Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

০২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:৫০ অপরাহ্ণ

ডালিম

ঔষধি গুনাগুণ

ডালিম ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডালিমে বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় ইহা বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজী মতে ডালিম হচ্ছে হৃদয়ের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এ ফল কোষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের ওষুধ তৈরি হয়। ইহা ত্রিদোষ বিকারের উপশামক, শুক্রবর্ধক, দাহ-জ্বর পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক, অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। ডালিমের ফুল রক্তস্রাবনাশক।

১. রক্তপাত বন্ধ করতে ডালিম ফুল অত্যন্ত কার্যকরী। হঠাৎ দুর্ঘটনায় শরীরের কোনো অংশ ছিঁড়ে গেলে, থেঁতলে গেলে বা কেঁটে রক্তপাত হলে ডালিম ফুল কচলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভালো কাজ করে।

২. হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগের মহৌষধ ডালিম ফুলের রস। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা রক্তঝরা একটি সাধারণ রোগ। বহু মানুষের এরকম হয়। অনেকের বিনা কারণে নাক দিয়ে রক্ত যায়। শিশুদের মাঝেও এটা লক্ষ্য করা যায়। হঠাৎ করেই এরকম হয়। আঘাত, পলিপ বা কোনো কারণ ব্যতীত যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ে বা রক্ত যায় ডালিম ফুল কচলিয়ে রস নিয়ে নাকে শ্বাস নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

৩. আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের খোসা। যারা আমাশয়ের রোগী, ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে আমাশয় নিরাময়ে ভলো ফল পাওয় যায়। আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের কাঁচা খোসা এবং শুকনা খোসা দুটোই কার্যকরী। তাই ডালিম খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে ঘরে রেখে দেয়া ভালো।

৪. ডালিম গাছের ছাল গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিলে শরীরের যে কোনো স্থানের বাগি বা উপদংশ নিরাময়ে ভালো কাজ করে। মহিলাদের প্রদররোগ নিরাময়ে ডালিম ফুল উপকারী। প্রদর একটি জটিল মেয়েলি রোগ। প্রদর দু’প্রকার। শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর। উভয় প্রকার প্রদরে ৪/৫টি ডালিম ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে কিছুদিন সেবন করলে রোগ সেরে যায়।

৫. গর্ভপাত নিরাময়ে ডালিমের গাছের পাতা উপকারী। বহু মহিলার গর্ভসঞ্চারের দুই তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায়। কোনো কোনো মহিলার একাধিকবার এরকম হয়। ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভপাতের আশঙ্কা দূর হয়।

৬. ডালিম গাছের শিকড় ক্রিমিনাশক। ক্রিমির সমস্যা আমাদের জাতীয় সমস্যা। ক্রিমির কারণে শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই নানাবিধ জটিলতায় ভোগে। ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে চূর্ন করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে আনায়াসেই ক্রিমিনাশ হয়। বয়স ভেদে ১-৩ গ্রাম পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

৭. শিশুদের পেটের রোগ নিরাময়ে ডালিম গাছের ছাল। শিশুরা বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে। যেসব শিশু পেট বড় হওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে তাদেরকে জন্য ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৮. অনেকের মতে এটাও বলা হয়ে থাকে যে ডালিম খেলে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি পায়।

৯. ডালিম খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রাকৃতিক ইনসুলিন ডালিম ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।

মূলত, ডালিম গাছ- ফল, ফলের খোসা, পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত কোনোটাই ফেলনা নয়। আগাগোড়া মানুষের উপাকরী।

আরো দেখুন