বিবিসিকে তিনি বলেন, "এটা যে এতো ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে সেটা আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। এই খুলির সবকিছু দেখা যাচ্ছে। এটা সত্যিই দারুণ এক আবিষ্কার!"

আমাদেরসহ অন্যান্য মানব প্রজাতির মাথার খুলির সঙ্গে তুলনা করলে এই খুলিটি আকারে বেশ বড়। তবে মস্তিষ্কের আকার প্রায় একই ধরনের।

বলা হচ্ছে, এই খুলিটি প্রাপ্তবয়স্ক এক পুরুষের।

খুলি দেখে বোঝা যায় ড্রাগন ম্যানের চোখের কোটর বিশাল ও চতুর্ভুজ আকৃতির, ভ্রুর খাঁজ বিশাল আকারের, প্রশস্ত মুখ এবং বড় আকারের দাঁত।

হেবেই জিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কিয়াং জি বলেন, এখনও পর্যন্ত মানুষের মাথার খুলির যতো জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে সম্পূর্ণ।

"অন্যান্য সব মানব প্রজাতির চেয়ে এটি একেবারেই আলাদা," বলেন তিনি।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, ড্রাগন ম্যান ছিল খুব শক্ত সামর্থ্য মানুষ এবং কর্কশ। তবে তারা কিভাবে ও কেমন করে বসবাস করতো সে বিষয়ে খুব কমই জানা গেছে। কারণ যে এলাকায় এই খুলিটি পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকে এটিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।

এর অর্থ এই খুলি যেখানে পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক দিক সম্পর্কে কিছু জানা যায় নি। যেমন- সেখানে পাথরের তৈরি কী ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করা হতো এবং ওই এলাকায় সাংস্কৃতিক আরো কী ধরনের উপাদান ছিল সেসব বিষয় অজ্ঞাত রয়ে গেছে।

নতুন প্রজাতির মানবের এই খুলিটি পাওয়া গেছে ১৯৩৩ সালে। হারবিনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত সঙ্গুয়া নদীর উপর একটি সেতু তৈরির সময় একজন নির্মাণ শ্রমিক এর সন্ধান পান।

যে সময় এই খুলিটি পাওয়া যায় সে সময়ে এই শহরটি ছিল জাপানের অধীনে।

চীনা শ্রমিকটি মনে করেছিলেন, এই খুলির সাংস্কৃতিক মূল্য অনেক এবং একারণে তিনি এটিকে লুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান যাতে খুলিটি জাপানিদের হাতে চলে না যায়।

মাথার খুলি

ছবির উৎস,KAI KENG

ছবির ক্যাপশান,

যেভাবে মানব প্রজাতির বিবর্তন ঘটেছে - বাম থেকে ডানের মাথার খুলি দিয়ে বিজ্ঞানীরা সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছেন।

নিজের বাড়ির কূপের একেবারে তলায় তিনি খুলিটি লুকিয়ে রাখেন। সেখানে এটি ছিল প্রায় ৮০ বছর। লোকটি মারা যাওয়ার আগে তার পরিবারের সদস্যদের এই খুলির কথা বলে যান এবং পরে তাদের মাধ্যমেই এটি বিজ্ঞানীদের হাতে এসে পৌঁছায়।

এর আগেও চীনে প্রাচীন কালের আরো কিছু মানব দেহাবশেষের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। ড্রাগন ম্যান এরকমই সবশেষ আবিষ্কার।

আগে যেসব জীবাশ্ম পাওয়া গেছে সেগুলোকে আলাদা করে শ্রেণীভূক্ত করা কঠিন ছিল।

এর আগে যেসব জীবাশ্ম পাওয়া গেছে সেগুলি দালি, জিন্নিওশান, হুয়ালংডং এবং তিব্বতীয় অঞ্চলের।

এসব দেহাবশেষ হোমো স্যাপিয়েন্স, নিয়েন্ডারথালস কিম্বা ডেনিসোভান্স অথবা একেবারেই ভিন্ন কোন প্রজাতির মানবের কীনা সে বিষয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছে।

রাশিয়ার ডেনিসোভা গুহায় ৩০/৫০ হাজার বছর পুরনো একটি আঙ্গুল পাওয়া গিয়েছিল। সেই আঙ্গুলের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই ডেনিসোভান্স প্রজাতি সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাওয়া যায়।