@@তেতুলের নানাবিধ পুষ্টিগুণ ও ভেষজগুণ।

তেতুলের পুষ্টিগুণ : তেঁতুলে আছে চোখ ধাঁধানো পুষ্টি।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে,
এর প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচাফলে (আহারোপযোগী)
ক্যালসিয়াম আছে ২৪ মিলিগ্রাম
এবং পাকাফলে রয়েছে ১৭০ মিলিগ্রাম।
আয়রনের পরিমাণ কাঁচাফলে
১ মিলিগ্রাম এবং পাকাফলে আছে ১০.৯ মিলিগ্রাম
করে।
কাঁচাফলে অন্য পুষ্টি উপাদানগুলো
হলো- ১.১ গ্রাম আমিষ,
১৩.৯ গ্রাম শর্করা,
০.২ গ্রাম চর্বি,
০.০১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১,
০.০২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২,
৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি,
১.২ গ্রাম খনিজ লবণ এবং
খাদ্যশক্তি আছে ৬২ কিলোক্যালরি।
পাকা তেঁতুলে পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। এর প্রতি ফলে ৩.১ গ্রাম আমিষ, ৬৪.৪ গ্রাম শর্করা, ০.১ গ্রাম চর্বি, ০.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২, ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ০.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই, ১১৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৬২৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৯২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১.৩ মিলিগ্রাম সিলিনিয়াম, ০.১২ মিলিগ্রাম দস্তা, ০.৮৬ মিলিগ্রাম তামা এবং খাদ্যশক্তি আছে ২৮৩ কিলোক্যালরি।
ভেষজগুণ : পাকা ফল হৃদরোগের জন্য উপকারী। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
তেঁতুলের সাথে রসুন মিশিয়ে খেলে রক্তের কোলস্টেরল কমে। নিয়মিত তেঁতুল খেলে
প্যারালাইসিস রোগীর অনুভূতি ফিরে আসে। টারটারিক অ্যাসিড থাকায় হজমশক্তি বাড়ায়। তাই পেটফাঁপা ও কাশি দূর করতে পুরোনো তেঁতুল
গুলে; সে সাথে
পরিমাণমতো পানি, লবণ, গুড় অথবা চিনি মিশিয়ে খেতে হবে।
বুক ধড়ফড়, মাথা ঘুরানো, হাত-পা জালা, কোষ্ঠকাঠিন্য,
আমাশয় ও ক্ষুধামন্দা নিরাময়ে বেশ কাজ
করে। তেঁতুল অতিরিক্ত ফ্যাট বের করে প্রজননতন্ত্রের কাজ শক্তিশালী করে। ধুতরা, কচু এবং অ্যালকোহলের
বিষাক্ততা নিরাময়ে তেঁতুলের শরবত বেশ কার্যকরী। গাছের পাতা ও ছাল অ্যান্টিসেপটিক
এবং অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল। তাই শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি হাঁপানি,
চোখ জ্বালাপোড়া এবং দাঁতব্যথা সারিয়ে তুলে। নিয়মিত ঘণ্টাখানিক হেঁটে
২৫-৩০ গ্রাম তেঁতুল খেলে হৃদপি-ে ব্লক হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের বমিবমিভাব দূর করে।
কাঁচা তেঁতুল গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্রলেপ দিলে ব্যথা সেরে যায়। মুখে ঘা হলে
পানির সাথে তেঁতুল মিশিয়ে কুলকুচা করলে আরাম পাওয়া যায়। নিরাময়েও কাজ হয়। কোনো
কোনো এলাকার মানুষ তেঁতুলপাতা বেঁটে, মরিচ ও লবণ মিশিয়ে বড়া বানিয়ে পান্তাভাতের
সাথে খান। এতে শরীরে অনেক উপকারে আসে। কচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড
রয়েছে। পাতার রস সর্দি, কাশি, প্রস্রাবের
যন্ত্রণা, পাইলস, কৃমি ও চোখওঠা সারাতে
সহায়তা করে। তেঁতুলের বিচিতে এক ধরনের অ্যানজাইম আছে, যা
রক্তের চিনির মাত্রা কমায়। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া এর গুঁড়া নিয়মিত
খেলে পেটের আলসার ভালো হয়।
তেঁতুলের তৈরি শরবত খেতে অন্যরকম স্বাদ। অনেক
রোগের মহৌষধ। শরবত বানানোর জন্য আধাকাপ পরিমাণ পানিতে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে গুলিয়ে
নিতে হয়। এরপর ছাকুনি দিয়ে ছেঁকে, অন্য পাত্রে দেড় কাপ পানিতে পরিমাণমতো গুড় গুলিয়ে, সে মিশ্রণ মেশাতে হবে। সাথে থাকবে আয়োডিনযুক্ত লবণ। পরে আরো এক কাপ
স্বাভাবিক কিংবা ঠাণ্ডা পানি। এভাবেই হয়ে যাবে ভেষজ শরবত। এরপর গ্লাসে ঢেলে
রুচিমতো লেবুর রস দিয়ে নিজে খাওয়া এবং অন্যদের পরিবেশন।
তেঁতুলের পাতা দিয়ে ভেষজ কীটনাশক তৈরি করা
যায়। এজন্য একটি পাত্রে
এক লিটার পানির সাথে ১০x১২ গ্রাম শুকনো পাতা
এক সপ্তাহ ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর পাত্রটি ঢাকনা দিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এবার
ঢাকনা সরিয়ে ২/৩ টুকরা রঙিন পলিথিন দিয়ে এমনভাবে মুখ
বন্ধ করতে হবে যেন ভেতরে বাতাস ঢুকতে না পারে। এভাবে এক সপ্তাহ রেখে দিতে হয়। এবার
ছাকুনির সাহায্যে ছেঁকে নিলেই হয়ে যাবে ফসলের ক্ষতিকর পোকা মারার কীটনাশক।
ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলিলিটার ভেষজ কীটনাশক মিশিয়ে আক্রান্ত
স্থানে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
তেঁতুল ভারতীয় এবং এশিয়ান খাবার এই ফল ,এর পাতা, ফল, বীজ, ছাল, ডালপালা, শাখা এবং ফুল (প্রায় প্রতিটি অংশ) এর
উচ্চতর চিকিৎসায় মান রয়েছে।
সংগৃহীত

মতামত দিন