Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

২৪ জুন, ২০২১ ০৫:৫৩ অপরাহ্ণ

সৌরজগৎ আমাদের পৃথিবী

                                                               সৌরজগৎ আমাদের পৃথিবী

আমাদের বাসভূমি পৃথিবী, অন্য সাতটি গ্রহ এবং আরও কিছু জ্যোতিস্ক সূর্যকে কেন্দ্র করে সবসময় ঘুরছে। সূর্য এবং একে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান সকল জ্যোতিস্ক ও ফাঁকা জায়গা নিয়ে আমাদের সৌরজগত গঠিত। সৌরজগতের বেশির ভাগ জায়গায়ই ফাঁকা। আমাদের এই পৃথিবী দু’ভাবে ঘুরছে। পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর পাক খাচ্ছে আবার সূর্যকে কেন্দ্র করে একবছরে একবার ঘুরে আসছে। পৃথিবীর এ ঘোরার ফলেই দিন-রাত হয়, ঋতু পরিবর্তিত হয়।

সূর্য নয় পৃথিবী ঘোরে

  ষষ্ঠ শ্রেণিতে তোমরা পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্রের কিছুটা পরিচয় পেয়েছ। ভোরবেলায় সূর্যকে পূর্ব দিগন্তেউঠতে দেখা যায়। ধীরে ধীরে এটি আমাদের মাথার উপরের দিকে উঠে আসে। সন্ধায় দেখ সূর্য পশ্চিম দিগন্তেডুবে যায়। রাত শেষে পরদিন ভোরে সূর্যকে আবার পূর্ব দিগন্তেউঠতে দেখ। পৃথিবী থেকে মনে হয় সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে। আগের দিনের মানুষ সেটাই মনে করতেন। তবে বিজ্ঞানীরা এখন প্রমাণ করতে পেরেছেন যে আসলে সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে না। বরং পৃথিবীই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে।
সূর্য ইপৃথিবীর চারদিকে ঘু রছে এটা কেন আমাদের মনে হয়? তোমরা নিশ্চয়ই বাস, লঞ্চ বা রেলগাড়ীতে করে দূ রে বেড়াতে গিয়েছ? তোমরা কি একটা বিষয় খেয়াল করেছ? এগুলো যখন খুব দ্রত যায় তখন পাশের গাছপালা গুলো পেছনের দিকে ছু টছে বলে মনে হয়। আসলে রেলগাড়ী, লঞ্চ বা বাস সামনের দিকে চলছে কিন্ত ুমনে হয় এটি দঁ াড়িয়ে আছে। আর পাশের গাছপালা আসলে স্থির কিন্ত ুমনে হয় এগুলো পেছনের দিকে ছু টছে। পৃ থিবী আর সূ র্যে র ব্যাপারটি তেমনি। পৃথিবী সূর্য কেকেন্দ্র করে ঘুরছে কিন্তুপৃ থিবী থেকে আমাদের মনে হয় সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে।
মানুষ প্রাচীন কাল থেকেই সূর্য, চন্দ্র ও তাঁরা নিয়ে আগ্রহী ছিল। তবে সে সময় মহাকাশের এসব জ্যোতিস্ক পর্যবেক্ষণের যন্ত্রপাতি ছিল না। তাই খালি চোখে যেমনটি বোঝা যেত তেমনটাই তারা বিশ্বাস করতেন। তোমরা হয়তো জেনেছো যে, অ্যারিস্টটল দুই হাজার বছরেরও বেশিসময় আগে বড় বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ছিলেন। তিনিও মনে করতেন পৃথিবীর চারপাশে সূর্য ঘোরে। এখন থেকেপ্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে বিখ্যাত গণিতবিদ ও জ্যোর্তিবিজ্ঞানী টলেমী জোরালোভাবে বলেন যে, পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই সবকিছু ঘুরছে। তার এই মতবাদ দীর্ঘদিন মানুষ বিশ্বাস করেছে। কিছু কিছু জ্যোর্তিবিদ টলেমীর মতবাদে বিশ্বাস করতেন না। কিন্তুতার এই মতবাদকে কেউ ভুল প্রমাণিত করতে পারেননি।
এরপর কোপারনিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩) নামে একজন জ্যোর্তিবিদ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সর্ম্পূণ নতুন মতবাদ নিয়ে আসেন। তিনি পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের বদলে সূর্যকেন্দ্রিক মডেলের প্রস্তাব করেন। তার মডেলের মূল কথা হলো পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। তিনি আরও একটি কথা নতুন কথা বলেন। সেটি হলো পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর আবর্তন করছে। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ও কেপলার কোপারনিকাসের এই মতবাদের পক্ষে প্রমান হাজির করেন। বর্তমানে সূর্যকেন্দ্রিক এই মডেল প্রমানিত এবং বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ তা গ্রহন করেছে।

