কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(এ আই) ও আমাদের শিক্ষার ভবিষ্যৎ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা সংক্ষেপে এআই বিশ্বব্যাপী এখন অতিপরিচিত এবং
বহুল ব্যবহৃত একটি বিষয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স মানুষের চিন্তাভাবনা গুলোকে
কৃত্রিম উপায়ে কম্পিউটার বা কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রের মধ্যে রূপ দেওয়ার
ব্যবস্থা। আমারা সকলে জানি, কম্পিউটারের নিজস্ব কোনো বুদ্ধি নেই। মানুষের
সংরক্ষিত তথ্য কম্পিউটার প্রদান করে থাকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা,
কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত
করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনেক আগে থেকেই, চুপিসারে আর্টিফিশিয়াল
ইনটেলিজেন্স অনেকটাই সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। যেমন, শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, পিৎজা বা বার্গার তৈরি, বিভিন্ন খেলা শেখানো, প্রতিযোগিতার
বিচারকাজ,
স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাঁত ব্রাশ করা, নিখুঁত ছবি তোলা, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি পার্কিং করা ইত্যাদি। অনেক সময় স্মার্টফোনের ব্যক্তিগত সহায়ক ফিচারের ভূমিকা
পালনকারী হিসেবে এআই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা পেয়েছি ‘চ্যাটজিপিটি’
নামক একটি সফটওয়্যার। চ্যাটজিপিটি অত্যন্ত শক্তিশালী, চাইলে মানুষের মতো যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত
নিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি সাধারণত অ্যালগরিদম ও মেশিন
লার্নিং-সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিশাল তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করে ফলাফল ও অনুমান জানিয়ে
থাকে। মানুষ বেশি কাজ করলে ক্লান্ত হয়ে যায়, বিরতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির
বিরতির প্রয়োজন নেই। সব সময়ই কাজ করতে পারে। একসঙ্গে হাজার হাজার কাজ দ্রুত করার
পাশাপাশি খুব অল্প সময়ে নতুন অনেক বিষয় শিখতে পারে। যেহেতু এটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে
তথ্য প্রদান করে তাই ভুল হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকে। বাংলাদেশের
টেলিযোগাযোগ, মোবাইল ফোন আপারেটর, ব্যাংক, অনলাইন ও কৃষিখাতসহ অনেক খাতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভালো ফল
পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন৷
তবে সবকিছু
ছাপিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চলছে বলে
প্রতীয়মান হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে অনেক দেশে এ পরিবর্তনটি প্রতীয়মান হয়েছে। সম্প্রতি মাইক্রোসফটের
সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর ধারণার কথা তুলে
ধরেছেন। একই সঙ্গে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা যেকোনো মানুষের মতোই একজন ভালো শিক্ষক হয়ে উঠবে। এ
ক্ষেত্রে পরবর্তী দশকের মধ্যে শিক্ষক হিসেবে মনুষ্যরূপী রোবট দেখা না গেলেও এরই
মধ্যে কম্পিউটারের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষাদানের
জন্য দেশে-দেশে বহু প্রকল্প প্রণয়ন এবং সেসব বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে বুদ্ধিবৃত্তিভিত্তিক শিক্ষাগত
অভিজ্ঞতার আকৃতি ও প্রকৃতির দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। শিক্ষার উপকরণ ও
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি,
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান, প্রশ্নোত্তর
অ্যাসেসমেন্ট এবং গ্রেডিংয়ের মতো শিক্ষার মৌলিক কার্যক্রমকে স্বয়ংক্রিয় করতে এআই
অনন্যসাধারণ ভূমিকা রাখবে। প্রশ্নপত্রে প্রায় সব ধরনের মাল্টিপল চয়েস ও শূন্যস্থান
পূরণের সঠিক উত্তর বাছাই এবং এমনকি শিক্ষার্থীর রচনামূলক উত্তর যাচাইয়েও এআই
পিছিয়ে থাকবে না। যদিও এখন পর্যন্ত রচনামূলক প্রশ্নোত্তর গ্রেডিং করার সফটওয়্যার
তৈরী হয়নি, তবে অচিরেই এর উদ্ভাবনী
পূর্ণতা লাভ করবে । যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
প্রযুক্তির লক্ষ্য হলো এমন একটি কম্পিউটার সিস্টেম তৈরি করা, যা মানুষের আচরণ ও চিন্তাশক্তির আদলে জটিল সমস্যার সমাধান করবে। তাই যে
সমস্ত গাণিতিক জটিল ও কঠিন কাজ শিক্ষার্থীদের দ্বারা করা সম্ভব হয় না , কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
