Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

২৭ আগস্ট, ২০২১ ০৫:৫৪ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী, সাম্য আর প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫ তম মৃত্যু বার্ষিকী

২৭ আগস্ট ২০২১ বাংলাদেশের জাতীয় কবি, বিদ্রৌহ, সাম্য আর প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫ তম মৃত্যু বার্ষিকী। বিচিত্র শব্দ ভান্ডারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সম্মৃদ্ধ করেছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম দুখু মিয়া। এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। তাঁর বিচিত্র জীবনে স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবেও ছিলেন তিনি। রুটির দোকানেও কাজ করেন তিনি। অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন।

আঠার বছর বয়সে বৃটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এক সময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। এ সময় তিনি রচনা করেন ‘ব্রিদ্রোহী’ ও ‘ভাঙার গান’ কবিতা। রচনা করেণ সাময়িকী ধূমকেতু। এক সময় তিনি জেলে বন্দি হন। জেল বন্দি অবস্থায় তিনি লেখেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দি’।

কাজী নজরুলের লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। কাজী নজরুল ইসলাম নিজ গ্রামে মসজিদ ও স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিতা ও গান লেখা শুরু করেন। নিজে বিভিন্ন আসরে গান পরিবেশন করেন। তার কবিতা ক্রমে বৃটিশ রাজের শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদী ও শক্তিশালী হয়ে উঠে। তাঁর বিদ্রোহী কবিতায় সরাসরি বৃটিশ রাজকে সমালোচনা করা হয়।

এ ছাড়া ভাঙ্গার গান, ধুমকেতু কবিতাও একই চেতনার কবিতা নির্মাণ করেন কবি। ছোটকাল থেকেই কবির রচনায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটে। তিনি বিদ্রোহী উপাধিতে ভূষিত হন। তার বই নিষিদ্ধ করে বৃটিশ শাসকরা। তিন হাজার গান রচনা করেন কাজী নজরুল। তার গানের বানী হয়ে উঠে মানবতাবাদ ও সাম্যবাদের পক্ষে শক্তিশালী হাতিয়ার। অসংখ্য গানের সুরারোপও করেন কবি নিজেই। পেশাগত জীবনে কবি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতায় নিয়োজিত ছিলেন। দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

আমাদের স্বাধীনতার পর পরই  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির বসবাসের জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন তিনি। মধ্য বয়সে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তাঁকে আমরণ সাহিত্য চর্চা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেন।

দীর্ঘকাল অসুস্থ থাকার পর কবি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগষ্ট ( ১২ ভাদ্র ) ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দাফন করা হয়।

এই দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি পালন করা হয়।

তাঁর রচিত ইসলামী গান বাঙ্গালী মুসলমানদের ঈদ আনন্দ উদযাপনের অপরিহার্য উপাদান। একই ভাবে তাঁর রচিত শ্যামা সঙ্গীত ও কীর্তন ছাড়া হিন্দুদের পূজা পার্বন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা ছাড়াও, গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান ইত্যাদি রচনা করেছেন। তিনি প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান লিখেছেন, এর অনেক গানে নিজে সুর দিয়েছেন, সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন, কন্ঠ দিয়েছেন, চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন, অভিনয় করেছেন।

তিনি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। তিনি বৃটিশ ভারতের সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করেছেন। আবার ইংরেজ বিরোধী লেখার কারণে জেল খেটেছেন, জেলে অনশন করেছেন.

বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলী।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি