শীতে শাকের পুষ্টিগুণ=====শীতে শাকের পুষ্টিগুণ=====শীতে শাকের পুষ্টিগুণ।

আমাদের দেশের ষড়ঋতুর আগমন ও বিদায় অত্যন্ত দৃশ্যমান। ঋতৃ পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতির মধ্যে আসে নানা পরিবর্তন। কোনো ঋতু সাথে নিয়ে আসে হরেক রকম ফল। আবার কোনো ঋতু নিয়ে আসে ফুল। তেমনি শীতকাল আমাদের জন্য নিয়ে আসে হরেক রকমের শাক-সবজি।
আর এ শাক-সবজিতে রয়েছে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নানা রকম স্বাস্থ্যগুণ। তাই আমাদের এ আয়োজনে থাকছে বেশ কয়েকটি শাকসব শীতকালে নানা রকম শাকসবজির সমারোহ দেখা যায়। বিভিন্ন মওসুমে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা যায়, কিন্তু আল্লাহ্ মানুষের মঙ্গল চান। তাই বিভিন্ন মওসুমি রোগবালাইয়ের মোকাবেলায় নানা প্রকার শাকসবজি দেন, যা খেলে ওইসব মওসুমি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। শীতকালে আমরা হরেকরকম শাকসবজি পাই। এসব শাকসবজি আমরা যদি বেশি বেশি খাই, তাহলে শীতকালীন রোগব্যাধি প্রতিরোধ করতে পারি। আসুন, জেনে নিই কোন শাকসবজিতে কী গুণ রয়েছে।
১) পালং শাক
শীতের শাকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পালং শাক। এটি যেমন খেতে ভালো, তেমনি কাজেও দারুণ। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন `এ`,‘বি’ `সি`, `ই’। এছাড়াও ফলিক অ্যাসিড, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, প্রেটিন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে ২৩ ক্যালরি, ৩ গ্রাম আমিষ, ৪ গ্রাম শর্করা ও ২ গ্রাম আঁশ থাকে, তবে কোনো চর্বি নেই। পালংশাকে প্রচুর পানি থাকে। দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে আনে। রক্তের গুণাগুণ বাড়ায়। পালংশাকের আয়রন লাল রক্ত কণিকা গঠনে সাহায্য করে, যা সারা দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে শরীরে দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
২) পুঁইশাক
কথায় বলে, মাছের রাজা রুই, আর শাকের রাজা পুঁই। কিন্তু পুঁই গুরুপাক খাবার। সবাই খেয়ে হজম করতে পারে না। পুঁই পেট পরিষ্কার করে। পুঁইশাক শুক্রবর্ধক, বাত ও পিত্তনাশক।
এছাড়াও এ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন `এ` এবং `সি`, যা ত্বকের রোগজীবাণু দূর করে, বৃদ্ধি ও বর্ধনে সাহায্য করে, চোখের পুষ্টি জোগানো ও চুলকে মজবুত রাখে। আর আঁশ জাতীয় খাবার হওয়ায় পাকস্থলী ও কোলনের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। পুঁইশাকে রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই।
৩) কলমিশাক
কলমিশাক গ্রামের পুকুর, হাওড়, বাঁওড় ও বিলে সর্বত্র পাওয়া যায়। কেউ কেউ পুকুরের লাগায়। এ ছাড়াও খালবিলে আপনা-আপনি হয়।
এ শাক স্বাস্খ্যের জন্য খুবই উপকারী। কলমিশাক পুরুষের শুক্র ও মেয়েদের বুকের দুগ্ধবর্ধক। কলমি রক্ত পরিষ্কার করে এবং নানা প্রকার যৌনব্যাধিতে উপকারী।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য কলমিশাক বেশ উপকারী। হিস্টরিয়া রোগের ওষধ কলমিশাক। পেট ঠান্ডা রাখে । কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৪) লালশাক
অত্যন্ত সহজলভ্য এই লালশাক। দেখতে লাল এবং রান্নার পর ভাত মাখালে ভাত লাল হয় বলে একে লাল শাক বলা হয় ।
এই লাল শাকে রয়েছে নানা স্বাস্থ্যগুন । অনেকেই খেতে ভালোবাসেন আবার অনেকে লাল শাক পছন্দও করেন না। কিন্তু আমাদের দেহের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য লাল শাকের গুরুত্ব অনেক বেশি। দেহের রক্তশূন্যতা,কিডনি সমস্যা দূর করা সহ দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে এ শাক খুবই উপকারী।
৫) মূলাশাক
কচি মুলার পাতাকে মুলাশাক বলে। এটা স্বাদে কিছুটা তেতো। তবে সহজে হজম হয়। মুলাশাক বায়ু, পিত্ত ও কফ ত্রিদোষ নাশক। তবে মূলা শাক ভালো করে সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত। অন্যথায় কফ ও পিত্ত বাড়তে পারে।
শীতকালে নানা রকম শাকসবজির সমারোহ দেখা যায়। বিভিন্ন মওসুমে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা যায়, কিন্তু আল্লাহ্ মানুষের মঙ্গল চান। তাই বিভিন্ন মওসুমি রোগবালাইয়ের মোকাবেলায় নানা প্রকার শাকসবজি দেন, যা খেলে ওইসব মওসুমি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। শীতকালে আমরা হরেকরকম শাকসবজি পাই। এসব শাকসবজি আমরা যদি বেশি বেশি খাই, তাহলে শীতকালীন রোগব্যাধি প্রতিরোধ করতে পারি। আসুন, জেনে নিই কোন শাকসবজিতে কী গুণ রয়েছে। প্রথমে শাকের কথাই বলি।
৬) পালংশাক : বলা হয় শাকের রাজা পালং। কারণ, পালংশাক অনেক রোগ সারায়। কিডনি ও লিভারের জন্য পালংশাক অত্যন্ত উপকারী। ফুসফুসের জন্যও পালংশাক উপকারী। সর্বপ্রকার পেটের অসুখে পালংশাক উত্তম। এতে লোহা ও তামা রয়েছে। এটি শক্তিবর্ধক। জন্ডিস রোগেও পালংশাক উপকারী। রক্ত পরিষ্কারক। জীবনী শক্তিবর্ধক। পিত্ত ও কফের জন্যও ভালো। ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। এতে ভিটামিন ‘এ, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ই’ রয়েছে।
