ICT4E জেলা শিক্ষক অ্যাম্বাসেডরঃ শিক্ষকতা জীবনে এ আমার বড় প্রাপ্তি
২০১৩ সালে ICT বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। তখন www.ictinedubd.ning.com ওয়েবসাইটে শিক্ষকদের জন্য ব্লগ লেখা ও কন্টেন্ট আপলোড করা হত। স্কুলে তখন ল্যাপটপ ছিলো না। প্রশিক্ষণ নেয়ার তিনমাস পর স্কুলে ল্যাপটপ এলো। দু একটা কন্টেন্ট তৈরি করলাম, অন্যের কন্টেন্ট এডিট করে ক্লাস করলাম, শিক্ষার্থীরা খুব আনন্দ পেলো, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম। শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট ব্যবহার কমতে থাকলো। এভাবেই কেটে ৫ বছর। ইতোমধ্যে ডিজিটাল কন্টেন্ট মির্মানে শিক্ষকদের আগ্রহ, শিক্ষকবাতায়নে শিক্ষকবৃন্দের সক্রিয়তা, মুক্তপাঠে এতোসব কোর্স করে দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ -আমার অজানা থেকে গেলো। বছর খানেক আগে নজরে এলো সারা দেশের কিছু শিক্ষক সমবেত হয়েছেন মেহেরপুর মুজিবনগর। জারো জানলাম তারা ICT4E District Ambassador. ইতোমধ্যে কথা হলো আমার পার্শবর্তী যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুব্রত বিশ্বাস এর সংগে, যিনি যশোর জেলার একজন জেলা অ্যাম্বাসেডর। তার কাছ থেকে জেলা অ্যাম্বাসেডর সম্পর্কে জানলাম। বিষয়টি আমার ভালো লাগলো। আগ্রহ প্রকাশ করলাম এবং সহায়তা চাইলাম। তিনি আমার ডাকে সাড়া দিলেন। শিক্ষক বাতায়ন, মুক্তপাঠ এবং কীভাবে মুক্তপাঠে কোর্স করে পয়েন্ট অর্জন করতে হয়, তিনি বুঝিয়ে দিলেন এবং হাতেকলমে করে দেখালেন। এখন বুঝি কেনো তিনি অ্যাম্বাসেডর! তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এ বিষয়ে আরো জানতে নড়াইলের জেলা অ্যাম্বাসেডর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলাম, কিন্তু তাদের কোন সক্রিয়তা নজরে এলো না , তখন শিক্ষক বাতায়নে সক্রিয় অন্যান্য সদস্যদের সহায়তা চাইলাম।কুমিল্লা জেলার জেলা অ্যাম্বাসেডর ও সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা মোঃ সাইফুল ইসলাম, সহকারি শিক্ষক, বাতাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এর সাথে যোগাযোগ করলাম, তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন। চমৎকার একজন মানুষ, যিনি সারা দেশের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও সহায়তা করে যাচ্ছেন। তার নিজ উপজেলা সহ সারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে আইসিটির বহুবিধ ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করে যাচ্ছেন, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন, অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। আমাকে উৎসাহিত করলেন, সাহস দিলেন এবং ICT4E জেলা শিক্ষক অ্যাম্বাসেডর হওয়ার দিকনির্দেশনা দিলেন। নাটোর জেলার রাহাত আলমগীর স্যার, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ডিজিট্যাল আইকন ডলিরানী পাল ম্যাডাম, কিশোরগঞ্জের অসীম সেন স্যার ,যারা বাতায়নের সক্রিয় সদস্য, সেরা কন্টেন্ট নির্মাত এবং নিজ নিজ জেলার অ্যাম্বাসেডর, তাঁদের কাছ থেকে পরামর্শ নিলাম কিভাবে ভালো মানের কন্টেন্ট তৈরি করতে হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাতায়ন সক্রিয় সদস্যঁদের তৈরিকৃত কন্টেন দেখলাম । শুরু করলাম মুক্তপাঠ এর কোর্স করে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের চেষ্টা, মাইক্রোসফট এর কোর্স এবং কন্টেন্ট তৈরি। গত এপ্রিল মাসে সাইফুল স্যারের সহায়তায় আবেদন করলাম প্রাথমিক শিক্ষক অ্যাম্বাসেডর হওয়ার জন্য। একই সাথে চালিয়ে গেলাম মুক্তপাঠ, শিক্ষক বাতায়ন, এবং মাইক্রোসফট এ বিচরণ। দেখতে পাই, বাতায়নের পাতায় অ্যাম্বাসেডর তালিকায় নতুন নতুন নাম যুক্ত হওয়া শুরু হয়েছে। প্রত্যশা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকলো। মনে করি এই বোধহয় নড়াইল জেলার শিক্ষক অ্যাম্বাসেডর তালিকায় আমার নামটা যুক্ত হলো। কিন্তু না প্রতীক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ তর হলো। এর মধ্যে অর্জিত হলো মুক্তপাঠ থেকে ৩৩ টি সার্টিফিকেট, মাইক্রোসফট হতে ১৩টি সার্টিফিকেট। কন্টেন্ট তৈরি করে এগোতে পারলাম না। কিন্তু চেষ্টা করেছি মান সম্মত কন্টেন্ট তৈরি করতে। মুক্তপাঠ এর কোর্স গুলো পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করেছে। নিজ উপজেলার শিক্ষকদের উৎসাহিত করতে চেষ্টা করে চলেছি। সাড়াও পেয়েছি কয়েকজনের।
লক্ষ্য একটাই - আমার উপজেলা তথা জেলার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকের মধ্যে মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট এর মাধ্যমে শিক্ষাদান, আইসিটির বহুবিধ ব্যবহার এবং পেশগত দক্ষতা উন্নয়নে উৎসাহিত করা এবং সহায়তা করা।
২২অক্টোবর ২০১৯ শিক্ষক বাতায়নে নড়াইল জেলার অ্যাম্বাসেডর তালিকায় যুক্ত হলো আমার নাম। মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। শিক্ষকতা জীবনে এ আমার এক বড় প্রাপ্তি এবং স্বীকৃতি।
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতাঃ a2i, শিক্ষক বাতায়ন এবং মুক্তপাঠ।
মতামত দিন