Loading..

প্রকাশনা

১৪ জুলাই, ২০২১ ০৯:৪৬ অপরাহ্ণ

** মক্তব ভিত্তিক শিক্ষা উন্নয়ন করি সামাজিক অবক্ষয় রোধ করি **
** মক্তব ভিত্তিক শিক্ষা উন্নয়ন করি সামাজিক অবক্ষয় রোধ করি **
টুপি-পাঞ্জাবি পরে দল বেঁধে মক্তবে যাওয়ার দৃশ্য আগের মতো নজরে পড়ে না। মুসলমানদের ঐতিহ্যের স্মারক মক্তবগুলোর এখন মৃতপ্রায় অবস্থা। ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি খুবই নগণ্য। অভিভাবরাও এ ব্যাপারে বড্ড উদাসীন। মক্তবে শিক্ষা দানে নিয়জিত ইমাম সাহেব, মোয়াজ্জিন সাহেব বেশ উদাসীন মক্তবে ছাত্র পড়তে বলে আর সে তার মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেন। তারা তাদের দায়িত্বকে সঠিকভাবে পালন করছে না। এমন মক্তব আছে ইমাম সাহেব ফজরের নামাজ পরে ঘুমিয়ে থাকেন ছাত্র/ ছাত্রী এসে ঘুরে বাড়ী চলে যান। এমনকি মসজিদ আছে ইমাম, মোয়াজ্জিন আছে কিন্তু মক্ত হচ্ছেনা এলাকার এমন কোন সচেতন নাগরিক নাই যে ইমাম ও মোয়াজ্জিনকে জিজ্ঞেস করবে মক্তব হচ্ছে না কেন? আপনি আমি ইসলামের সকল মৌলিক ধারণা গুলো কিন্তু এই মক্তব থেকে পেয়েছি। যেমন নামজ পড়া,রোজা রাখা,যাকাত আদায়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য,সৃরা ফিল থেকে সূরা ফাতিহা পযর্ন্ত সকল সূরা, খাবারের প্রথম ও খাবারের শেষে দোয়া, ইসলামের পরিচয়, আল্লাহ তায়ালার পরিচয়, নাপাকী থেকে কিভাবে পবিত্র হব, ইত্যাদি বিষয় সহ আরও অসংখ্য জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম এ মক্তব । আমাদের ও মুসলমান মা-বাবারা অনুধাবন করতে না পারলেও ইহুদি-খ্রিস্টানরা শিশু-কিশোরদের এ প্রাতঃকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাব গভীরভাবে লক্ষ করেছে। তারা লক্ষ্য করেছে শিশু মানস উর্বর মাটির মতো। যে বীজই তাতে বপন করা হবে, তা থেকে উন্মেষ ঘটবে প্রাণবন্ত বৃক্ষের। তাই শিশুদের কচি মনে ইসলামী মূল্যবোধের পরিবর্তে বিজাতীয় কালচারে অভ্যস্ত করতে তারা মরিয়া।
মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ পাক নাজিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআন। এ কোরআন বিশ্বমানবতার কল্যাণ ও মুক্তির সনদ। বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা বিধানের সংবিধান। এই গ্রন্থের ধারক-বাহক হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের মনোনীত করেছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘আমি আমার বান্দাদের থেকে তাদেরই এ কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছি, যাদের পছন্দ করেছি।’ (সূরা ফাতির : ৩২)। সুতরাং কোরআনের উত্তরাধিকারী হিসেবে এর তেলাওয়াত ও জ্ঞানার্জন করা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘যাদের আমি কিতাব দান করেছি, আর তারা এর যথাযথ তেলাওয়াত করে; তারাই এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী।’ (সূরা বাকারা : ১২১)। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে কোরআন শিখে ও অন্যকে শিখায়।’ (বোখারি : ৫০২৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘কোরআনের একটি হরফ পড়লে একটি নেকি হয়। আর একটি নেকি দশ নেকির সমান।’ (বোখারি : ৬৪৬৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুই ব্যক্তির সঙ্গে হিংসে করা যায়। এক. যাকে কোরআানের এলেম দেয়া হয়েছে আর সে রাতদিন তেলাওয়াত করে। দুই. যাকে সম্পদ দেয়া হয়েছে আর তা সে রাতদিন আল্লাহর রাস্তায় দান করে।’ (বোখারি : ২৭৭৩)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর (সা.) বলেন, ‘মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সব আমলের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের ধারাবাহিকতা জারি থাকে। এক. সদকায়ে জারিয়া। দুই. কোনো এলেমের মাধ্যম রেখে যাওয়া, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে। তিন. নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে তার জন্য দোয়া করবে।’ (মুসলিম : ১৬৩১)।