সৌরজগতের গঠন ও পরিচয়

তোমরা জেনেছ সূর্য একটি নক্ষত্র। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী আরও সাতটি গ্রহ ও অন্যান্য জ্যোতিস্ক ঘুরছে। সূর্য এবং একে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান সকল জ্যোতিস্ক ও ফাঁকা জায়গা নিয়ে আমাদের সৌরজগত গঠিত। সৌরজগতের বেশির ভাগ জায়গায়ই ফাঁকা।
সূর্যকে কেন্দ্র করে আটটি গ্রহ বিভিন্নদূরত্বে থেকে ঘূরছে। নিচে ঘূর্ণায়মান গ্রহগুলোর কক্ষপথ দেখানো হল এবং সৌরজগতের সদস্যদের পরিচয় দেওয়া হলো।
সূর্য:আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য। সূর্য অন্যান্য নক্ষত্রের মতো জ্বলন্তএকটি গ্যাসপিন্ড। এই জ্বলন্ত গ্যাসপিন্ডে রয়েছে মূলতঃ হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস। হাইড্রোজেন গ্যাসের পরমাণু পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে হিলিয়াম পরমাণুতে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়। এ শক্তি তাপ ও আলোকশক্তি হিসেবে সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই সূর্যের কাছ থেকে আমরা তাপ ও আলো পেয়ে থাকি।

