সহকারী শিক্ষক
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৯:২৪ অপরাহ্ণ
চোখ শুষ্ক হয়ে যায়? কী করবেন?
‘ড্রাই আই’ কথাটা আজকাল খুব বেশি শোনা যায়। চোখে জ্বালাপোড়া, খচখচ, লাল ভাব, চুলকানি ও হালকা পিঁচুটি জমা হওয়া ড্রাই আই বা শুষ্ক চোখের লক্ষণ। কেন দেখা দেয় এসব লক্ষণ? প্রতিকারের উপায়ই–বা কী?
আমাদের চোখে অনেক গ্রন্থি আছে। চোখকে নিরাপদ রাখাই এগুলোর কাজ। কোনো কারণে গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে বা গ্রন্থিগুলো থেকে পানি নিঃসরণ কমে গেলে চোখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। এ ছাড়া বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চোখের পানি তৈরির ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। চোখের পানির ঘনত্বেও আসে পরিবর্তন। সাধারণত নারীরা, বিশেষ করে মেনোপজের পর এ সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন। কারণ, কিছু হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে তখন চোখের পানি তৈরির ক্ষমতা হ্রাস পায়।
কীভাবে বুঝবেন
চোখ জ্বালাপোড়া, চোখ খচখচ, চোখ লাল, চোখে চুলকানি ও চোখে হালকা পিঁচুটি জমা হওয়া ড্রাই আই বা শুষ্ক চোখের লক্ষণ। এ সময় চোখে একধরনের অস্বস্তি বোধ হয়। আমাদের ধারণা, পিঁচুটি মানেই হলো চোখ ওঠা। বা চোখ চুলকানো মানেই অ্যালার্জি। আসলে তা না–ও হতে পারে। প্রায়ই দেখা যায়, চুলকানির প্রধান কারণ এই চোখের শুষ্ক ভাব। বিশেষ করে যাঁরা কম্পিউটারে বা ডিজিটাল স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় কাটান।
কেন হয় ‘ড্রাই আই’?
চোখের শুষ্কতা দুইভাবে হতে পারে। হয় চোখের পানি বা টিয়ারের উৎপাদন কমে গিয়ে। অথবা টিয়ারের বাষ্পীভূত হওয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে। চোখের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে, ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বয়সজনিত এবং হরমোনের প্রভাবে টিয়ারের উৎপাদন কমে যায়।
চোখের পানি বাষ্পীভূত হওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় মেবোমিয়ান গ্রন্থির নিঃসরণ কমে গেলে। গবলেট সেল বা কনজাংটিভার গ্রন্থির নিঃসরণ কমে গেলে, চোখের পলক ফেলার হার কমে গেলে (সাধারণত ডিজিটাল স্ক্রিনে কাজের সময় এটি হয়) বা বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকলেও এমন হয়।
কীভাবে শনাক্ত করবেন?
শারমার টেস্ট নামে পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন আপনি চোখের শুষ্কতায় ভুগছেন কি না। এই টেস্টে একধরনের ফিল্টার পেপার ব্যবহার করা হয়, যা দৈর্ঘ্যে ৩৫ মিলিমিটার ও প্রস্থে ৫ মিলিমিটার। একে বলা হয় শারমার স্ট্রিপ। এই স্ট্রিপের মাথার দিকের নির্ধারিত অংশ ভাঁজ করে চোখের নিচের পাতার ভেতরে ঢুকিয়ে ৫ মিনিট চোখ বন্ধ রাখতে হয়। তারপর বের করে ভেজা অংশ কত মিলিমিটার, দেখা হয়। ১০ মিলিলিটার বা তার বেশি হলে চোখের পানির পরিমাণ স্বাভাবিক। আর এর কম হলে চোখের পানির ঘাটতি আছে ধরে নিতে হবে। এ ছাড়া এনজাইম অ্যানালাইসিস নামে আরেকটি পরীক্ষা আছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে অনেক সময় চোখের পানি বা টিয়ারে বিদ্যমান এনজাইম লাইসোজাইম ও ল্যাকটোফেরিন ইত্যাদির মাত্রা পরীক্ষা করে ড্রাই আই শনাক্ত করা হয়।
চিকিৎসা কী
শুষ্কতার মাত্রাভেদে বিভিন্ন টিয়ার প্রিপারেশন বিভিন্ন ডোজে ব্যবহার করতে হয়।
১. চোখ স্বল্প মাত্রায় শুষ্ক হলে কৃত্রিম চোখের পানি, অর্থাৎ পলিইথিলিন গ্লাইকল ও প্রোপাইলিন গ্লাইকলের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।
২. মাঝারি তীব্রতার শুষ্ক হলে ১ ভাগ কার্বোক্সিমিথাইল সেলুলোজ বা সিএমসি ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
৩. তীব্র মাত্রার হলে ১ ভাগ হিপ্রোমেলোজ বা অন্যান্য প্রিপারেশন ব্যবহার করতে পারেন।
তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ ব্যবহার করা ঠিক নয়। অবশ্যই একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কৃত্রিম চোখের পানির সুনির্দিষ্ট কোনো ডোজ নেই। দিনে যে কয়েকবার দিলে চোখে আরাম বোধ হয়, সেটাই ডোজ।
৩৪
৬৫ মন্তব্য