Loading..

প্রকাশনা

২০ জুলাই, ২০২১ ০৭:৪৯ অপরাহ্ণ

ভেতরের পশুটাকে কুরবানী করে আসুন আবার মানুষ হয়ে উঠি

 আলহামদুলিল্লাহ গতকাল কুরবানীর গরুটা কিনলাম।না, কতবড় গরু কিনেছি বা কত টাকা দিয়ে কিনেছি তা লিখতে বসিনি।গরু কিনতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হল তাই নিয়ে একটু লেখার চেষ্টা।শরৎ বাবুর লেখা ছোট গল্প মহেশ আমরা অনেকেই পড়েছি।আমরা যেই গরুটা কিনেছি তা হয়ত মহেশের মত দারিদ্রে পিষ্ট হয়নি তবে অনেক ভালবাসা পেয়েছে গফুর মিয়ার মত গ্রামের একজন সহজ সরল কৃষকের। আমার গল্পে লেখাপড়া না জানা গ্রাম্য মেয়ে আমেনার চরিত্র না থাকলেও আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্মেসী বিভাগে পড়ুয়া মাহাদী নামের এক তরুন।লেখালেখি আমার তেমন একটা যায়না।তবে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত মাহাদীর পশু প্রেম আমার মনে দাগ কেটেছে সেই বিষয়টা ব্যাক্ত করতেই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।

এবারই প্রথম গরু কিনতে গ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি এ যেন কলা বেচা আর রদ দেখার মত,গরুও কেনা হবে একটু ঘোরাঘুরিও হবে।  কিন্তু বাগরা দিল বৃষ্টি, এদিকে ঈদের বাকি দুইদিন গরুত কিনতেই হবে।শেষের দিনের অপেক্ষা করা আমার অনেকটা চাপ মনে হয় তাই কাজটা আজই সারতে হবে। রেইনকোর্ট গায়ে চড়িয়ে দুই বন্ধু তাই পাড়ি জমালাম দুই বন্ধু মোটর বাইকে চড়ে,লক্ষ্য কালিগন্জের জাঙ্গালিয়া গরুর হাট।হাল্কা বৃষ্টিতে যাত্রাটা মন্দ ছিলনা, মরার উপর খাড়া ঘা হয়ে দাড়াল  যানজট।যাইহোক অবশেষে যানজট ঠেলে প্রায় আাড়াই ঘন্টার জার্নি শেষে গন্তব্যের দেখ পেলাম। বৃষ্টি কিন্তু থেমে থেমে হানা দিতে ভূলছেনা। 

হাটের মুখে ঢুকতেই যেন বাগরা দিল কাদা মাটি।এমনিতেই গরুর হাটে কাদায় কাদায় গাদাগাদি তরউপর ছিপছিপে বৃষ্টি, সব মিলিয়ে লেজে গোবরে অবস্থা।আগেই দুই বন্ধু মিলে ঠিক করলাম বেশি ঘোরাঘুরি করা যাবেনা গরু পছন্দ হলে অল্পতেই সারতে হবে।আল্লাহর কি রহমত যেই কথা সেই কাজ। লাল রংয়ের একটা গরু মনে ধরে গেল।বিক্রেতা কাকাকে  দেখেই কেন যেন মনে হল গরুটা নেওয়া যাবে।দামদর ঠিক হতেই কাকা তার ছেলেকে দেখিয়ে বল্লেন তার কাছে টাকা বুঝিয়ে দিতে।তারপর কাকা উদাও। জিজ্ঞাসা করলাম মুরব্বী কই গেল? উত্তরে ছেলেটি বল্ল আপনারা গরু নিয়ে যাবে এটা বাবা সইতে পারবেননা তাই বাড়ি চলে গেছেন। বুঝলাম কাকা গরুটা খুব যত্ন করে পালছে।কিছু টাকা ঘাটতি থালায় বন্ধুকে পাঠালাম টাকা তুলতে। এবার ছেলেটাকে জিজ্ঞসা  করলাম তুমি কি কর? উত্তরে সে বল্ল লেখাপড়া করে তারপর কেমন যেন নিরব হয়ে গেল। আর যেন ওর ভেতর থেকে কথা বের হবেনা তাই আমিও আর কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেল্লাম।ওকে দেখে আমার মনে হল সবে স্কুল পেড়িয়ে হয়ত কলেজে পা রেখেছে। অনেক সময় চুপচাপ থেকে ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করলাম গরুটা কি খায়।নিরবতা ভেংগে ছেলেটা এবার বলে উঠল ওকে আমি সায়েন্টিফিক মেথডে খাদ্য তৈরী করে খাইয়েছি।ভূট্ট যখন মিল্কি হয় তা থেকে সাইলেজ করে খাইয়েছি। জানেন ও যখন ছোট ছিল, খুব রোগা ছিল।এজন্য আমরা সব সময় ওকে সাথে সাথে রাখতাম, মুখে তুলে খাওয়াতাম।রাতে ঘরে এনে নিজেদের সাথে রাখতাম। আমার আব্বা ওকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিল। করোনার কারনে আমার ভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমি বাসায় ফিরে ওর স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নেট থেকে অনেক জার্নাল পড়ে  ঐ অনুযায়ী র যত্ন শুরু করি।আমহ কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। মনে হচ্ছিল ছেলেটির কথার মাঝে কেমন যেন একটা দরদ আছে।যেভাবে গরুটার বর্ননা দিচ্ছিল মনে হচ্ছিল যেন নিজের  রক্তের সম্পর্কের কারও বর্ননা দিচ্ছে। ছেলেটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসীতে পড়ছে,অথছ আমি বেশ স্পষ্টই বোঝতে পারছিলাম গরুটার কথা বলতে বলতে ওর চোখের কোনায় জল জমা হয়ে আসছে কন্ঠটাও কেমন যেন ভারী হয়ে আসছে।

এতক্ষনে টাকা নিয়ে বন্ধু আসাদ চলে এসেছে। গরুটার দিকে তাকিয়ে এখন আমারও কেমন মায়া হচ্ছে। কত আদর করে ওরা পেলেছে গরুটাকে।গরুটাও যেন তার প্রতিদান দিচ্ছে নিজেকে বিকিয়ে।সেও যেন আপনজন থেকে বিদায় নিতে গিয়ে অশ্রু জলে সিক্ত হচ্ছে।এ কেমন জটিল সম্পর্ক মানুষ আর একটা পশুর সাথে!  হাসিল সেরে গরু নিয়ে হাট থকে বের হয়ে গরু গাড়িতে তোলার আগ মুহূর্তে একটা ষোল সতের বছরের ছেলে দৌড়ে এস গরুটাকে টেনে ধরল।আমি কিছু বলার আগেই মাহাদী বলে উঠল ও আমার ছোট ভাই।আমি নাম জিজ্ঞাসা করলে ছেলেটা কান্না জড়িত কন্ঠে কি বল্ল যেন বুঝতে কষ্ট হল।গরুটার জন্য ওদের দুই ভাইয়ের আবেগ দেখে আার মনটাও কেমন হয়ে গেল।কোরবানীর প্রতিটা পশুর পেছনেই হয়ত এমন অনেক গল্প লুকিয়ে আছে।আসুন আমরা পশু কোরবানীর মধ্য দি নিজের ভেতরের পশুত্বকে কোরবানী করি মনের পশুটাকে কোরবানী করে আবার আমরা মানুষ হয়ে উঠি।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি