প্রভাষক

১১ জুন, ২০২৫ ০৭:৪৭ অপরাহ্ণ
প্রভাষক
বর্তমান সমাজে পরিবারের দায়িত্ববোধ কমে যাওয়ায় এবং এর গুরুত্বকে খাটো করে দেখায় এর প্রতি সদস্যদের আকর্ষণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বাবা-মা-ভাই-বোন কেউই কারো প্রতি মায়া-মমতা, ভালোবাসা যথাযথ দায়িত্ববোধ অনুভব করছে না। বস্তুবাদী এ সমাজের পেছনে ছুটতে ছুটতে বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ছেলেমেয়েরা মুরুব্বীদের পরোয়া করছে না। সামান্য ব্যাপারেই পরিবার ব্যবস্থায় ভাঙ্গন ও বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ন্যূনতম মনুষ্যত্ব ও মানবতা বোধের পরিচয় দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে। পরিবার থেকে পাচ্ছেনা মানুষ হওয়ার প্রকৃত শিক্ষা। আগেকার দিনে পরিবারে মূলত বয়োবৃদ্ধদের হাতেই পরিবারের নানাবিধ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সমস্ত ক্ষমতা ছিল। পরিবারের অন্যান্যরা তাদের কাছেই যেকোন বিষয়ে পরামর্শ নেয়ার জন্য ছুটে যেত। কিন্তু বর্তমান যুগে পরিবারের এই চিত্র একদম বদলে গেছে। এখন পরিবারে কেউ যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বয়োজ্যেষ্ঠদের ওপর ভরসা রাখতে পারেন না। নতুন প্রজন্মের সদস্যদের ক্যারিয়ার গড়তে, চাকরি-বাকরির জন্য দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে কিংবা বাচ্চাদের শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রেও তারা পূর্বের মত ভূমিকা রাখতে পারেন না। ফলে পরিবারে তাদের উপযোগিতা হ্রাস পাওয়ায় সংসারের কর্তৃত্বে পরিবর্তন এসেছে। আমরা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে উন্নত দেশের অনুকরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তা করতে গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের শেকড়কে, আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যকে। এই কঠিন জীবনপ্রবাহে পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে তাদের ভূমিকা আমরা বেমালুম ভুলে যাচ্ছি, অগ্রাহ্য করছি তাদের অস্তিত্বকে। সময়ের আবর্তনে পরিবারের সকলের সাথে মিলেমিশে থাকাটা প্রায়শ-ই কোনো এক উপন্যাসের দৃশ্যের মত মনে হয়। বর্তমান প্রজন্মের অনেকের-ই সৌভাগ্য হয়নি পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে বেড়ে উঠার। দিনে দিনে বিচ্ছেদের হারের মাত্রাতিরিক্ত হার দেখে, পরিবারে ভাঙনের সুর বেজে উঠার সংকেত পেয়ে এ কথা এখন বলার অপেক্ষা রাখে না যে পারিবারিক সুখ-শান্তির জন্য পরিবারের সকলের মিলেমিশে থাকাটা কতটা জরুরি। জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করতে অবশ্যই নৈতিকতার মাধুর্যের উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। নৈতিক শিক্ষার মধ্যে দিয়ে সমাজ জীবনের ন্যায়-নীতি, মানবিক মূল্যবোধ ও মহৎ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে সত্য ও ন্যায় কর্মে সচেতনতার জোয়ার সৃষ্টি করতে হবে। অধ্যবসায় থাকতে হবে। আর মানবজীবনের মূল লক্ষ্য হলো প্রকৃত শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা তথা মনুষ্যত্ব অর্জন। মানুষ নিষ্পাপ হয়ে পৃথিবীতে আসে এরপর বেড়ে উঠে এবং পুরো জীবনই শিক্ষা গ্রহন করে। কেউ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয় আর কেউবা কুশিক্ষা গ্রহন করে। তাই নৈতিক শিক্ষা মানব চরিত্রকে সুশোভিত করে। পরিবার থেকে শিশুর মধ্যে নৈতিকতা বোধ জাগ্রত করতে হবে। সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠার জন্য সুস্থ্য ও স্বাভাবিক পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। অভিভাবকদের আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পর্কে শিশুকে অবহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা বিকাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা হওয়া উচিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। একথা স্বীকার করতেই হবে বিশ্বজুড়ে আজ পারিবারিক বিপর্যয়ের কারণে যে নৈতিক স্খলন দেখা দিয়েছে তা রোধকল্পে পশ্চিমা বিশ্বেও মায়েরা সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেক মহিলারাই তাদের চাকুরী জীবন ত্যাগ করে তাদের শিশুদের লালন-পালনকে দ্বিতীয় কর্মজীবন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কারণ মায়েদের এ ভূমিকার উপর নির্ভর করছে গোটা পরিবারের সামগ্রিক সাফল্য। পরিবার মানুষকে যেকোন লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে, সুস্থির হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষ কখনো নিজের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে পারে না। তাই নিজের ব্যক্তিজীবনের কল্যাণে, মেধা ও মননের বিকাশে পরিবারের ভূমিকা যে অপরিহার্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্মরণ রাখতে হবে্ পারিবারিক শিক্ষা ব্যক্তি আচরণের প্রধান মানদণ্ড।
সংগৃহীত
৫৮
১১৩ মন্তব্য