Loading..

ব্লগ

রিসেট

২৭ অক্টোবর, ২০১৩ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলা বানান প্রমিতীকরণের ইতিহাস

বাংলাদেশে যায়যায়দিন, প্রথম আলো, ইত্যাদি পত্রিকাগুলো যখন আমাদের আজন্ম-পরিচিত বানানগুলোকে অন্য ভাবে লেখা শুরু করলো, তখন এর প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছিল। আমার অনুসন্ধানের ফলেই জানতে পেরেছিলাম এ পত্রিকাগুলো বাংলা বানানের প্রমিত নিয়ম অনুসরণ করছে। এরপর প্রমিত বানান-রীতি বুঝবার চেষ্টা করি। এটি আমার কাছে একটা সম্পূর্ণ নতুন ভুবন হিসাবে উন্মোচিত হয়েছিল। এর অনেক আগে, ১৯৮০-৮১ সালের দিকে আমাদের ক্লাস-টিচার ‘জানুয়ারি’, ‘ফেব্রুয়ারি’ বানানগুলোকে ‘রি’ দ্বারা লিখে আমাদেরকে চমকে দিয়েছিলেন, এবং ওটি ‘অশুদ্ধ’ বলে শিক্ষককে ভুল প্রমাণিত করতে আমরা সচেষ্ট হয়েছিলাম। এর পর যখন বানান প্রমিতীকরণের ইতিহাস পড়ি, তখন জানতে পারি ঐ শিক্ষক এরূপ বানান প্রমিতীকরণ আন্দোলনের সাথে আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন।

বানান-বিশুদ্ধতার ব্যাপারে ছোটোবেলা থেকেই আমার প্রচুর আগ্রহ ছিল। কর্মজীবনে প্রতিনিয়ত স্বল্প সময়ে অজস্র ডকুমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন প্রস্তুত, সংশোধন ও পরিমার্জন করার প্রয়োজন পড়ে বিধায়, এবং লেখালেখির কিছুটা অভ্যাস থাকায় ‘বিশুদ্ধ বানান’ বিষয়টা মজ্জাগত হয়ে গেছে। এজন্য সামান্যতম ত্রুটি ও বিচ্যুতি খুব সহজেই চোখে ধরা পড়ে, এবং ভুলের বাহুল্য অনেক সময় বিরক্তিরও উদ্রেক করে। ব্লগে যাঁরা লেখালেখি করেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে যেমন বানান-বিষয়ে অনেক সচেতন এবং নির্ভুল বানানে লিখে থাকেন, এবং বানান-বিষয়ে অগাধ জ্ঞানও রয়েছে, তেমনি অনেকে আছেন যাঁরা বানানের ব্যাপারে বেশ উদাসীন। আমরা বেশিরভাগ সময়েই পত্রপত্রিকা, বইপত্র বা ব্লগ ও ফেইসবুকের বানান দেখেই শব্দগুলো শিখে বা লিখে থাকি, এবং ছাত্রজীবনে পাঠ্যপুস্তক থেকে লব্ধ বানান-জ্ঞানই আমাদের বড় সম্বলরূপে কাজ করে। কোনো শব্দের বানানের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে কোনো অভিধানের পরিবর্তে আমরা ব্লগ, ফেইসবুক, পত্রপত্রিকা বা বইপত্রে-দেখা বানানকেই বিশুদ্ধ মনে করি। এতে কোনো দোষ নেই, কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন ব্লগ, ফেইসবুক বা বইপত্রে মুদ্রণজনিত কারণে কোনো শব্দের ভুল বানানটি দেখে আমরা সেটিকেই বিশুদ্ধ বানান বলে সাব্যস্ত করি এবং এ নিয়ে অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত হই। এতে বানান সম্পর্কে আমাদের দৈন্যদশা ও অজ্ঞানতা প্রকাশ পায়। কোনো শব্দের সঠিক বানান সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য কোনো বই বা পত্রপত্রিকা বা ব্লগ না দেখে প্রথমেই আমাদের দেখা উচিত একটা অভিধান। বাংলা একাডেমী অনেকগুলো অভিধান প্রকাশ করেছে; এসব অভিধান ছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কিছু অভিধান বাংলাদেশে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। একজনের পক্ষে এতগুলো অভিধান নিজের সংগ্রহে রাখা হয়তো সম্ভব নয়, এবং এতগুলো অভিধান পর্যালোচনা করাও হয়তো সব সময় সম্ভব হয়ে উঠবে না। এজন্য যাঁরা সঠিক বানানে লিখতে চান, আমার মতে, তাঁদের কাছে দুটো অভিধান থাকলে বেশ সুবিধা হয়- শব্দকোষ হিসাবে ‘বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক অভিধান’ এবং বানানের জন্য ‘বাংলা একাডেমী বাংলা বানান-অভিধান’। অনেকের কাছে ‘সংসদ বাংলা অভিধান’ রয়েছে; ওটি বানানের জন্য আমাদের অথোরিটি নয়, কারণ, ঐ অভিধানটি ‘কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-প্রবর্তিত বাংলা বানানের নিয়ম, ১৯৩৬’ মোতাবেক রচিত, যার সাথে বাংলা একাডেমী প্রবর্তিত প্রমিত বানান-নীতির সাথে সামান্য তারতম্য রয়েছে। তবে শব্দকোষ হিসাবে ‘সংসদ বাংলা অভিধান’ খুব কার্যকর।

আরো দেখুন