উদ্ভিদের নামঃ কড়ই
অন্যান্য নামঃ চটকা, শিরীষ, কালা কড়ই, কালি কড়ই, শীল কড়ই, সৃষ্টি কড়ই, ইত্যাদি।
ইংরেজি নামঃ East Indian walnut, Frywood, Indian siris, koko, lebbek tree, Raom tree, Woman's tongue.
বৈজ্ঞানিক নামঃ Albizia lebbeck.
দেশের প্রায় সব ধরনের শিরীষ সাধারণত কড়ই গাছ নামে পরিচিত। গড়ন ও আভিজাত্যের দিক থেকে বৃষ্টি শিরীষ এবং গগন শিরীষ দুটিই অনন্য। কিন্তু এরা এ দেশের আত্মজ নয়। বরং আলোচ্য শিরীষটি এ অঞ্চলের আদিবৃক্ষ।
শিরীষ ফুলের সৌন্দর্য সম্পর্কে এ দেশীয় কবিকুলের সচেতনতা সুপ্রাচীন। কালিদাস শিরীষকে চারুকর্ণের অলংকার বলে মেঘদূতে উল্লেখ করেছেন। বৈষ্ণব কবি রাধামোহনের কাছে শিরীষ কোমলতার প্রতীক। চৈত্রের শেষে বৃষ্টিস্নাত ধরিত্রীর স্নেহস্পর্শ ব্যতিরেকে এ দেশে শিরীষ প্রস্ফুটিত হয় না।
পরিণত শিরীষ বিশাল বৃক্ষ। কাণ্ড সরল, উন্নত, গোলাকৃতি, দীর্ঘ, পাঁশুটে কিংবা সাদা এবং প্রায় মসৃণ। শীষ ছত্রাকৃতি এবং সঘন পত্রবিন্যাসে ছায়ানিবিড়। পাতা দ্বিপক্ষল এবং আলোসংবেদী, তাই সন্ধ্যায় বুজে যায়। বসন্তের শেষে পাতা গজানো ও ফুল ফোটার সময়। কচিপাতা পাণ্ডুর সবুজ। শিরীষ মঞ্জরির আকৃতি রেইনট্রির অনুরূপ হলেও আয়তনে বড়, রঙেও আলাদা। ফুলের সৌন্দর্যটুকু বিকীর্ণ পরাগ-কেশরেই নিহিত এবং তার কোমলতা পালকের সঙ্গে তুলনীয়।
শিরীষ-মঞ্জরি হালকা হলুদ এবং পরাগকেশরের আগা সবুজ। ফুলের গন্ধ দূরবাহী এবং উগ্র। শিরীষ কাঠ দৃঢ়, দীর্ঘস্থায়ী। শিকড় অরেচক, ছাল চর্মরোগের ওষুধ এবং পাতার রস রাতকানা রোগে উপকারী।
শ্রীলংকা, মিয়ানমার মালয় এবং চীনেও গাছটি জন্মে। ইদানীং আফ্রিকা ও আমেরিকায় চাষ হচ্ছে শিরীষ গাছ।
শিরীষ ফুল সৌন্দর্যে, সুগন্ধে যেমন আকর্ষণীয়, কাব্যসাহিত্যে বহু উল্লেখে সে আমাদের নান্দনিক চেতনারও অঙ্গীভূত।