সুপার
০৯ আগস্ট, ২০২১ ০৮:২৪ পূর্বাহ্ণ
জাতির পিতার প্রেরণাদায়ী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
জাতির
পিতার প্রেরণাদায়ী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
যার নাম নিলেই
শ্রদ্ধায় অবনমিত হয় প্রতিটি বাঙালির হৃদয়। আমাদের পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ
তিনি। তিনি শত বছরের শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন,
নিপীড়নের হাত থেকে বাঙালিকে মুক্ত করেছিলেন। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস
পর্যন্ত যিনি কাজ করে গেছেন বাঙালির জন্য, তিনিই আমাদের
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু বাঙালির নেতা নন, বিশ্বের মহান নেতা ছিলেন। দেশ ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে তার অসামান্য
অবদানের জন্য যে নারীর ত্যাগ, অবদান ও প্রেরণার কাছে ঋণী
ছিলেন- তিনি হলেন তারই স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল তাঁর
কবিতায় লিখেছিলেন,‘‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,
অর্ধেক তার নর”। বেগম মুজিবের জীবনী বিশ্লেষণে আমরা বিদ্রোহী কবি
কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতার যথার্থ প্রতিফলন দেখতে পাই যেখানে নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ
ছিল, সেখানে পড়ালেখা তো কল্পনাই করা যেত না। তবুও তিনি
দমে যাননি। সেই সময়ে ঘরে বসেই পড়ালেখা করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধরনের বিদ্যা
ছাড়াই তিনি ছিলেন প্রতিভাসম্পন্ন, জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল। সতত প্রেরণাদায়ী বঙ্গমাতা, বাঙালির
স্বাধীনতার স্বপ্ন পুরুষ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ পর্যায়ে যে মহীয়সী নারী , প্রেরণাদায়ী হিসেবে সর্বদায় ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুর আজীবনের সহযোগিতায়
ছিলেন তিনিই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব । চেতনায় বাঙালিত্বকে ধারণ করে ,
বঙ্গবন্ধুকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন ।
বায়ান্ন
থেকে একাত্তর অবধি সংগ্রামে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছায়ার মতো ছিলেন।সংসারের দায়িত্ব তিনি একাই সামনে নিয়েছিলেন,
বঙ্গবন্ধু নিশ্চিন্তে মন দিয়েছেন দেশের কাজে । পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন
বঙ্গবন্ধু। বেগম মুজিব ছিলেন তার প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের শেখ মুজিবের সহধর্মিণী হিসেবে নয়, একজন নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে তিনি ধূপের মতো নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির
মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন। এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়ের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া বেগম মুজিবের গায়ের রং ফুলের মতো ছিল বলে মা হোসনে আরা বেগম
ডাকতেন রেণু বলে। ফুলের মতোই কোমল তার হৃদয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের দুর্দিনে
তাকে হতে হয়েছে পাহাড়ের মতো অটল। স্বামীর সংগ্রামের সহযোদ্ধা হিসেবে ছায়াসঙ্গীর
মতো জুগিয়েছেন সাহস ও উদ্দীপনা। বাংলাদেশের
ইতিহাসে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীর
নাম নয়, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম
এক নেপথ্য অনুপ্রেরণা দাত্রী। তার ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা খুঁজে পাওয়া যায়
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব ইতিহাসেও - তাইতো তিনি শুধু “ রেণু থেকে বঙ্গমাতা” এ
পরিণত অনুকরণ ও অনুসরণ ইতিহাসের এক আদর্শ নারী।
মহীয়সী এই নারীর কথা
ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের পরতে পরতে জড়িয়ে আছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের যে কালরাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে, সে
সময়েও অর্থাৎ জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত বেগম মুজিব ছিলেন ইতিহাসের কালজয়ী এক মহানায়কের অনুপ্রেরণাদায়িনী হিসেবে।
ঘরে বন্দি নারী আজ
মাটি থেকে আকাশ, উত্তর থেকে দক্ষিণ, মহাকাশ
থেকে গ্রহ নক্ষত্র নিজেদের দক্ষতার পদচিহ্ন রেখে চলছে। ঘরে-বাইরে শত সহস্ত্র
সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিশ্বময় আলোর জ্যোতিকে আলোকিত করছে। বঙ্গবন্ধু ও
ফজিলতুন্নেছা মুজিব নারীদের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। নারীসমাজ তাদের জীবনী থেকে
প্রেরণা নিয়ে আরও উদ্যমী হয়ে উঠবে। নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার মনোভাব তৈরি হবে। ঘরের
কোণে লুকিয়ে থাকা নারীরাও ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পাবে।