Loading..

ব্লগ

রিসেট

১১ জুন, ২০২৫ ০৭:৪১ অপরাহ্ণ

১ম অংশ । হারিয়ে যাচ্ছে পরিবারিক শিক্ষা!! বিলুপ্ত হচ্ছে নৈতিকতা, বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়

আমাদের প্রতিটা অর্জনের পেছনেই থাকে পরিবারের নানা অবদান। আমরা যেখানেই যাই না কেন? বংশ পরম্পরায় এই পরিবারের রক্তই বয়ে চলে আমাদের শিরায় উপ-শিরায়। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক। আমাদের সকল প্রশংসা বা নিন্দা, সকল অর্জনই পারিবারিক শিক্ষার। পরিবার হলো প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা ও মায়া মমতায় ভরা এমন একটি সুসজ্জিত বাগানের নাম যেখানে প্রতিটি সদস্য তার চারিত্রিক গুণাবলী বিকশিত করার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। নৈতিক গুণাবলীসমৃদ্ধ হয়ে তারা পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে করে মোহিত, সুবাসিত। সুষ্ঠু-সুন্দর সমাজ গঠনের প্রাথমিক ভিত্তি পরিবার। পরিবারেই শিশুরা পায় ভবিষ্যৎ জীবনের যাবতীয় দিকনির্দেশনা, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে করণীয়গুলো সম্পর্কে পরিবার-ই আমাদের সঠিক পথ বেছে নিতে সহায়তা করে। পরিবার তাই মানুষের সর্বপ্রথম বিদ্যাপীঠ হিসেবেও পরিগণিত হয়। এটা হচ্ছে এমন এক নিরাপদ আবাসস্থল যা বাইরের যাবতীয় পংকীলতা ও আক্রমণ থেকে মানুষকে রাখে সুরক্ষিত। পবিত্র কুরআনে পরিবারকে দূর্গের সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং পারস্পররিক জীবন যাপনকারী নারী-পুরুষ ও ছেলেমেয়েকে বলা হয়েছে “দূর্গের অভ্যন্তরে সুরক্ষিত লোকগণ”। দূর্গ যেমন শত্রুর পক্ষে দুর্ভেদ্য তার ভেতরে জীবনযাত্রাও সেরকম নিরাপদ, ভয়ভাবনাহীন ও সর্বপ্রকার আশংকামুক্ত। বস্তুত উন্নত ও নৈতিক বোধসম্পন্ন এ পরিবার ও পারিবারিক জীবনই হলো সুস্থ সমাজের রক্ষাদূর্গ। মানুষের বড় সম্পদ হলো মূল্যবোধ। নৈতিক শিক্ষা মূল্যবোধের কারিগর। সৎ ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য নৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য। যার ভেতর নৈতিক শিক্ষার গুণগুলো রয়েছে সে দৃঢ়তার সঙ্গে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে। নিজের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই আদিম যুগে মানুষ একে অন্যের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আর সেখান থেকেই মূলত পরিবারের ধারণার প্রবর্তন ঘটে। তখন থেকেই সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিবার গড়ে উঠেছে। দুঃখের বিষয় মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করে চলা পরিবারের এই বাঁধন ভেঙে যাচ্ছে নানাবিধ ঠুনকো কারণে। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ায় পারিবারিক অস্থিরতা বাড়ছে। সহিষ্ণুতা ও সহমর্মিতা ক্রমেই লোপ পাচ্ছে যা নিশ্চিতভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংক্রমিত হচ্ছে। পরিবার থেকে ছড়িয়ে পড়া এই সমস্যা মানবজীবনে প্রভাব ফেলছে। আধুনিক যুগে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও স্বাবলম্বীতার জোয়ারে যে পারিবারিক বন্ধন আজ ভাঙনের পথে। ফলে বর্তমানে আধুনিক সমাজে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আত্নিক মেলবন্ধন ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। আমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি কিন্তু মানুষ হওয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছি যার মূল কারন পারিবারিক শিক্ষার অভাব। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায় বেশির ভাগ ছোট থেকে বড় পর্যন্ত সবাই নৈতিক শিক্ষার অভাবে শিক্ষা গ্রহন করেও নানা অপর্কমে জড়িয়ে পড়ে কোন না কোন ভাবে। নানাবিধ উন্নয়নের মাঝেও মানুষ মানবতা ভুলে নিজের পশুত্বকে জাগিয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। মনে রাখতে হবে যাপিত জীবনে প্রত্যেক মানুষের সব চেয়েত বেশি, যা প্রয়োজন তা হলো পারিবারিক শিক্ষা। আর এগুলো রপ্ত করতে বা করাতে হলে সর্বপ্রথম পরিবার থেকেই হতে হবে। কারণ সভ্যতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতা বোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্বা-স্নেহ ও পরোপকারী এবং উদার মানসিকতা এগুলো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খুব একটা অর্জন করা যায় না। একাডেমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হওয়া যাবে, মেধাবী হলে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিন দেশেও তার নাম ছড়াবে কিন্তু পরিবার হতে সুশিক্ষা না থাকলে এক সময় সব ম্লান হবে এবং এটা অবধারিত সত্য।


সংগৃহীত

মন্তব্য করুন