হিরোশিমা দিবস : মানবতার ইতিহাসে কলঙ্কময় দিন।

যুদ্ধের প্রথম শিকার মানবতা। গুঁড়িয়ে দেয় সমস্ত মানবিক মূল্যবোধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৯৪৫-এর আগস্টের ৬ তারিখে জাপানের হিরোশিমা নগরীতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের ফলে যে ভয়াল ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়, তা বারে বারে আমাদের সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
যে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছিল পারমাণবিক বোমা!!!
অগাস্টের ৬ তারিখে হিরোশিমায় ‘লিটল বয়, নামে এই বোমা বর্ষণের পর জাপানেরই আরেক শহর নাগাসাকিতে ৯ আগস্ট আরেকদফা পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়। একইরকম ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয় সেই শহরেও।
পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম হামলা হিসেবে তা চিহ্নিত হয়ে আছে। এই হামলায় চোখের পলকে উল্লিখিত স্থানদুটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। হামলায় দিশেহারা হয়ে পরাজয় বরণ করে জাপান, জার্মানি ও ইতালির অক্ষশক্তি। নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে তারা মিত্রশক্তির কাছে। সমাপ্তি ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও।
জাপানের আসাহি শিমবুনের এক হিসাবে বলা হয়েছে, বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট মারাত্মক শারীরিক সমস্যার কারণে দুই শহরে চার লাখের মতো মানুষ মারা যায়। এদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। নিরীহ, ঘুমন্ত অসহায় শিশু-নারী-পুরুষ, বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা ছাড়াও কয়েক লাখ মানুষ চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে।
আণবিক বোমা হামলার পরের ফলাফলটিও জাপানের মানুষদের জন্য যথেষ্ট করুণ পরিণতি নিয়ে এসেছিল। দুটি শহরের ৯০%-ই যেন ধ্বংস হয়ে যায় এই হামলার শিকার হয়ে। হাজার হাজার লোক আণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়ে পঙ্গু ও অসুস্থ জীবন যাপন করেছে চিরতরে। এদের মধ্যে অনেকেই পরে মারা গিয়েছিল। যারা বেঁচে ছিল, বেঁচে থেকেও যেন তারা ছিল জীবন্মৃত।
কী ঘটেছিল সেদিন?
যখন হিরোশিমার আকাশে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়েছিল বোমা, পুরো শহরের মানুষকে যেন অন্ধ করে দিয়েছিল চোখ ধাঁধানো আলো। প্রকাণ্ড ব্যাঙের ছাতার মতো ধোঁয়ার মেঘ ঢেকে ফেলেছিল শহরের আকাশ। বোমা বিস্ফোরণের আওতার আড়াই কিলোমিটার ব্যাসের ভিতর সব দালানকোঠাকে শুইয়ে দিয়েছিল বোমার শক্তি। বোমা বিস্ফোরণের আগে সেখানে ছিল ৯০ হাজারের মতো দালান। কিন্তু বিস্ফোরণের পর টিকে রইল কেবল ২৮ হাজার। সাথে সাথেই মারা গিয়েছিল বা আহত হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। পারমাণবিক বোমা থেকে বের হওয়া তেজস্ক্রিয়তা ও প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে অসুস্থ হয়ে সপ্তাহখানেকের মধ্যে মারা গিয়েছিল আরো কয়েক হাজার মানুষ।
কী কারণে আমেরিকা পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ছিল আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্রশক্তির বিপক্ষে। তারা ছিল জার্মানি, ইতালির সাথে অক্ষশক্তিতে। যুদ্ধের সময়ে মিত্রশক্তি ক্রমেই জয়লাভ করছিল আর জাপানিদেরকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন স্থান থেকে। যুদ্ধ ধারণ করছিল ভয়ঙ্কর রূপ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছিল অসংখ্য সৈন্য। একারণে আমেরিকার কাছাকাছি অবস্থানে থাকা জাপান ও চীনের মতো দেশ আক্রমণ করছিল আমেরিকাকে। সবখানেই জাপানি সৈন্যরা বিচরণ করছিল আর প্রদর্শন করছিল সীমাহীন নিষ্ঠুরতা। আত্মসমর্পণ করা মিত্রশক্তির সৈন্যদেরকে অত্যন্ত বাজেভাবে নিগৃহীত বা হত্যা করছিল জাপানিরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
হ্যারি এস ট্রুম্যান চাইলেন জাপানি সৈন্যদের দ্রুত আত্মসমর্পণ। তাই তিনি
পারমাণবিক বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাতে করে ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা
দেখে আত্মসমর্পণ করে জাপানিরা। আর, স্থলপথে হামলা করে জাপানিদের পরাস্ত
করার সিদ্ধান্ত তারা নিতে চাইছিল না এতে প্রচুর সৈন্যের ক্ষয়ক্ষতি হবে এমন
আশঙ্কায়। ২৫ লাখ সৈন্যের জাপানি সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় তাদের কমপক্ষে
হারাতে হতো ২৫ হাজার সৈন্য। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ দাবি করেন, আমেরিকা
চেয়েছিল জাপানিদের আত্মসমর্পণ আমেরিকার কাছেই হোক, সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো
দেশের কাছে নয়। তাই তারা শেষ পর্যন্ত ফেলেই ছেড়েছিল পারমাণবিক বোমা।
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির জাপানিদের পরাজিত করার মতো যৌক্তিক কারণ হয়তো ছিল
আমেরিকানদের। কিন্তু, পারমাণবিক বোমা ফেলে একটি দেশের লাখ লাখ নিরপরাধ
বেসামরিক লোককে হত্যা করা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্যতার পর্যায়ে পড়ে না।
তাই মানবতা বা সভ্যতার ইতিহাসে হিরোশিমা হামলা কলঙ্ক হিসেবেই বিবেচিত হবে
চিরকাল। আর এই দিনটি উপলক্ষ্যে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি
হাতে নেবে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষরা।

সাম্প্রতিক মন্তব্য


মোছাঃ আনজুমান আরা
লাইক ও পূর্ণ রেটিংসহ আপনার জন্য শুভকামনা রইলো। আমার আপলোডকৃত কনটেন্ট, ভিডিও কনটেন্ট ও ব্লগ দেখে আপনার মূল্যবান লাইক রেটিং সহ মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করছি।

মোছা: ইসমাতারা খাতুন
লাইক ও রেটিং সহ আপনার জন্য শুভকামনা এবং আমার কন্টেন্ট দেখার অনুরোধ রইল।

রত্না খাতুন
লাইক ও পূর্ণ রেটিংসহ আপনার জন্য শুভকামনা রইলোএবং আমার কন্টেন্ট দেখার অনুরোধ রইল।

সনজিত কুমার মন্ডল
লাইক ও পূর্ণ রেটিংসহ আপনার জন্য শুভকামনা রইলো। আমার আপলোডকৃত কনটেন্ট দেখে আপনার মূল্যবান লাইক রেটিং সহ মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করছি।
মতামত দিন