৭) লাল শাক : খেতে সুস্বাদু লাল শাকে যে কতো রকমের স্বাস্থ্যগুণ লুকিয়ে আছে তা হয়তো অনেকেই জানেন না। আমাদের দেহের সুস্থতার জন্য লাল শাকের গুরুত্ব অনেক বেশি। লাল শাক ভাজি বা ছোট মাছ দিয়ে ঝোল খেতে অনেকেই ভালোবাসে। দেহের রক্তশূন্যতা রোধ করতে লাল শাক খুব উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন। লাল শাক দিয়ে জুস বানিয়েও খেতে পারেন। কিডনি ফাংশনগুলো ভালো ও পরিষ্কার রাখতে লাল শাক খাওয়া ভালো। এছাড়া যারা নতুন মা হয়েছেন, তাদের জন্যও লাল শাক খুব কার্যকরী। লাল শাকে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির করে। চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও লাল শাক ভালো। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং মিনারেল ও পুষ্টি যোগায়। লাল শাক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এর বিটা ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও বহু গুণাগুণ রয়েছে লাল শাকে। মুলাশাক : কচি মুলার পাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। এ শাক সহজে হজম হয়। এটি বায়ু পিত্ত ও কফ-এই ত্রিদোষনাশক। কিন্তু মুলোশাক ভালো করে সেদ্ধ করে রান্না করে খেতে হয়। অন্যথায় উপকারের পরিবর্তে অপকার করে। ভালো করে সেদ্ধ করে না খেলে যে ত্রিদোষ নাশ করে, ওই তিনটি আক্রমণ করে।
8)
হেলেঞ্চাশাক : হেলেঞ্চাশাক খালবিল, নদী, পুকুরে হয় অযত্ন ও অবহেলায়।
এই শাক স্বাদে কিঞ্চিত তেতো হলেও উপকারী। যাদের লিভার সমস্যা আছে কিংবা হাত-পা জালা
করে তারা হেলেঞ্চাশাক বেটে রস খেলে উপকা হয়। হেলেঞ্চা রক্ত পরিষ্কারক ও পেট ঠান্ডা
রাখে। পিত্ত রোগেও উপকারী। সদ্য রোগমুক্ত রোগীর জন্য হেলঞ্চাশাক ভর্তা বা ঝোল
উপকারী। শরীরে তাড়াতাড়ি শক্তি আনে। দুর্বলতা কেটে যায়। হেলেঞ্চাশাক ও কলমিশাকের
ভেষজ গুণ প্রায় একই। তবে দুই প্রকার শাকই ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।
৯) থানকুনিশাক : গ্রামগঞ্জের মাঠঘাটে যেখানে সেখানে থানকুনি গাছ
দেখা যায়। এই শাক খুবই উপকারী। কিন্তু গ্রামের লোকেরা খুব কমই খায়। পেটের
সর্বপ্রকার রোগে থানকুনি ধন্বন্তরী। থানকুনি সহজে হজম হয়। প্রতিদিন একবার খেলে
পেটের কোনো সমস্যা হয় না। দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়। এটি কাশি, অর্শ, লিভার, প্রস্রাবের
সমস্যা, জন্ডিস ইত্যাদি রোগের জন্য খুবই উপকারী। আমাশয় ও
অজীর্ণ রোগেও বিশেষ উপকার করে। রান্না ও ভর্তা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। বেটে রস খেলে
আমাশয় ভালো হয়। থানকুনিপাতা বেটে কাঁচা মরিচ, কালোজিরা,
লবণ ও যোয়ান মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়।
১০)সর্ষেশাক : আমরা
সর্ষেশাক খুব মজা করে খাই। কিন্তু সর্ষেশাক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এটি
মলমূত্র বৃদ্ধি করে। শরীর গরম করে। কারো কারো শরীরে জ্বালাযন্ত্রণা হয়। অন্যান্য
শাক অপেক্ষা সর্ষেশাক অপকারী। তাই আমরা সর্ষেশাক খেতে উৎসাহ দিচ্ছি না। আয়ুর্বেদ মতে, সর্ষেশাক ক্ষতিকর। ঠিক একই ভাবে
মটরশাকও ভালো নয়।
১১) সুসনিশাক : আয়ুর্বেদি কবিরাজেরা সুসনিশাককে রসায়ন বলেন। তাদের মতে, এই শাকে সপ্তধাতুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। অনিদ্রা রোগের মহৌষধ এই শাক। এই শাক মেধাবর্ধক, ক্ষুধাবর্ধক ও রসায়ন । এ শাক স্বাদে মিষ্টি। ভাজা, রান্না ও ভর্তা খাওয়া যায়। মেধাবর্ধক এই শাক ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন একবার খাওয়া উচিত। হাঁপানি রোগীদের জন্যও ভালো। আমরা শহুরে লোকেরা শাকপাতা কম খাই। অবহেলা করি। বাড়িতে মেহমানদের শাক পরিবেশন করতে সঙ্কোচ বোধ করি, অথচ হাতের কাছে সহজলভ্য শাক আমাদের জন্য খুবই উপকারী। তবে সব কিছু নির্ভর করে রান্নার ওপর। রান্না যদি ভালো হয় এবং ভর্তা যদি স্বাদের হয়, তাহলে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই শাক খেতে অভ্যস্ত হয়। আসুন, গোশত খাওয়া কমিয়ে শাকসবজি ও মাছ খাওয়ার অভ্যাস করি। সুস্থ থাকি।
শাকসবজি বিষমুক্ত করার নিয়ম- নিম্নােক্ত পদ্ধতিতে শাক সবজি অনেকাংশে বিষমুক্ত করা যায়। ফল- অন্তত ১ ঘন্টার জন্য পানিতে ডুবিয়ে রাখুন এতে ফরমালিনের মাত্রা কমে যাবে এবং খাবার উপযোগী হবে। সবজি- রান্না করার আগে কুসুম গরম পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন অত:পর পরিষ্কার করে রান্না করুন ফরমালিন কমে যাবে। মাছ- সাধারণত কুসুম গরম পানিতে ১ ঘন্টা চুবিয়ে রাখলে ৬০% ফরমালিন কমে যায় এবং তা যদি লবণ পানিতে চুবিয়ে রাখা যায় তাহলে ৯০% পর্যন্ত ফরমালিন কমে যাবে। শাক সবজি- ফরমালিন মুক্ত করার আরো একটি সহজ পদ্ধতি হলো আধা বালতি পরিস্কার পানিতে এক চামচ খাওয়ার সোডা মিশিয়ে নিন। এর মধ্যে শাক বা সবজি ভালো করে ডুবিয়ে পানিটা ফেলে দিয়ে আবার আধা বালতি পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ফেললে শাক সবজি অন্তত: নব্বই ভাগ বিষমুক্ত হবে।

