Loading..

খবর-দার

১৭ জুলাই, ২০২১ ০২:৩১ পূর্বাহ্ণ

টোকিও অলিম্পিকের কূটনৈতিক বিপর্যয়

অলিম্পিকের আয়োজনকে ঘিরে স্বাগতিক দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোকে স্বাভাবিক প্রবণতা হিসেবেই গণ্য করা হয়। বিশেষ কোনো দেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো মিটিয়ে নেওয়ার জন্য খেলাধুলার এই বড় আসরকে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য বিভিন্ন দেশের নেতাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর ফাঁকে আমন্ত্রিত দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে নেন স্বাগতিক দেশের নেতারা। ফলে খেলাধুলার উৎসবের বাইরেও রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অলিম্পিক।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আসছে টোকিও অলিম্পিকেও বিভিন্ন দেশের নেতাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। জাপানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদেশ যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, ফলে জাপানের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হয়তো টোকিও ভ্রমণ করতে রাজি হবেন। কিন্তু এতে বড় ধাক্কা খেল জাপান। কারণ, বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাইডেন জাপান ভ্রমণে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু এতে হাল ছাড়তে চায়নি জাপান। দেশটি চাইছিল, অন্তত মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন যেন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। জাপানের সেই আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। ফার্স্ট লেডি এখন টোকিও ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র যে ঘনিষ্ঠ মিত্র, তা দেখাতে বাইডেনকে টোকিও সফরে চেয়েছিল জাপান। অন্যদিকে অলিম্পিক আয়োজনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশ চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছিল দেশটি। কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই দুই প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের বেশ অবনতি হয়েছে জাপানের।

কিন্তু এ ক্ষেত্রেও খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে জাপান। চীন জানিয়ে দিয়েছে যে জাপানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং টোকিও অলিম্পিক যোগ দেবেন না। এর বদলে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী সুন চুন-লানকে টোকিও পাঠানো হবে। ফলে অলিম্পিককে পাশে রেখে চীনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের সম্ভাবনা এখন আর নেই। সুন চুন-লানের জাপান সফর অনেকটাই হবে আনুষ্ঠানিকতামাত্র

অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের সম্ভাব্য জাপান সফর নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা বিরাজমান। এর আগে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছিল, টোকিও অলিম্পিক উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মুনের জাপান সফর নিয়ে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সফর চূড়ান্ত করে নেওয়ার সেই প্রক্রিয়ায় আলোচনার বিষয়বস্তু কী হবে, তা নিয়ে অচলাবস্থা এখনো দূর হয়নি।

জাপান চাইছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োগ করায় কোরীয় শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে ধরে রাখা কঠোর অবস্থান থেকে সিউল যেন সরে আসে। এ জন্য মুন জে ইনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়াও চাইছে জাপান যেন অতীত ইতিহাসের ভুলত্রুটি মেনে নেয়। এ রকম টানাপোড়েনের মধ্যে এখনো ঝুলে আছে সফরের ভবিষ্যৎ। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, অলিম্পিক উপলক্ষে টোকিও অবস্থানের সময় অমীমাংসিত বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনার সুযোগ না পাওয়া গেলে কেবল খেলাধুলা উপভোগ করার জন্য টোকিও ভ্রমণে যেতে তিনি নারাজ।

এদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অলিম্পিক উপলক্ষে মুন জাপান সফরে এলেও আনুষ্ঠানিক পথ ধরেই কেবল আলোচনায় তিনি মিলিত হবেন। গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ রকম মন্তব্যও করেন যে কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুসরণ করে মুনের প্রতি ভদ্র আচরণ প্রদর্শন করা হবে খুবই স্বাভাবিক। দুই পক্ষের মধ্যে এমন চলমান টানাপোড়েনের মধ্যে মুন আসলেই অলিম্পিক উপলক্ষে টোকিও সফর করবেন কি না, সেদিকে এখন দৃষ্টি আকৃষ্ট হচ্ছে।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ টোকিও অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে পর্যন্ত জাপান বলে আসছিল, অলিম্পিক উপলক্ষে সারা বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশের নেতা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টোকিওতে স্বাগত জানানো হবে। তবে করোনা সংক্রমণ এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হওয়ায় অনেক দেশের নেতারা জাপানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই তালিকায় একমাত্র ব্যতিক্রম ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাঁখো। তবে তিনি মূলত জাপানে আসছেন ২০২৪ সালের অলিম্পিকের স্বাগতিক দেশ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এখন বলছেন, অলিম্পিক উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যেসব নেতা জাপান সফর করবেন, সেই তালিকা একেবারে শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত করে নেওয়া হবে। তাঁরা প্রত্যাশা করছেন, ২০১৬ রিও অলিম্পিকের মতো সফল হবে এবারের অলিম্পিক। রিও অলিম্পিক চলাকালে ৪০টির বেশি দেশের নেতারা ব্রাজিল সফরে গিয়েছিলেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভাইরাসের দাপট থাকায় সেই লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে জাপানের জন্য।