Loading..

ব্লগ

রিসেট

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৮:১৫ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা ( দ্বিতীয় দিন)

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা 

( দ্বিতীয় দিন)


আজ কোরিয়ার দ্বিতীয় দিন। সকাল ৭টায় ১০০১ নং রুম থেকে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে তৈরি হলাম। ৭:৩০-এর দিকে চলে গেলাম বুফে ব্রেকফাস্টে। অসংখ্য খাবারের মধ্যে আমার পছন্দ ছিল ডিম, পাউরুটি আর বিভিন্ন ফলমূল। নাস্তা শেষ করে আবার রুমে ফিরে এলাম। 


আজ ছিল কোরিয়ায় আমাদের প্রথম ট্রেনিং সেশন। নিজেকে প্রস্তুত করে ৮:২০-এ লবিতে নেমে এলাম আমার রুমমেট ঢাকা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড মুমিনুল ইসলাম স্যারসহ। আস্তে আস্তে আমরা ২০ জন হোটেলের লবিতে একত্রিত হলাম। আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল একটি সুসজ্জিত গাড়ি, যা হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ৮:৩০ মিনিটে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। 


দক্ষিণ কোরিয়ার রাস্তা ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খল। কোথাও কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই, তবুও সবকিছুই নিয়ম মেনে চলছে। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম **Daegu Institute for Creativity & Convergence Education** সেন্টারে। এই ভবনের ৫ম তলায় আমাদের ট্রেনিং শুরু হবে। 


সকাল ৯টায় সুসজ্জিত একটি রুমে আমাদের **Opening Ceremony and Orientation** অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন **Deputy Superintendent of Education, Taehoon Kim** এবং **Daegu Metropolitan Office of Education** এর অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া, ইলিমেন্টারি স্কুলের শিক্ষকবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। 


তারা আমাদের বাংলাদেশি দলকে উষ্ণ স্বাগত জানান এবং প্রশিক্ষণ চলাকালীন কোরিয়ার আইন, সংস্কৃতি, দর্শনীয় স্থানসমূহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আইটি সেক্টর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে সেগুলোর প্রয়োগ বাংলাদেশে করার আহ্বান জানান।


এই প্রশিক্ষণের সবচেয়ে আনন্দদায়ক দিকগুলোর একটি হলো ক্লাসের সুবিধা। এক ঘণ্টার ক্লাসের মধ্যে ৫০ মিনিট সেশন চলে এবং ১০ মিনিটের ব্রেক দেওয়া হয়। এই ব্রেকে আমাদের কফি, বিভিন্ন ধরণের বিস্কুট, কোক, এবং চকলেট পরিবেশন করা হয়। সকালে দু'বার নাস্তা, দুপুরে লাঞ্চ এবং বিকেলে দু'বার নাস্তা দেওয়া হয়, যা প্রশিক্ষণের সময়কে আরও উপভোগ্য করে তোলে।


প্রথম সেশন শুরু হয় **হাঙ্গুল, কোরিয়ান সংস্কৃতি এবং নিরাপত্তা শিক্ষা** নিয়ে। এই সেশনটি পরিচালনা করেন **গিয়ংহে গার্লস মিডল স্কুলের** অত্যন্ত দক্ষ ট্রেইনার **বাগ-সং-হোয়া**। 


কোরিয়ান সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, বাগ-সং-হোয়া প্রথমেই **হাঙ্গুল** নিয়ে আলোচনা করেন। হাঙ্গুল হচ্ছে কোরিয়ার বর্ণমালা এবং কোরিয়ান ভাষার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোরিয়ার দীর্ঘ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জাতীয় পরিচয়। এছাড়াও, কোরিয়ার সমাজব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং সাধারণ আচরণবিধি সম্পর্কেও মূল্যবান তথ্য শেয়ার করা হয়। পৃথিবীর ১৪ তম ভাষা হিসেবে হাঙ্গুল স্বীকৃতি পেয়েছে যদিওবা বাংলা ভাষা পৃথিবীর ৫ম ভাষা হিসেবে স্বীকৃত 


এই ধরনের প্রশিক্ষণ কেবল জ্ঞানার্জনই নয়, বরং কোরিয়ার সংস্কৃতি ও জীবনধারা আরও গভীরভাবে বোঝার একটি সুযোগ হিসেবে কাজ করে।


