Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৬ আগস্ট, ২০২১ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

শিল্পী এস এম সুলতান

বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান-

১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত তথা বর্তমান বাংলাদেশের নড়াইল জেলার মাসিমদিয়া গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলী ছিলেন রাজমিস্ত্রি। মায়ের নাম মাজু বিবি। শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকত। জন্মের অল্পদিনের মধ্যেই লাল মিয়া মা হারা হন।

ছোটবেলা থেকেই বাবাকে রাজমিস্ত্রির কাজে সহযোগিতা করার পাশাপাশি ছবি আঁকার প্রতি প্রবল ঝোঁক তৈরি হয় তার। এসএম সুলতান ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর তিনি চারুকলার ওপর পড়াশোনা করতে কলকাতা যেতে চাইলে তার পরিবার রাজি হয়নি। কিন্তু স্থানীয় জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়বাহাদুরের সহযোগিতায় এই বিস্ময়কর প্রতিভাবান শিল্পী ১৯৩৮ সালে কলকতায় চলে যান। কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্ব প্রদর্শন করলেও সমস্যা দেখা দিল শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে। একাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কলকাতা আর্ট স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। তিনি তার নতুন নাম রাখলেন শেখ মুহম্মদ সুলতান তথা এসএম সুলতান।

১৯৪৬ সালে মিসেস হাডসন নামে কানাডীয় এক নারীর উদ্যোগে ভারতের শিমলায় প্রদর্শিত হলো তার একক চিত্র। এই প্রদর্শনীই তার শিল্পীজীবনের প্রথম স্বীকৃতি। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে তার মোট ২০টি একক প্রদর্শনী হয়। পাবলো পিকাসো, মাতিস, সালভাদর দালি, ব্রাক, ক্লি প্রমুখ খ্যাতনামা শিল্পীদের সঙ্গেও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নেন তিনি। এসব একক ও সম্মিলিত প্রদর্শনীর মাধ্যমে সুলতান প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের চিত্রকলার জগতে আলোড়ন তুলেছিলেন।

তার আঁকা ছবিতে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসাবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে।

এসএম সুলতানের বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলো মধ্যে আছে-

·        জমি কর্ষণ-১, জমি কর্ষণ-২ (তেল রং ১৯৮৬, ১৯৮৭),

·        হত্যাযজ্ঞ (তেল রং ১৯৮৭),

·        মাছ কাটা (তেল রং ১৯৮৭),

·        জমি কর্ষণে যাত্রা-১ এবং ২ (তেল রং ১৯৮৭, ১৯৮৯),

·        যাত্রা (তেল রং ১৯৮৭),

·        ধান মাড়াই (তেল রং ১৯৯২),

·        গাঁতায় কৃষক (তেল রং ১৯৭৫),

·        প্রথম বৃক্ষরোপণ (তেল রং ১৯৭৬),

·        চর দখল (তেল রং ১৯৭৬)

·        পৃথিবীর মানচিত্র (তেল রং) ইত্যাদি।

শিল্পী এস এম সুলতান শেষ জীবনে বলে গিয়েছেন: আমি সুখী। আমার কোনো অভাব নেই। সকল দিক দিয়েই আমি প্রশান্তির মধ্যে দিন কাটাই। আমার সব অভাবেরই পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

তিনি ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, দৈনিক যুগান্তর।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি