প্রভাষক
২০ জুলাই, ২০২১ ০৭:০৩ পূর্বাহ্ণ
যাঁরা যেমন খাবেন
যাঁরা যেমন খাবেন
ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ
হলো খাবার। কোরবানির ঈদে মূল আকর্ষণ থাকে গরুর মাংসের বিভিন্ন খাবারে। সেই সঙ্গে
থাকে মুখরোচক বিভিন্ন উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার। দু-এক দিন বেশি খেলে তেমন ক্ষতি
নেই। তবে খাওয়া উচিত একটু রয়েসয়ে। তেল-চর্বিযুক্ত খাবার না খেয়ে ঈদের সকাল শুরু
করুন সেমাই বা ফিরনির মতো হালকা খাবার দিয়ে। নাশতার ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরে অল্প
পানি পান করুন। তারপর নামাজ সেরে অন্যান্য খাবার খেতে পারেন।
বোরহানি খান
অনেকেই মাংস ও ভারী খাবার খাওয়ার পর কোমল পানীয়র দিকে ঝুঁকে পড়েন। আপনি যত
মিষ্টিজাতীয় খাবার খাবেন, এই জাতীয় খাবারের প্রতি আপনার আগ্রহ ততই বাড়তে থাকবে।
তাই কোমল পানীয়র পরিবর্তে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ লেবুর শরবত বা টকদই দিয়ে বানানো
হালকা মসলাযুক্ত বোরহানি খেলে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার পাবেন।
আঁশযুক্ত খাবার খান
অনেকেই আছেন, যাঁরা প্রচুর পরিমাণে মাংস খেয়ে ফেলেন। কিন্তু আঁশযুক্ত খাবার,
যেমন: সালাদ বা শাকসবজির দিকে নজর দেন না অথবা শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান
করেন না। এসব কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে যাঁরা
পাইলসজাতীয় রোগে ভুগছেন, তাঁদের পায়ুপথ ফেটে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে।
আলসারের সমস্যায়
যাঁদের আলসারের সমস্যা আছে, তাঁরা বেশি গরম, শক্ত, ঝাল এবং তেল, চর্বি ও মসলাযুক্ত
খাবার এড়িয়ে চলুন। সেই সঙ্গে মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার,
যেমন: সালাদ, শসার রায়তা, মৌসুমি ফলের রস পান করতে পারেন। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের
হাত থেকে রক্ষা পেতে ইসুবগুলের ভুসি খেতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের ব্যথা
বেড়ে গেলে অমিডন, অ্যান্টাসিড, ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমোপ্রাজল–জাতীয়
ওষুধ সেবন করতে পারেন।
আই বি এস সমস্যায়
যাঁদের আই বি এস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম আছে, তাঁরা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে
চলুন। অতিমাত্রায় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁরা এখন থেকে
ঘরের তৈরি কম ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করুন ও
কায়িক পরিশ্রম বাড়িয়ে দিন। যাতে ঈদের দু-এক দিন খাবারের হেরফের হলেও ওজন ঠিক
রাখা যায়।
মধ্যবয়স্কদের জন্য
মধ্যবয়স্ক অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম
করতে পারেন না। এ থেকে পেটে গ্যাস, জ্বালাপোড়া ও পেট খারাপসহ নানা রকম সমস্যার
সম্মুখীন হতে পারেন। এ ধরনের খাবার কম খাবেন।
কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি
লিভারে
যাঁদের কোলেস্টেরল বেশি এবং যাঁরা ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত, তাঁরা অবশ্যই তৈলাক্ত
খাবার ও লাল মাংস কম খাবেন। নিয়ম ভেঙে দু-এক দিন মাংস খেলে শরীরের খুব বেশি ক্ষতি
হবে, তা নয়। তবে সুস্থতার কথা মাথায় রেখে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে দিনশেষে
আপনিই ভালো বোধ করবেন।
ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে
ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীরা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে পারবেন না, তা নয়।
তবে কতটুকু খেতে পারবেন তার পরিমাণ রয়েছে। সেটি জেনে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাবেন।
কারণ, ডায়াবেটিস রোগীদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত
হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শে রোগ ও শরীরের চাহিদা অনুয়ায়ী
খাদ্যতালিকা গুছিয়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সচেতনতা গড়ে তুলুন। যাঁরা কিডনি রোগে
ভুগছেন, তাঁদের প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার পরিমিত খেতে হবে।
ইউরিক অ্যাসিডে
যাঁদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রেও লাল মাংস খাওয়ার
ব্যাপারে বিধিনিষেধ আছে। গরু বা খাসির মাংস তাঁরা কম খাবেন।
করোনার এ সময়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের প্রতি জোর দিতে
হবে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো। ঈদ এবং ঈদ-পরবর্তী সময়ে
ভালো থাকতে সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ব্যাপারে যত্নশীল হবেন।