Loading..

ম্যাগাজিন

২৮ জুলাই, ২০২১ ০৬:৪৫ অপরাহ্ণ

আমার প্রথম ফেনী শহর দর্শন--মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন
 ফেনী শহর দর্শন
+++++++++++++++
স্মৃতি মানুষকে অতীতে নিয়ে যায়,স্মরণ করিয়ে দেয় হারিয়ে যাওয়া দিনের কথা,আনন্দ পাওয়া যায় নাতিপুতিদের সে সব কথা বলে। তেমনিভাবে আমার মনে পড়ছে প্রথম ফেনী শহর দর্শনের কথা। বয়স তখন ৮/৯ হবে। একদিন ভোরে বাড়ির দরজায় গরুর গাড়ী হাজির। থরেথরে গাড়ীতে সাজানো হচ্ছে বাদামের বস্তা। বস্তার স্তুপ যেন ছোটখাটো একটা পাহাড়। সামনে গাড়োয়ান বসার জন্য সামান্য জায়গা ফাঁকা, গাড়ির পেছন থেকে তাকে দেখা যায় না। এ গাড়ি যাবে আমাদের মহদিয়া থেকে ফেনী তাকিয়া রোড়ে। সেখানে এ বাদাম বিক্রি হবে। সাথে যাবে আমার চাচাত ভাই হোসেন আহমদ। আমি তখন বায়না ধরলাম," আমিও যাব"। শুধু বায়না নয়, রীতিমতো কান্নাকাটি। ভাই রাজি হলেন এক শর্তে "হাঁটতে পারবে তো?"সাহস করে বললাম পারবো! পান্তা ভাত খেয়ে গরুর গাড়ির পেছনে পেছনে হাঁটা শুরু । দূরত্ব হবে প্রায় ১৪/১৫ কিলোমিটার এর মত। প্রায় পুরো পথটাই মাটির রাস্তা। খালের পাড়ে দিয়ে যেতে হবে। ডাল বেপারীর দোকান, সোম্বার্যা বাজার, রাজার হাট, ঠাকুর হাট পার হয়ে সিলোনিয়ায় গিয়ে পাওয়া গেল পিচডালা পাকা সড়ক ট্রাংক রোড। গরুর গাড়ির পিছনের গলুই ধরে আমার পথচলা। গাড়োয়ান এর হাঁকডাক আর গাড়ির কেঁকুরুত-কেঁকুরুত শব্দের ছন্দে আমার পথচলা ভালোই লাগছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল যখন পিচডালা রাস্তায় আসলাম। কারণ রোদ্রের তাপে পিচডালা রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটতে কস্ট হচ্ছিল। অবশ্য হোসেন ভাই বাড়িতে বাবাকে কথা দিয়েছিলেন, পাকা রাস্তায় এলে রিক্সা নিবেন। কিন্তু তিনি সে কথা রাখলেন না, বরং আমাকে বুঝ দিয়েছিলেন এই বলে যে, রিক্সায় উঠলে আশপাশের কোন দৃশ্যই দেখা যাবে না। আমি তা মেনে নিয়েছিলাম। এতে যে আমার পায়ে ২/৪টা ফোসকা পড়ে নাই তা নয়, যা বাড়িতে আসার পর রাতে টের পেয়েছি। অবশ্য তিনি ২/১ বার আমাকে গাড়ির পেছনে ঘলুই এর উপর বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তা আমার ভালো লাগে নাই। যাক, আমরা ভালোভাবেই ফেনী তাকিয়া রোড়ে এসে দোকানে দোকানে বাদামের সেম্পল দেখিয়ে জনৈক সুরেন্দ্র বাবুর নিকট বাদাম বিক্রি করলাম। কুলিরা মাল খালাস করে নিলে গাড়োয়ান ফিরতি বাড়ার খোঁজ করতে চলে গেল। আর আমরা দুই ভাই আবার বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম। পথে ভাই বললেন, আজ লেমুয়া বাজারের হাটবার। তিনি সেখান থেকে কাঁঠাল কিনে বাড়ি ফিরবেন। যেই কথা সেই কাজ। আমরা এবার রওয়ানা হলাম লেমুয়া বাজারের দিকে। ততক্ষণে আমার পান্তা ভাতের মেয়াদ শেষ। ক্ষিধে লেগেছে বিষণ। লেমুয়া বাজারে যখন পৌঁছেছি তখন পড়ন্ত বিকেল। ভাই তখন আমাকে একটি চায়ের দোকানে বসিয়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন একটি কাটা বন (পাওয়া রুটি) যার দাম দশ পয়সা। দশ পয়সা মানে কিন্তু ১০ পয়সা নয় ১৫ পয়সা। আমি ঐ কাটাবনটি পানিতে ভিজিয়ে অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে খেয়েছি। এখানে বলে রাখা ভাল, ভাই বসে থেকে আমাকে খাওয়ালেন। কিন্তু নিজে কিছুই খেলেন না। তারপর এক টাকা দাম দিয়ে বিশাল একটা কাঁঠাল কিনে রাতে আমরা বাড়ি ফিরলাম। পরিবারের অনেক সদস্যদের সাথে মিলেমিশে তখন তিনি তৃপ্তি সহকারে কাঁঠাল খেলেন। পরিশ্রান্ত হয়ে আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারি না। পরদিন সকালে উঠে দেখি আমার পায়ে বড় বড় ফোস্কা এবং বুঝতে পারি রাতে আমার মা এ ফোস্কা সারানোর অনেক চেষ্টা করেছিলেন।
(টীকাঃ একটুও বানিয়ে বলা নয়,কিন্তু ডিজিটাল যুগে আমাদের ছেলেরা কি এ সব বিশ্বাস করবে?)

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি