কম পরিচিত ফল বিলিম্বি। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ টক ফল বিলিম্বি। বিলিম্বির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ
টক ফল বিলিম্বি। বিলিম্বির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে
নিই।
কম পরিচিত ফল বিলিম্বি। ছোট কিন্তু লম্বাটে আকারের। দেখতে খুবই সুন্দর। এই জুলাই মাসে ফলটি বাজারে আসে। অনেকেই বিলিম্বিকে কামরাঙ্গার নিকট আত্মীয় বলে থাকেন। এর স্বাদও অনেকটা কামরাঙ্গার মতোই। শুধু স্বাদই নয় প্রজাতি, বিন্যাস, পরিবার, গুণ সবকিছুতেই কামরাঙ্গার অনুসারী। এক কথায় কামরাঙ্গার ছোট সংস্করণ। আমাদের দেশে কম পরিচিত হলেও বিভিন্ন দেশে বেশ পরিচিতি রয়েছে বিলিম্বির।
বিলিম্বির ইংরেজি নাম Bilimb । বৈজ্ঞানিক নাম Averrhoa bilimbi (এভারোয়া
বিলিম্বি)। বিলিম্বির গাছ ইংরেজিতে Cucumber tree বা Tree
sorrel নামেও পরিচিত। বিলিম্বি অক্সিডেসি গোত্রের অন্তর্গত একটি
উদ্ভিদ।
বিলিম্বির উৎপত্তি সম্ভবতঃ ইন্দোনেশিয়ার মলুক্কাসে। তবে অনেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর মতে বিলিম্বির উৎপত্তি ব্রাজিলে এবং পরে তা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এটি মূলতঃ উষ্ণ আবহাওয়ার উদ্ভিদ। ভারতের উষ্ণ আবহাওয়ায় বিলিম্বি খুব ভালো জন্মে। বিশেষ করে কেরালা, মহারাষ্ট্র, তামিল
নাড়ু এবং গোয়ায় বিলিম্বি খুবই জনপ্রিয়।
এই গাছটি ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা,
বাংলাদেশ, মায়ানমার প্রভৃতি দেশসহ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই চাষ করা হয় অথবা আধ-বুনো অবস্থায় দেখতে পাওয়া
যায়। ১৭৯৩ সালে বিলিম্বি টিমর থেকে জ্যামাইকা এবং বেশ কিছু বছর পর মধ্য ও দক্ষিণ
আমেরিকা যেখানে এটি mimbro নামে সর্বত্র চাষ করা হয়।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ-Plantae, বিভাগ-Magnoliophyta,
শ্রেণি- Magnoliopsida,
বর্গ- Oxalidales, পরিবার- Oxalidaceae,
গণ- Averrhoa, প্রজাতি- A. bilimbi, দ্বিপদী নাম- Averrhoa bilimbi.
বিবরণ
বিলিম্বি দেখতে অনেকটা পটলের মতো, তবে এর চেয়ে ছোট। এই ফলটি
৩-৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয়। বিলিম্বি গাছে প্রচুর ফল আসে এবং ধরে খুবই
অদ্ভুতভাবে। গাছের ডালে তো বটেই, কান্ড ঘিরেও ফল ধরে। গাছ
খুব বেশি বড় হয় না, ৫-১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতাগুলো
কামরাঙ্গার মতোই। এপ্রিল-মে মাসে গোলাপী-সাদা রং-এর ফুল ফোটে। গাছের কাণ্ড ও
শাখা-প্রশাখায় থোকায় থোকায় ফল ঝুলে থাকে। সাধারণত জুলাই মাসে ফল পাকে। কাঁচা
অবস্থায় বিলিম্বি সবুজ এবং পাকলে হালকা হলুদ রঙের হয়ে থাকে।
ব্যবহারসমূহ
বাংলাদেশে বিলিম্বি কাঁচা ও পাকা দুই ভাবেই খাওয়ার প্রচলন
রয়েছে। বিলিম্বি কামরাঙ্গার মতোই ঝাল-লবণ দিয়ে খেতে ভালো লাগে। ছোট মাছ ও ডালের
সঙ্গে রান্নাতে বিলিম্বির জুড়ি নেই। ডাল বা মাংসতেও ব্যবহার করা যায়। ফলের
স্বাদ টক, পাকা বিলিম্বি দিয়ে আচার বা চাটনি তৈরি করা হয়।