 হাঙ্গুল:

হাঙ্গুল হলো কোরিয়ান ভাষার বর্ণমালা। এটি ১৫৪৩ সালে চোসন সাম্রাজ্যের রাজা সেজোং (King Sejong) তৈরি করেছিলেন, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে লিখতে এবং পড়তে পারে। হাঙ্গুল মূলত ১৪টি স্বরধ্বনি এবং ১০টি স্বরবর্ণ নিয়ে গঠিত। অন্যান্য লেখন পদ্ধতির তুলনায় হাঙ্গুলকে সরলীকৃত ও বিজ্ঞানসম্মত ধরা হয়, কারণ এটি কণ্ঠের সঠিক উচ্চারণের ভিত্তিতে তৈরি। 


হাঙ্গুলের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি অক্ষর একটি সিলেবিক ব্লকে সাজানো হয়, যা একক অক্ষরের মতো দেখায়। প্রতিটি ব্লক একটি ব্যঞ্জনবর্ণ এবং একটি স্বরবর্ণ নিয়ে গঠিত হতে পারে।


কোরিয়ান সংস্কৃতি:

কোরিয়া দীর্ঘ ইতিহাস ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সমৃদ্ধ একটি দেশ। কোরিয়ান সংস্কৃতির বেশ কয়েকটি প্রধান দিক রয়েছে:


1. **ভাষা ও সাহিত্য**: কোরিয়ান ভাষা কোরিয়া এবং কোরিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। কোরিয়ার ইতিহাসে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রচিত হয়েছে, যা কোরিয়ার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে।


2. **খাদ্য**: কোরিয়ান খাবার সারা বিশ্বে বিখ্যাত। কিমচি, বুলগোগি, বিবিমবাপ, এবং স্যামগ্যেতাং সহ বিভিন্ন খাবার কোরিয়ান রান্নার পরিচিতি বহন করে। খাবারে বেশিরভাগ সময়েই বিভিন্ন সবজি, নুডলস, স্যুপ এবং সস ব্যবহৃত হয়।


3. **সংগীত ও নৃত্য**: কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী সংগীত পাংসোরি (판소리), আরিরাং (아리랑) ইত্যাদি অনেক প্রাচীন ধারা রয়েছে। আধুনিক কোরিয়ান সংগীতের মধ্যে কেপপ (K-Pop) এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।


4. **পরিচ্ছদ**: কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো হানবোক (한복)। এটি কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী উৎসব ও বিশেষ অনুষ্ঠানে পরা হয়। হানবোক এর ডিজাইন সাধারণত ঢিলা ও আরামদায়ক হয়, যা শৈল্পিকভাবে বিভিন্ন রঙ এবং প্যাটার্নের সমন্বয়ে গঠিত।


5. **ধর্ম**: কোরিয়ায় প্রধান ধর্মগুলি হলো বৌদ্ধধর্ম এবং খ্রিস্টধর্ম। তবে কনফুসিয়ানিজমও কোরিয়ান সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে।


6. **চলচ্চিত্র ও নাটক**: কোরিয়ার চলচ্চিত্র ও টিভি ড্রামা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে "কোরিয়ান ওয়েভ" বা "হাল্লিউ" (Hallyu) নামে পরিচিত একটি সাংস্কৃতিক প্রবাহের মাধ্যমে।


এইভাবে হাঙ্গুল ও কোরিয়ান সংস্কৃতি একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত এবং প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত কোরিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।


বিকেলে সেশনে পরিদর্শন করি


**Daegu Institute for Creativity & Convergence Education** একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহরে অবস্থিত। এর মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তা এবং বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বিত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা। প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ করে শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করে।


প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন করে যেখানে প্রযুক্তিগত, সাংস্কৃতিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা দেয়া হয়। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়, যাতে অংশগ্রহণকারীরা কোরিয়ান সংস্কৃতি এবং শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। 


**Daegu Institute for Creativity & Convergence Education** সৃজনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উদ্ভাবনী শিক্ষার ধারণাকে প্রচার করে, যা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়কে একত্রিত করে সমাধান খুঁজতে সাহায্য করে।

মন্তব্য করুন

ব্লগ