তাৎপর্য ও
ফজিলতের কথা শুনে তারা বিস্মিত হয়ে মাওলার কুদরতি পায়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়েছিলেন।
সুরা ইয়াসিন শুনেই পবিত্র কোরআনের বিশালত্ব সম্পর্কে তাদের মধ্যে সম্যক ধারণা
বদ্ধমূল হয়েছিল।
**সূরা ইয়াসিনকে কোরআনের রূহ বা প্রাণ হিসেবে অভিহিত
করা হয়েছে। ফজিলতের দিক থেকে এ সূরা যেমন অদ্বিতীয় তেমনি মানুষের জীবনসংশ্লিষ্ট
বিষয় আলোচনায় এ সূরা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ইমাম গাজালি রহ. বলেন, সুরা ইয়াসিনকে কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলার কারণ হচ্ছে, এ
সূরায় কিয়ামত ও হাশর-নাশরের বিশদ ব্যাখ্যা অলঙ্কার সহকারে বর্ণিত হয়েছে। পরকালের
বিশ্বাস ইমানের এমন একটি মূলনীতি, যার ওপর মানুষের সব আমল ও
আচরণের বিশুদ্ধতা নির্ভরশীল। সূরা ইয়াসিনের ফজিলত, গুরুত্ব ও
মাহাত্ম্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। অসংখ্য হাদিস এ রাসুলে পাক (সঃ) এই সুরার
মহাত্ম্য সম্পর্কে আমাদেরকে জানিয়েছেন। নিন্মে তার মধ্যথেকে কিছু ফজিলত উল্লেখ করা
হলোঃ
***সুরা ইয়াসিন কোরানের হৃদয়ঃ
তাফসিরে জালালাইনশরীফের হাশিয়া ৩৬৮ পৃষ্ঠার
মধ্যে বায়জাভী শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
একখানা হাদীসশরীফ নকল করা হয়েছে- ‘রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ
করেছেন, নিশ্চয় প্রত্যেক বস্তুর ‘কলব’
রয়েছে এবং কোরআনশরীফের কলব হচ্ছে ‘সূরায়ে ইয়াসিনশরীফ’। হজরত আনাস (রা.) থেকে
বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুর একটি হৃদয় আছে। আল-কোরআনের হৃদয় হলো সূরা ইয়াসিন। যে
ব্যক্তি একবার সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তায়ালা ১০
বার কোরআন খতমের সওয়াব দেবেন।’ (তিরমিজি : ২৮৯১)।
***সুরা ইয়াসিন গুনাহ মাফের মাধ্যমঃ
মানুষ মাত্রই দৈনন্দিন কাজকর্মে ভুল-ত্রুটি করে
থাকে। ভুল-ত্রুটি করা হলো গোনাহের কাজ। গোনাহের কাজ মানুষকে জাহান্নামের দিকে
ধাবিত করে। জাহান্নাম থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো নেক আমল বা তওবা করা। যে
ব্যক্তি নিয়মিত সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে,
আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়ে তার অতীত জীবনের সব গোনাহ মাফ করে
দেবেন। হজরত মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল
(সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে
সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গোনাহ
ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৩১২১, বায়হাকি : ২১৭৮)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন,
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রাতে সূরা ইয়াসিন
তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তার ওই রাতের সব গোনাহ মাফ করে
দেবেন।’ (সুনানে দারেমি : ৩৪৬০)।
***সুরা ইয়াসিন হাজত (প্রয়োজন) পূরণের মাধ্যমঃ
মানুষ মাত্রই অবস্থান অনুযায়ী নানা ধরনের
অভাব-অনটনে বা হাজত থাকে। শুধু পরিশ্রম করে কিংবা অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে
অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। পরিশ্রমকারী বা অর্থ উপার্জনকারীর ওপর
আল্লাহর বিশেষ রহমত থাকতে হয়। সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত-বরকত
আসে। সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করলে মনের হাজত বা মনের আশা পূর্ণ হয়। হজরত আতা বিন আবি
রাবাহ (রা.) বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি শুনেছি যে, রাসুল (সা.)
বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে,
তার সব হাজত পূর্ণ করা হবে।’ (সুনানে দারেমি : ৩৪৬১)। হজরত আবদুল্লাহ
ইবনে জুবায়ের রা: বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন
অভাব-অনটনের সময় পাঠ করে তাহলে তার অভাব দূর হয়, সংসারে
শান্তি ও রিজিকে বরকত লাভ হয়। (মাজহারি) ইয়াহইয়া ইবনে কাসীর বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে
থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে (মাজহারি)।
***সুরা ইয়াসিন মৃত্যু-কষ্ট লাঘবের মাধ্যমঃ
যদি কোন মুসলমানের সকরাতুল মউতের সময় তার নিকট
সূরায়ে ইয়াসিনশরীফ পাঠ করা হয়, বেহেশত হতে রেদওয়ান ফেরেশতা, বেহেশতের সুসংবাদ না
দেওয়া পর্যন্ত মালাকুল মউত তার রূহ কবজ করবেন না। রূহ কবজের সঙ্গে সঙ্গে সে
ব্যক্তি ‘রাইয়ান’ নামক বেহেশতে থাকবে। (হাশিয়ায়ে জালালাইনশরীফ- ৩৬০ পৃ.) হজরত আবু
যর (রা:) বলেন, আমি রাসূল সা:-এর কাছ থেকে শুনেছি তিনি
বলেছেন, মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসিন পাঠ করলে
তার মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ হয়ে যায়। (মাজহারি) হযরত মা’কিল ইবনে ইয়াসার ( রাঃ ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন- “এটা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদের নিকট পাঠ করো।” অর্থাৎ সূরা ইয়াসীন। -(
আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, মুসনাদে আহমাদ ) ইমাম আহমাদ ( রঃ ) বলেছেন- আমাদের প্রবীণরা বলতেন,
মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পাঠ করা হলে আল্লাহ তাঁর কষ্ট
লাঘব করে দেন ( তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৫৪ )।
v আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি
লাভ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কোরআন তেলাওয়াত হলো বিপদাপদ এবং জাহান্নামের আগুন
থেকে নাজাত লাভের উত্তম উছিলা। দুনিয়াবি সব ধরনের পেরেশানি থেকে মুক্তি ও আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, সূরা
ইয়াসিন বেশি বেশি তেলাওয়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।