সাম্প্রতিক মন্তব্য






রুমানা আফরোজ
লাইক ও পূর্ণ রেটিং সহ আপনার জন্য শুভকামনা। বাতায়নে এ পাক্ষিকে আমার আপলোডকৃত কনটেন্ট ও ব্লগ দেখে আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করছি। আমার কন্টেন্ট লিঙ্কঃ https://www.teachers.gov.bd/content/details/1321411








মোঃ শাখাওয়াৎ হোসেন
লাইক ও রেটিংসহ আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সেই সাথে আমার কন্টেন্ট দেখে লাইক ও রেটিংসহ আপনার মুল্যবান মতামত দেওয়ার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।আমার কন্টেন্ট লিংক - https://www.teachers.gov.bd/content/details/1325193

লুৎফর রহমান
🌹🌷Thanks for the excellent content and best wishes including full ratings. Please give your likes, comments and ratings to watch all my content.♥️♥️


বীণা মিত্র
🌺🌹🌺❤️ লাইক ও পূর্ণ রেটিং সহ শুভকামনা। আপনার প্রেজেনটেশন অনেক সুন্দর ,মানসম্মত আপলোড করেছেন। আপনার সফলতা কামনা করি। আমার ৪৮ তম কন্টেন্ট, ব্লক, প্রকাশনা - দেখে আপনার মূল্যবান মতামত দেয়ার বিনীত অনুরোধ রইল। https://www.teachers.gov.bd/content/details/1336465 🌺🌹🌺❤️

ফিরোজ আহমেদ
Nice addition. Good luck with full rating for you. There was an invitation to my window house. Please come and give constructive advice with your like, comment and full rating. Above all thanks for being with Batayan. I especially invite you to watch my innovative stories. The link is: https://www.teachers.gov.bd/content/details/1342971
মতামত দিন