Loading..

খবর-দার

০২ আগস্ট, ২০২১ ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ

শিশুর স্বাস্থ্যের উপর পুষ্টিকর খাদ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব

শিশুর সুস্বাস্থ্য নিয়ে আসে তার  ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা। শিশু বয়সের ছোটখাটো যেকোনো রোগ বড় হয়ে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ কোনো রোগের কারণ হিসেবে। শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে অবহেলা শিশুদের শরীর ও মনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশে ৯.৫ মিলিয়নেরও বেশি শিশু পুষ্টিহীনতায়  ভুগছে। আর শতকরা ৫৬ ভাগ শিশু ওজনহীনতায় ভুগতে থাকে। তাই, শিশু বয়সে একটি উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।

শিশুর স্বাস্থ্যের উপর পুষ্টিকর খাদ্যের  কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবসমূহ হচ্ছেঃ

  • শারীরিক বৃদ্ধিঃ প্রথম ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির হার থাকে সবচেয়ে বেশি। এসময়ে পুষ্টিকর খাদ্য শিশুর জন্যে আবশ্যক।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণঃ শিশুরা চঞ্চল স্বভাবের হয়ে থাকে। কিন্তু ওজনহীনতায় ভুগতে থাকা শিশু অল্পতেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে ও দুর্বল হয়ে যায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে, সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
  • মানসিক স্বাস্থ্যঃ শিশুরা যখন তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার পায় না তখন শিশু মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগে ও তাদের মধ্যে অবসাদ দেখা যায়।

বিভিন্ন বয়সে শিশুর খাবার গ্রহণে ভারসাম্য আনা উচিত।  শিশুর একটি সুস্থ জীবনের জন্যে খাবার তালিকাটা এমন হওয়া প্রয়োজন যেন সবরকম খাবারের সমন্বয় থাকে।

 বাড়ন্ত শিশুর জন্যে উপযোগী  খাদ্যের ৭টি ভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি খাদ্য তালিকা 

শর্করাঃ

শিশুর শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে শর্করা। শ্বাসপ্রশ্বাস, খাবার হজম করা, মলমূত্র নিষ্কাশণের ক্ষেত্রে শর্করার ভূমিকা সর্বাধিক।

শিশুর খাবারে শর্করার উৎসঃ মিষ্টি, মধু, আম, আলু, মিছরি, সাগু, বার্লি।

প্রোটিনঃ

শারীরিক গঠন ও হজম ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের পেছনে কাজ করে প্রোটিন। দেহে তাপ উৎপাদনের সাথে সাথে কোষের ক্ষতিপূরণেও ভূমিকা রাখে প্রোটিন।

শিশুর খাবারে প্রোটিনের উৎসঃ ডিম, মাছ, মাংস, পনির, ডাল, দুধ জাতীয় খাদ্য , ছানা।

চর্বিঃ

কোষ গঠন ও শক্তি সঞ্চারের জন্যে চর্বি যুক্ত খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া চেহারায় লাবণ্য আনতে বাচ্চার জন্যে চর্বি যুক্ত খাদ্য প্রয়োজন।

শিশুর খাবারে চর্বির উৎসঃ মাংসের চর্বি, মাখন, তেল, ঘি, নারকেল।

মিনারেলসঃ

বিভিন্ন রকম মিনারেলস শিশুর শারীরিক গঠনে ভূমিকা রাখে। যেমনঃ ক্যালসিয়াম শিশুর হাঁড় ও দাঁত শক্ত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার ফসফরাস ক্যালসিয়ামের সাথে মিলিত হয়ে শিশুর হাঁড় ও দাঁতের টিস্যু গঠনে কাজ করে। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য আয়রন ও শিশুর মানসিক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে আয়োডিন। হার্টের সচলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম।

শিশুর খাবারে মিনারেলসের উৎসঃ ডাল, দুধ , ডিম, পনির, কলিজা, চিংড়ি, গাজর, আপেল।

ফাইবারঃ

শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনে হৃদরোগ ও ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে ভূমিকা রাখে ফাইবার।

শিশুর খাবারে ফাইবারের উৎসঃ মসুর ডাল, দানাদার শস্য, মটরশুটি।

ভিটামিনঃ

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ভিটামিনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ভিটামিন ‘এ’ শিশুর দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে ও ভিটামিন ‘বি’ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি ভিটামিন ‘সি’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও ভিটামিন ‘ডি’ শিশুর হাঁড় ও দাঁত মজবুত করে। । ভিটামিন ‘এ’ ও ‘কে’ মাংসপেশি শক্তিশালী করে ও রক্ত জমাট বাঁধতে কাজ করে।

শিশুর খাবারে ভিটামিনের উৎসঃ

ভিটামিন ‘এ’ – পাকা পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, ছোট মাছ।

ভিটামিন ‘বি’ – মাংস, গুড়, চিড়া, মুড়কি।

ভিটামিন ‘সি’ – লেবু, আমলকি, কমলা, জলপাই, কামরাঙ্গা, পেয়ারা।

ভিটামিন ‘ডি’ – পনির, মাখন, ঘি, দুধ-ডিম, কলিজা।

ভিটামিন ‘ই’ – এবং ভিটামিন ‘কে’ – ডিমের কুসুম, মাংস, চিনা বাদাম, সবুজ ও হলুদ শাক-সবজি।

পানিঃ

দেহের তাপমাত্রা রক্ষার জন্যে শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করানো প্রয়োজন। এছাড়া খাবার হজম ও অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের করে দিতে পানি যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।