যে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত হয়, সে ঘরে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হয় বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন লোকেরা কোনো ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব কোরআন পাঠ করে, তখন তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে। ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে নেয় এবং স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের মজলিসে তাদের আলোচনা করতে থাকেন।’ (মুসলিম : ২০৭৪)। কোরআন তেলাওয়াতের পারলৌকিক কল্যাণ অফুরন্ত। কোরআন শিক্ষা করা, মুখস্থ করা ও তাতে দক্ষতা লাভের ফজিলত সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে এবং তা মুখস্থ করবে এবং বিধি-বিধানের প্রতি যতন বান হবে, সে উচ্চ সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে অবস্থান করবে। আর যে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কোরআন পাঠ করবে, তার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবে সে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে।’ (মুসলিম : ২৪৬৫)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে কোরআন তার পাঠকের ব্যাপারে সুপারিশ করবে। এবং তার সুপারিশ কবুল করা হবে। কোরআন সত্যবাদী আর তার সততা কবুল করা হয়েছে। যে কোরআনকে সামনে রাখবে তাকে কোরআন জান্নাতে পৌঁছাবে। আর যে পেছনে রাখবে, কোরআন তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।’ (মু’জামুল কাবির : ১০৪৫০)। কেয়ামতের দিনে সবচেয়ে বেশি মর্যাদাশীল হবেন কোরআনের পাঠক। সেদিন বলা হবে, ‘পড়, যেভাবে দুনিয়াতে পড়তে। তোমার পড়া যেখানে শেষ হবে সেখানেই হবে তোমার স্থান।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৯২)। কোরআন তেলাওয়াতের এই সম্মান শুধু তেলাওয়াতকারী নিজেই লাভ করবে না, মা-বাবাকেও দেয়া হবে অভূতপূর্ব সম্মান। হাদিসে নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে ও তদনুযায়ী আমল করে, কেয়ামতের দিন তার মা-বাবাকে নূরের মুকুট পরানো হবে, তার জ্যোতি হবে সূর্যের জ্যোতি অপেক্ষা প্রখর। সুতরাং কোরআনের আমলকারীর ব্যাপারে তোমাদের কী ধারণা?’ (আবু দাউদ : ৩৬৭৫)।
এসব হাদিস থেকে সহজেই কোরআন শিক্ষার গুরুত্ব অনুমিত হয়। বিশেষ করে নিজের ছেলেমেয়েকে কোরআন শেখানোর গুরুত্ব ও মর্যাদা অন্যন্য। এ জন্য প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মক্তব চালু করা প্রয়োজন। এ মক্তব ব্যবস্থা শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে। বিখ্যাত দার্শনিক আল্লামা ইকবাল মক্তব সম্পর্কে যা বলেছেন, তার সারমর্ম হলো, যদি এ মক্তব, মাদরাসা না থাকত, তাহলে মুসলমানের সন্তানরা ইহুদি-খ্রিস্টানের অন্ধ অনুসরণে নিজেদের পরিচয়টুকুও হারিয়ে ফেলত। মুছে যেত মুসলমানের আদর্শ, স্বকীয়তা ও আত্মগৌরব। আসুন সকলে সম্মিলিত ভাবে আমাদের মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করি। নিয়মিত মসজিদের মক্তবে ইমাম সাহেব, মোয়াজ্জিন সাহেব অথবা শিক্ষক মহোদয় তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কিনা খবরাখবর নেই। আমাদের সমাজের কিশোর কিশোরীদের নৈতিক অবক্ষয়ের মূল কারণ হচ্ছে তাদের মাঝে ধর্মীয় শিক্ষার অভাব। আসুন আমাদের ভবিষ্যত প্রযর্ম্মকে নৈতিক মান উন্নয়ন করে একটি সুস্থ সমাজ ও রাষ্ট্র ঘটনে ভূমিকা রাখি।
May be an image of 1 person
Aminul Islam, Saleh Akram and 1 other

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি