![img](https://teachers.gov.bd/shared/profile_pictures/2024/April/16/1713253753661e2d79a9e4c_thumb.webp)
সহকারী অধ্যাপক
![article](https://teachers.gov.bd/shared/blog_image/2024/July/03/17199599336684817de5a7a.webp)
০৩ জুলাই, ২০২৪ ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ
সহকারী অধ্যাপক
অতএব অপেক্ষা কর সেদিনের যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন
হবে আকাশ। যা মানুষদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে: এটি যন্ত্রণাদায়ক
আযাব।
১০ فَارۡتَقِبۡ یَوۡمَ تَاۡتِی
السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِیۡنٍ
সূরাঃ আদ-দুখান আয়াতঃ ১০-১৪ মাক্কী
অতএব অপেক্ষা কর সেদিনের যেদিন স্পষ্ট
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ। আল-বায়ান
অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের যেদিন
আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে যা সুস্পষ্ট (ভাবে দেখা যাবে)। তাইসিরুল
অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেই দিনের যেদিন
স্পষ্ট ধুম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ। মুজিবুর রহমান
Then watch for the Day when the sky will bring a visible
smoke. Sahih International
১০. অতএব আপনি অপেক্ষা করুন সে দিনের
যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ(১),
(১) আলোচ্য আয়াতসমূহে উল্লেখিত ধোঁয়া
সম্পর্কে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের তিন প্রকার উক্তি বর্ণিত আছে। প্রথম উক্তি এই যে, এটা কেয়ামতের অন্যতম আলামত বা কেয়ামতের
সন্নিকটবর্তী সময়ে সংঘটিত হবে। এই উক্তি আলী,
ইবন
আব্বাস, ইবন ওমর, আবু হুরায়রা, রাদিয়াল্লাহু আনহুম ও হাসান বসরী
রাহেমাহুল্লাহ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এ ভবিষ্যদ্বানী অতীতে পূর্ণ হয়ে
গেছে। এবং এতে মক্কার সে দুর্ভিক্ষ বোঝানো হয়েছে,
যা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দো আর ফলে
মক্কাবাসীদের উপর অর্পিত হয়েছিল। তারা ক্ষুধার্তা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিল এবং মৃত
জন্তু পর্যন্ত খেতে বাধ্য হয়েছিল। আকাশে বৃষ্টি ও মেঘের পরিবর্তে ধুম্র দৃষ্টিগোচর
হত। এ উক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখের। তৃতীয় উক্তি এই যে, এখানে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কার আকাশে
উত্থিত ধূলিকণাকে ধুম্র বলা হয়েছে। এ উক্তি আবদুর রহমান আ'রাজ প্রমুখের। প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ই
সমধিক প্রসিদ্ধ। তৃতীয় উক্তি ইবনে-কাসীরের মতে অগ্রাহ্য। সহীহ হাদীসসমূহে দ্বিতীয়
উক্তিই অবলম্বিত হয়েছে। প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ের বর্ণনাসমূহ নিম্নরূপ:
হুযায়ফা ইবনে আসীদ বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের প্রতি
দৃষ্টিপাত করলেন। আমরা তখন পরস্পর কেয়ামতের সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, যত দিন তোমরা দশটি আলামত না দেখ, ততদিন কেয়ামত হবে না-(১) পশ্চিম
দিক থেকে সূর্যোদয়, (২) দোখান তথা ধুম্র, (৩) দাব্বা (বা বিচিত্র ধরণের প্রাণী), (৪) ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব, (৫) ঈসা আলাইহিস সালাম-এর অবতরণ, (৬) দাজ্জালের আবির্ভাব, (৭) পূর্বে ভূমিধ্বস, (৮) পশ্চিমে ভূমিধ্বস (৯) আরব উপদ্বীপে
ভূমিধ্বস, (১০) আদন থেকে এক অগ্নি বের হবে এবং
মানুষকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষ যেখানে রাত্রিযাপন করতে আসবে, অগ্নিও থেমে যাবে, যেখানে দুপুরে বিশ্রামের জন্যে আসবে, সেখানে অগ্নিও থেমে যাবে। [মুসলিম:
২৯০১] এছাড়া কিছু সহীহ ও হাসান হাদীসও একথা প্রমাণ করে যে, ‘দোখান’ ধুম্র কেয়ামতের ভবিষ্যৎ আলামতসমূহের
অন্যতম। কুরআনের বাহ্যিক ভাষাও এর সাক্ষ্য দেয়।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু
আনহুমা বলেন, কাফেররা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাওয়াত কবুল করতে অস্বীকার করল এবং কুফরীকেই আঁকড়ে রইল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উপর দোআ
করলেন যে, হে আল্লাহ! এদের উপর ইউসুফ আলাইহিস
সালাম-এর আমলের দুর্ভিক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিন। ফলে কাফেররা ভয়ংকর দুর্ভিক্ষে
পতিত হল। এমনকি, তারা অস্থি এবং মৃত জন্তুও ভক্ষণ
করতে লাগল। তারা আকাশের দিকে তাকালে ধুম্র ব্যতীত কিছুই দৃষ্টিগোচর হত না। এক বর্ণনায়
আছে, তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার
তীব্রতায় সে কেবল ধুম্রের মত দেখত। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ তার বক্তব্যের প্রমাণ
স্বরূপ এ আয়াতখানি তেলাওয়াত করলেন। দুর্ভিক্ষ প্ৰপীড়িত জনগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আবেদন
করল, আপনি আপনার মুদার গোত্রের জন্য আল্লাহর
কাছে বৃষ্টির দোআ করুন।
নতুবা আমরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো'আ করলে, বৃষ্টি হল। তখন (إِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ
قَلِيلًا) আয়াত নাযিল হল। অর্থাৎ, আমরা কিছুদিনের জন্যে তোমাদের থেকে
আযাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। কিন্তু তোমরা বিপদমুক্ত হয়ে গেলে আবার কুফরের দিকে ফিরে
যাবে। বাস্তবে তাই হল, তারা তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল।
তখন আল্লাহ তা'আলা (يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ
الْكُبْرَىٰ إِنَّا مُنتَقِمُونَ) আয়াত নাযিল করলেন। অর্থাৎ যেদিন আমরা প্রবলভাবে
পাকড়াও করব, সেদিনের ভয় কর। অতঃপর ইবনে-মসউদ
বললেন, এই প্রবল পাকড়াও বদর যুদ্ধে হয়ে
গেছে। এই ঘটনা বর্ণনা করার পর তিনি আরও বললেন,
পাঁচটি
বিষয় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ, দোখান তথা ধুম্র, রোম (এর পারসিকদের উপর জয়লাভ), চাঁদ (দ্বিখণ্ডিত হওয়া), পাকড়াও (যা বদরের প্রান্তরে সংঘটিত
হয়েছিল) ও লেযাম (বা স্থায়ী আযাব)। [বুখারী: ৪৮০৯, মুসলিম:
২৭৯৮]
তাফসীরে জাকারিয়া
(১০) অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধূমাচ্ছন্ন হবে।
[1]
[1]
এতে
কাফেরদেরকে ধমক দিয়ে বলা হচ্ছে যে, ঠিক আছে (হে নবী) তুমি ঐ দিনের অপেক্ষা
কর, যখন আকাশে ধোঁয়ার আবির্ভাব ঘটবে।
এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয় যে,
মক্কাবাসীদের
বিদ্বেষমূলক আচরণে বিরক্ত হয়ে নবী করীম (সাঃ) তাদের উপর অনাবৃষ্টির বদ্দুআ করলেন। যার
ফলে তাদের উপর অনাবৃষ্টির শাস্তি নেমে এল। এমন কি খাদ্যাভাবে তারা হাড়, চামড়া এবং মৃত ইত্যাদি খেতে বাধ্য
হয়ে পড়ল। আকাশের দিকে তাকালে কঠিন ক্ষুধা ও দুর্বলতার কারণে তারা কেবল ধোঁয়া দেখত।
পরিশেষে অতিষ্ঠ হয়ে তারা নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে আযাব দূরীভূত হলে ঈমান
আনার অঙ্গীকার করে। কিন্তু এই অবস্থা দূর হয়ে গেলে তারা পুনরায় কুফরী ও অবাধ্যতায় ফিরে
আসে। তাই তো বদর যুদ্ধে তাদেরকে আবার কঠোরভাবে পাকড়াও করা হয়। (বুখারীঃ তাফসীর অধ্যায়)
কেউ কেউ বলেন, কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার দশটি বড় বড়
নিদর্শনাবলীর একটি নিদর্শন ধোঁয়াও।
চল্লিশ দিন যাবৎ এ ধোঁয়া বিদ্যমান
থেকে কাফেরদের শ্বাসরোধ করবে। আর মু’মিনদের অবস্থা সর্দি লাগার মত হবে। আয়াতে এই ধোঁয়ার
কথাই বলা হয়েছে। এই ব্যাখ্যার ভিত্তিতে এই নিদর্শন কিয়ামতের নিকটতম পূর্ব সময়ে প্রকাশ
হবে। আর প্রথম ব্যাখার ভিত্তিতে এটা প্রকাশ হয়ে গেছে। ইমাম শাওকানী বলেন, উভয় ব্যাখ্যাই স্ব-স্ব স্থানে সঠিক।
আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসাবে এ ঘটনা ঘটে গেছে,
যা
সঠিক সূত্রে প্রমাণিত। এ দিকে কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের যে তালিকা বহু সহীহ হাদীসে বর্ণিত
হয়েছে, তাতেও এই ধোঁয়ার কথা উল্লেখ আছে।
কাজেই ওটাও এর পরিপন্থী নয়, বরং তখনও তার আবির্ভাব ঘটবে।
১১ یَّغۡشَی النَّاسَ ؕ هٰذَا
عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
যা মানুষদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে:
এটি যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আল-বায়ান
(যা) মানুষকে ঢেকে নেবে, তা হবে ভয়াবহ শাস্তি। তাইসিরুল
এবং তা আবৃত করে ফেলবে মানব জাতিকে।
এটা হবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। মুজিবুর রহমান
Covering the people; this is a painful torment. Sahih
International
১১.
তা আবৃত করে ফেলবে লোকদেরকে। এটা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
তাফসীরে
জাকারিয়া
(১১) এবং মানবজাতিকে তা আচ্ছন্ন করে
ফেলবে। এ হবে মর্মান্তিক শাস্তি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১২ رَبَّنَا اكۡشِفۡ عَنَّا
الۡعَذَابَ اِنَّا مُؤۡمِنُوۡنَ
(তখন তারা বলবে) ‘হে আমাদের রব, আমাদের থেকে আযাব দূর করুন; নিশ্চয় আমরা মুমিন হব।’ আল-বায়ান
(তখন তারা আরয করবে)- হে আমাদের পালনকর্তা!
আমাদের থেকে শাস্তি সরিয়ে দিন, আমরা ঈমান আনলাম। তাইসিরুল
তখন তারা বলবেঃ হে আমাদের রাব্ব!
আমাদেরকে এই শাস্তি হতে মুক্তি দিন, আমরা ঈমান আনব। মুজিবুর রহমান
[They will say], "Our Lord, remove from us the
torment; indeed, we are believers." Sahih International
১২. (তারা বলবে) হে আমাদের রব! আমাদের
থেকে শাস্তি দূর করুন, নিশ্চয় আমরা মুমিন হব।
তাফসীরে জাকারিয়া
(১২) তখন ওরা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের উপর
হতে শাস্তি দূর কর, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করব।’ [1]
[1]
প্রথম
ব্যাখ্যা অনুপাতে এ কথা মক্কার কাফেররা বলেছে। আর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা অনুপাতে এ কথা কিয়ামতের
নিকটবর্তী সময়ের কাফেররা বলবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৩ اَنّٰی لَهُمُ الذِّكۡرٰی وَ
قَدۡ جَآءَهُمۡ رَسُوۡلٌ مُّبِیۡنٌ
এখন কীভাবে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে, অথচ ইতঃপূর্বে তাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাকারী রাসূল এসেছিল? আল-বায়ান
তারা কীভাবে উপদেশ গ্রহণ করবে? তাদের কাছে তো এসেছে সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী
এক রসূল। তাইসিরুল
তারা কি করে উপদেশ গ্রহণ করবে? তাদের নিকটতো এসেছে স্পষ্ট ব্যাখ্যাকারী
এক রাসূল; মুজিবুর রহমান
How will there be for them a reminder [at that time]? And
there had come to them a clear Messenger. Sahih
International
১৩. তারা কি করে উপদেশ গ্রহণ করবে? অথচ ইতোপূর্বে তাদের কাছে এসেছে স্পষ্ট
এক রাসূল;
তাফসীরে জাকারিয়া
(১৩) ওরা উপদেশ গ্রহণ করবে কি করে? ওদের নিকট তো স্পষ্ট ব্যাখ্যাদাতা
এক রসূল এসেছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪ ثُمَّ تَوَلَّوۡا عَنۡهُ وَ
قَالُوۡا مُعَلَّمٌ مَّجۡنُوۡ ﴾
তারপর তারা তাঁর দিক থেকে বিমুখ হয়েছিল এবং বলেছিল ‘এ শিক্ষাপ্রাপ্ত পাগল’। আল-বায়ান
এখন তারা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে আর তারা বলছে (সে হল এক) পাগল- যাকে শিখিয়ে
দেয়া হয়েছে। তাইসিরুল
অতঃপর তারা তাকে অমান্য করে বলেঃ সেতো শিখানো বুলি বলছে, সেতো এক পাগল। মুজিবুর রহমান
Then they turned
away from him and said, "[He was] taught [and is] a madman." Sahih
International
১৪. তারপর তারা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে
নিয়েছিল এবং বলেছিল, এ এক শিক্ষাপ্রাপ্ত পাগল!
তাফসীরে জাকারিয়া
(১৪) অতঃপর ওরা তাকে অমান্য করে বলেছিল, ‘(সে তো) শিক্ষণপ্রাপ্ত একজন পাগল।’