ইসলাম মুমিন বান্দাকে কিছু পথনির্দেশিকা দিয়েছে।

ইসলাম মুমিন বান্দাকে কিছু পথনির্দেশিকা দিয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
এক. অতিরিক্ত পানাহার থেকে দূরে থাকা
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে
আদম সন্তানগণ! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করো এবং খাও ও পান করো
তবে অপচয় করোনা। কেননা, তিনি আপচয়কারীদেরকে অপছন্দ করে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)
আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে
মুসলমানের নীতি হবে, মনের চাহিদায় নয় বরং শরীরের চাহিদা অনুযায়ে খাবে; যাতে সে
দুনিয়ার পেশাগত কার্যক্রম ও ইবাদত বন্দেগী স্বাভাবিকভাবে করতে পারে। পক্ষান্তরে
অমুসলিমদের স্বভাব হবে- সে মনের চাহিদা পূরণে খাবার গ্রহণ করবে। এইদিকে ইশারা করে
প্রিয় নবি (সা.) বলেন, ‘মুমিন এক পেটে খায়, আর কাফির ও মুনাফিক সাত পেটে খায়।’
(বুখারি, হাদিস : ৫৩৯৪)
সুতরাং যে শারীরিক সুস্থতা চাইবে সে খাদ্য ও পানীয়
দ্বারা পেট ভর্তি করবেনা। মিকদাম বিন মা‘দীকারিব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি
রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র মানুষ ভরাট করে না। পিঠের
দাঁড়া সোজা রাখার মত কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। আরও বেশি ছাড়া
যদি তা সম্ভব না হয়, তবে পেটের এক তৃতীয়াংশ খানার জন্য; এক তৃতীয়াংশ পানির জন্য;
আরেক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮০)
আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, প্রিয় নবি সা. বলেন,
আমার উম্মতের মধ্য থেকে এমন লোকদের আবির্ভাব ঘটবে যারা খাবে রকমারি খাবার, পান
করবে রকমারি পানীয়, পরিধান করবে রকমারি পোশাক এবং তারা আবোল-তাবোল বাজে বকবে। এরাই
হবে আমার উম্মতের নিকৃষ্টতম লোক। (সিললাতুল আহাদিস আস-সহিহা, হাদিস : ৩৬৬৩)
দুই. উপকারী ও বরকতপূর্ণ খাবার গ্রহণের অভ্যাস
গড়ে তোলা
শারীরিক সুস্থতার অন্যতম নিয়ামক হলো- উপকারী,
স্থাস্বকর ও বরকতময় খাবার গ্রহণ করা। কোরআন হাদিসে কিছু খাবারকে বরকতময় বলে ঘোষণা
করা হয়। আর বরকতময় হলে তা অবশ্যই শরীরের জন্য উপকারী হবে। তাই উক্ত খাবারগুলো
নিয়মিত গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে। যেমন-
(১) খেজুর। সালমান বিন আমির হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করবে সে যেন খেজুর
দিয়ে ইফতার (শুরু) করে। কারণ, খেজুর বরকতময় খাবার। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৫৪)
(২) জমজমের পানি। আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত,
রাসুলূল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় তা (জমজমের পানি) বরকতপূর্ণ। তা তৃপ্তিকর
খাদ্য এবং রোগ নিরাময়ের ঔষধ। (মুসলিম, হাদিস : ২৪৩৫)
(৩) জায়তুন তৈল। উমর ইবন খাত্তাব (রা.) হতে
বর্ণিত। নিশ্চয় রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা যায়তুন তৈল খাও এবং তা মালিশ করো।
কারণ, তা বরকতময় বৃক্ষ হতে উৎপন্ন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫২)
(৪) মধু। কোরআন ও হাদিসে বহু জায়গায় মধুকে শিফা
তথা আরোগ্য লাভের কার্যকরী মাধ্যম বলে ঘোষণা করেছে।
(৫) কালোজিরার দানা বা তৈল। প্রিয়নবী (সা.)
বিভিন্ন ভাবে উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছে যে, কালোজিরা সকল রোগ থেকে আরোগ্য লাভে সহায়ক।
তিন. কিয়ামুল লাইল তথা শেষ রাতে জেগে আল্লাহর
ইবাদত করা
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের রাতের সালাত
(তাহাজ্জুদ) আদায়ে অভ্যাস্থ হওয়া উচিত। কেননা, এ হলো তোমাদের পূর্ববর্তী নেককারদের
অবলম্বিত রীতি। রাতের সালাত আল্লাহর নৈকট্যলাভ ও গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়; মন্দ
কাজের কাফফারা এবং শারীরিক রোগের প্রতিরোধক।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৯)
চার. পায়ে হাঁটা ও শরীরচর্চা করা
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নির্দেশনা অনুযায়ে
শারীরিক সুস্থতার অন্যতম প্রধান উপদান হলো পায়ে হাটা ও শরীর চর্চা করা । অথচ প্রিয়
রাসুল (সা.) চৌদ্দশত বছর পূর্বে এ বিষয়ে উম্মতকে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছে। হাদিসে
আমরা দেখতে পাই আমাদের রাসুল (সা.) প্রায় সময় হাঁটতেন।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসুল (সা.) এর চেয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে দ্রুত চলতে আর কোনো ব্যক্তিকে দেখিনি। যেন তার
জন্য জমিনকে গুটানো হতো। তার সাথে পথ চলতে আমাদের প্রাণান্তকর অবস্থা হতো, আর তিনি
অনায়াসে চলতে পারতেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৬৩০৯)
মসজিদে কুবা মদিনা থেকে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত।
মহানবি (সা.) প্রায় সময় হেঁটে মসজিদে কুবায় যেতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন,
নিশ্চয় রাসুল (সা.) মসজিদে কুবায় আসতেন, কখনো আরোহী হয়ে; কখনো পায়ে হেঁটে।
(বুখারি, হাদিস : ১১৯৪)
তাই আমাদের উচিত হবে- পায়ে হাটার প্রতি গুরুত্ব
দেওয়া এবং সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের শরীরিক ব্যায়ামে অভ্যাস্থ হওয়া।
পাঁচ. শারীরিক পরিশ্রম করা
সর্বজনস্বীকৃত যে, কায়িক পরিশ্রম শরীরিক সুস্থতার
অন্যতম কার্যকরী মাধ্যম। তাই সারাক্ষণ নিষ্কর্ম ও অলস হয়ে বসে না থেকে সময় ও
সুযোগানুযায়ে শারীরিক পরিশ্রম করা উত্তম। উপরন্তু এটি আম্বিয়াদের (আ.) একটি অনুসৃত
সুন্নাত। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-কে প্রশ্ন করা হল- রাসুল (সা.) ঘরে কি করতেন?
উত্তরে বললেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কাপড় সেলাই করতেন এবং নিজের জুতা নিজেই ঠিক
করতেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৭৭)
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত যে, নবি (সা.)
বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা এমন কোন নবি প্রেরণ করেননি, যিনি ছাগল চরায়নি। তখন
সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, আপনিও? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি কয়েক কীরাতের (মুদ্রা)
বিনিময়ে মক্কাবাসীদেও ছাগল চরাতাম। (বুখারি, হাদিস : ২১১৯)
মহান প্রভু আমাদের সবাইকে ইসলামের নির্দেশনাগুলো
মেনে চলার তৌফিক দিন, আমিন।
(সংগৃহীত)

মতামত দিন