এ ধরনের সমস্যা সমাধানের উপায় বলে দেবে। ইতোমধ্যে অনেক ওপেন
অনলাইন কোর্স প্রভাইডার এ ধরনের অনুশীলন ব্যবস্থা প্রচলন করেছে। যখন একটি শিক্ষার্থী হোমওয়ার্ক বা অ্যাসাইনমেন্টের ভুল উত্তর জমা দিতে দেখা যায়,
তখন এ আই সিস্টেমটি শিক্ষককে সতর্ক করে
এবং ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীদের একটি কাস্টমাইজড বার্তা দেয়, যা সঠিক উত্তরের ইঙ্গিত বহন করে। কোনো কোর্সে কোনো প্রকার ফাঁকফোকর
থাকলে সেসব পূরণ করতে এ ধরনের পদ্ধতি দারুণভাবে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায় । শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে একই ধারণা নিশ্চিতে
সহায়তা করবে । কোনো বিষয়ে শিক্ষকের কাছ থেকে পরামর্শ
নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এআই পদ্ধতির সহায়তায় শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল
সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে অবিহিত হয়ে, পরে তা সঠিকভাবে
করণীয় বিষয়ে বুঝে নিয়ে মনে রাখতে পারে।
বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি ডিজিটাল
গৃহশিক্ষক হিসেবেও কাজ করবে। তাই এই পদ্ধতি থেকে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের
বাইরে অতিরিক্ত সহায়তা পাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর
ভিত্তি করে প্রস্তুতকৃত কিছু টিউটরিং প্রোগ্রাম ইতোমধ্যে এআই শিক্ষাব্যবস্থায়
বিদ্যমান এবং এগুলো মৌলিক গণিত, রচনামূলক লেখা ও অন্যান্য
বেশকিছু বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে পারছে। এআই অদূর ভবিষ্যতে টিউটর হিসেবে
এসব বিষয়ে শিক্ষাদানে সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্টরা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। এআই শিক্ষাপদ্ধতিতে
শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে শুধু তাদের প্রয়োজনানুসারে কাস্টমাইজড কোর্সগুলো শিখতে
সহায়তা করবেনা, বরং এ পদ্ধতি সার্বিকভাবে ফলতার বিষয়ে উভয়কে প্রতিক্রিয়া জানাবে। এআই সিস্টেমের প্রধান সুবিধা হচ্ছে- এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর
যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময় শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে এআই সিস্টেম
খুব সহজভাবে শিক্ষকের প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করে। এআই কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষা
কার্যক্রম ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের মৌলিক দক্ষতা শিখতে সহায়তা করছে।
তবে এখানেই শেষ নয়, এ পদ্ধতি দিন দিন বিকশিত হওয়ার কারণে অদূর
ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের অনেক বিস্তৃত পরিসেবা প্রদান করবে এবং এখন থেকে মাত্র কয়েক
দশকের মধ্যেই তার ফল হবে শিক্ষাব্যবস্থার একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন চেহারা।
আমরা জানি, প্রত্যেকটা জিনিসের যেমন উপকার আছে তেমনি ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। আসলে এটা যেমন আধুনিকতার ছোঁয়া নিয়ে এসেছে এবং নিয়ে এসেছে কিছু সমস্যা। যেহেতু অল্প সময়ে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে তাই এর ফলে শিক্ষার্থীরা হয়তো খুব বেশি ভাবে প্রযুক্তি নির্ভরশীল হয়ে যাবে। নিজে থেকে কোনো ক্রিয়েটিভ কাজ করতে চাইবে না। সর্বদা প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা তৈরি করছে করে চলার চেষ্টা করবে। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হয়তো কর্ম বিমুখতাদেখা যেতে পারে। এছাড়াও গবেষণা ও সৃজনশীল কাজ গুলোও হুমকির মুখে পরতে পারে।
তথ্য উৎসঃ
* মো. সোহান হোসেন, প্রযুক্তিবিদ
* বীরেন্দ্র নাথ অধিকারী : মুক্তিযোদ্ধা ও প্রযুক্তিবিদ
*প্রথম
আলো, দৈনিক পত্রিকা
*
দৈনিক ইত্তেফাক, পত্রিকা
*বি বি সি
*গুগল.কম

সাম্প্রতিক মন্তব্য


মোঃ ফেরদৌস রহমান
লাইক কমেন্ট ও পূর্ণ রেটিং সহ আপনার জন্য শুভকামনা রইল। আমার আপলোডকৃত কন্টেন্ট, ভিডিও কনটেন্ট, ব্লগ ও ছবি দেখে আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ প্রার্থনা করছি।

বিপুলেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী
Congratulations and Best wishes always. Go ahead. Don’t stop your good activities.






নুর জাহান বেগম
লাইক ও রেটিংসহ আপনার জন্য শুভকামনা। আমার আপলোডকৃত কনটেন্ট দেখে আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করছি।










মতামত দিন