বিলিম্বি দিয়ে তৈরি চাটনি ও আচার খুবই মজাদার। এ ফলটি কাঁচা অবস্থায় খুব টক হলেও
রান্নার পর বা চাটনি কিংবা আচার তৈরি করার পর টক থাকে না।
ফিলিপাইননে সাধারণ খাবারের টক ভাব আনার জন্য বিলিম্বি curried বা এই ধরনের sinigang
এবং paksiw যোগ করা হয়। সুস্বাদের জন্য
অসিদ্ধ বিলিম্বি ভাত ও কোস্টারিকা মধ্যে মটরশুটি সঙ্গে পরিবেশিত হয়।
ইন্দোনেশিয়ায় তেঁতুল বা টমেটোর বদলে এটি কিছু খাবারের
সঙ্গে যোগ করা হয়। এ দেশে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষিত করা হয় বিলিম্বি। মালয়েশিয়াতেও
মিষ্টি জ্যাম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
ভারতের কেরল ও ভাটকলে এটা আচার তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়
এবং মাছ তরকারি তৈরিতে,
বিশেষ করে সার্ডিনের সঙ্গে একে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে কর্ণাটক,
মহারাষ্ট্র ও গোয়ায় এই ফল সাধারণত লবণ ও মসলা দিয়ে কাঁচা খাওয়া
হয়। রোদে শুকনো বিলিম্বিকে আসামে সুনতি বলা হয়। এখানে আমের চাটনির বদলে ব্যবহৃত
হয়।
১০০ গ্রাম বিলিম্বির পুষ্টিগুণ
আর্দ্রতা ৯৪.২-৯৪.৭ গ্রাম, আমিষ ০.৬১ গ্রাম, Ash
০.৩১- ০.৪০ গ্রাম, তন্তু ০.৬ গ্রাম, ফসফরাস ১১.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩.৪ মিলিগ্রাম,
লৌহ ১.০১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.০১০ মিলিগ্রাম,
রিবোফ্লাভিন ০.০২৬ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ০.০৩৫
মিলিগ্রাম, Ascorbic Acid ১৫.৫ মিলিগ্রাম, Niacin ০.৩০২ মিলিগ্রাম।
ঔষুধি গুণাগুণ
সর্দি কাশি নিরাময়ে বিলিম্বি ফুল ভালো কাজ দেয়। গরম পানির
সঙ্গে এটিকে জ্বাল দিতে হবে । এই পানি নিয়মিত সেবন করলে সর্দি-কাশি ভালো হয়ে যায় ।
বিলিম্বি গাছের ফল প্রতিনিয়ত খেলে উচ্চরক্তচাপ ও
ডায়াবেটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।
বিলিম্বির পাতা বিষধর প্রাণীর কামড় থেকে নিরাময়ের জন্য
ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায় ।
বিলিম্বির পাতা বেটে গায়ে লাগালে চুলকানি নিরাময় হয়ে থাকে ।
ফিলিপাইননে বিলিম্বির পাতা চুলকানি, ফোলা, বাত,
মাম্পস বা চামড়া ফাটার জন্য পেস্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অন্যত্র
বিলিম্বির পাতা বিষধর প্রাণীর কামড় থেকে নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করে।
ঠাণ্ডা এবং কাশিতে ব্যবহার করা হয় পাতার রস।
মালয়েশিয়াতে তাজা বিলিম্বির পাতা যৌনরোগ রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। ফরাসি, গায়ানাতে, ফল থেকে
তৈরি সিরাপ প্রদাহ ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ভারতের তিরুবনন্তপুরম জেলার কিছু গ্রামে বিলিম্বি ফল স্থূলতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
সংগৃহীত

সাম্প্রতিক মন্তব্য


মোছাঃ হোসনে আরা
লাইক ও পূর্ণ রেটিংসহ আপনার জন্য শুভকামনা রইলো। আমার আপলোডকৃত কনটেন্ট, ভিডিও কনটেন্ট ও ব্লগ দেখে আপনার মূল্যবান লাইক রেটিং সহ মতামত ও পরামর্শ প্রত্যাশা করছি।
মতামত দিন