সূর্য মাঝারি আকারের একটি নক্ষত্র। তারপরও এটি পৃথিবীর তুলনায় লক্ষ লক্ষ গুণ বড়। সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই পৃথিবী থেকে আমরা সূর্যকে এত ছোট দেখি।
গ্রহগুলোর পরিচয়:সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আটটি গ্রহ। পৃথিবী এমন একটি গ্রহ। গ্রহসমুহ সাধারণতঃ গোলাকাকৃতির। গ্রহগুলোতে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ রয়েছে। কিন্তুগ্রহগুলো নিজেরা শক্তি উৎপাদন করে না। তাই কোন গ্রহ নিজে আলো বা তাপ নিঃসরণ করে না। পৃথিবীথেকে সূর্যের অন্যান্য গ্রহকে উজ্জ্বল দেখালেও এগুলো আসলে সূর্যের আলোতে আলোকিত। গ্রহগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো
বুধ:বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। এতে কোন বায়ু মন্ডল নেই। এটি ৮৮ দিনে সূর্য কে একবার প্রদক্ষিণ করে আসে।
শুক্র:পৃথিবী থেকে সন্ধায় পশ্চিম আকাশে সন্ধাতারা এবং ভোরবেলায় শুকতারা রূপে যে তারাটি দেখা যায় সেটি কোন নক্ষত্র নয়। এটি আসলে সূর্যের একটি গ্রহ যার নাম শুক্র। সূর্যের আলো এ গ্রহের উপরে পড়ে। তাই আমরা একে আলোকিত দেখি। এটি ৫৯ দিনে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।
পৃথিবী:তোমরা হয়তো জান যে, কেবল পৃথিবীতেই জীবনেরজন্য উপযোগী উপকরণ ও পরিবেশ রয়েছে। পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে তৃতীয় গ্রহ।
মঙ্গল:মঙ্গলকে কখনও কখনও লাল গ্রহ বলা হয় কারণ এর পৃষ্ঠ লাল রঙের। এর পৃষ্ঠ ধুলিময় এবং এর খুবই পাতলা বায়ুমন্ডল রয়েছে। মঙ্গলের মাটির নিচে পানি থাকার সম্ভাবনা আছে বলে বিজ্ঞানীরা এখন মনে করেন।
বৃহস্পতি :বৃহস্পতি সূর্যের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এটিতে শুধু গ্যাসই রয়েছে, কোন কঠিন পৃষ্ঠ নেই।
শনি:শনি গ্রহটিও কেবল গ্যাস দিয়ে তৈরি। এটিকে ঘিরে কতগুলো রিং বা আংটা রয়েছে।
ইউরেনাস:ইউরেনাস গ্যাস ও বরফ দিয়ে গঠিত।
নেপচুন :নেপচুনও অনেকটা ইউরেনাসের মতো একটি গ্রহ।
আগে পুটো নামক একটি জ্যোতিস্ককে গ্রহ বলা হতো। কি ন্তু২০০৯ সালে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তনেন যে, এটি একটি ক্ষুদ্র অসম্পূর্ণ গ্রহ।
উপগ্রহ:
তোমরা জেনেছ সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। তেমনি গ্রহগুলোকে কেন্দ্র করে ঘুরছে ছোট ছোট উপগ্রহ। পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। এটি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। উপগ্রহগুলো আকারে গ্রহের চেয়ে অনেক ছোট হয়। এরাও নিজেরা তাপ বা আলো উৎপন্ন করতে পারে না। এরা তাই সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত হয়। সূর্যের আলো চাঁদের পৃষ্ঠে পড়ে প্রতিফলিত হয় বলে আমরা চাঁদকে আলোকিত দেখি।
চাঁদ ২৭ দিন ৮ ঘন্টায় একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। চাঁদ প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের আগ্রহের বস্তু। তোমরা দেখ যে চাঁদ একরাতে হয়তো একেবারেই দেখা যায় না। যাকে আমরা অমাবস্যা বলি। তার পরের রাতে সরু এক ফালি চাঁদ পশ্চিমা আকাশে অল্প সময়ের জন্য দেখা যায়। এই সরু এক ফালি চাঁদ প্রতি রাতে বড় হতে থাকে। দুই সপ্তাহ পর চাঁদকে একটি থালার মতো দেখা যায়। একে আমরা পূর্ণিমা বলি। পূর্ণিমার পরের রাত থেকে চাঁদটি আবার বা ছোট হতে থাকে। এভাবে ছোট হতে হতে আবার দুই সপ্তাহ পর চাঁদকে কোন এক রাতে এক বারের জন্যও দেখা যায়না। এভাবে ২৯ বা ৩০ দিন পর পর আমরা অমাবস্যা ও পূর্ণিমা হতে দেখি। কেন এরকম হয়? এ প্রশ্নের উত্তর তোমরা উপরের শ্রেণিতে জানবে।

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃ তিক উপগ্রহ হলেও পৃ থিবীর চারপাশে ঘুরছে ২৫০০ এর বেশি মানুষ প্রেরিত উপগ্রহ। এদেরকে কৃ ত্রিম উপগ্র হ বলা হয়। এ কৃত্রিম উপগ্র হগুলো বেতার ও টেলিযোগাযোগ, আবহাওয়া এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্র হের জন্য প্রেরণ করা হয়। পৃথিবীর মতো অন্যান্য গ্র হেরও প্রাকৃ তিক উপগ্রহ রয়েছে।

 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি