Loading..

ম্যাগাজিন

০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০১:২৫ অপরাহ্ণ

যতীন্দ্র মোহন দাশ, প্রধান শিক্ষক,শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সুনামগঞ্জ সদর,সুনামগঞ্জ।

রেশমার স্বপ্ন ভঙ্গ

যতীন্দ্র মোহন দাশ

প্রধান শিক্ষক

শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

সুনামগঞ্জ সদর,সুনামগঞ্জ।

 

রেশমার বিয়ে হয়েছে ষোল বছর বয়সে। রইছ উদ্দীন কাজের সন্ধানে শহরে এসেছিলো।  তখন থেকেই রেশমার বাপের সাথে খুব খাতির। তারপর রেশমার বিয়ে। বেচারী রেশমা কখনও স্কুলে যায় নাই। তার খুব ইচ্ছে ছিলো লেখাপড়া করা। কিন্তু সবাই বলে গরীবদের লেখাপড়ার কোন প্রয়োজন নেই,তার চেয়ে বাড়ির কাজে মাকে সাহায্য করলে সংসারের অনেক উপকার হবে। তাই সে তার মনের কথা কাউকে বলেনি। সে যখন নতুন সংসারে আসলো তার চোখে ছিলো অনেক স্বপ্ন। স্বামী,সন্তান নিয়ে সুন্দর একটি সংসার হবে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাবে। রইছ উদ্দীন ঘুম থেকে উঠে কাজে চলে যায় ফিরে রাতে। তাই ছেলেদের সাথে তার তেমন যোগাযোগ নেই। ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো,লেখাপড়া করানো, যা করতে হয় সব রেশমাকে একাই করতে হয়। তার একমাত্র ছেলে রাহেল  তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু রেশমা লক্ষ্য করলো রাহেলের  ইদানিং লেখাপড়ায় তেমন মন নেই। খেলাধূলার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। তাই তার চিন্তার অন্ত নেই। প্রতিদিন স্কুলের আপামনিদের ও স্যারদের কাছে এসে ছেলের লেখাপড়ার খবর নেয়। রেশমার চোখে বড় স্বপ্ন তার ছেলে লেখাপড়া শিখে বড় চাকুরী করবে তাদের আর কোন অভাব থাকবেনা। কিন্তু দুঃখ হচ্ছে সে লেখাপড়া জানেনা, ছেলে ভুল পড়ছে না শুদ্ধ পড়ছে ,নাকি তাকে ফাঁকি দিয়ে শুধু শুধু বই নিয়ে বসে থাকে তা বোঝার কোন উপায় নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় সে বুঝি অন্ধ। বাচ্চা ছেলেটা তাকে ফাঁকি দিচ্ছে কিন্তু সে কীভাবে তা সে ধরতে পারছেনা। তবুও সে প্রাণপণ চেষ্টা করে ছেলেকে মানূষ করে তোলার জন্য। মাঝে মাঝে রইছ উদ্দীন বলে কী হবে এত লেখা পড়া করে আমরা কি না খেয়ে আছি। তাও রেশমা দমেনা সে তার স্বপ্ন পূরণে ব্যস্ত। এবারের বন্যায় যখন সব কিছু ভাসিয়ে নিলো তখন প্রতিবেশি সবার সঙ্গে রেশমা ও রইছ উদ্দীন আশ্রয় নিলো স্কুল ঘরে। বন্যা যেনো সবাইকে কিছুদিনের জন্য বিশ্রাম দিলো। রইছ উদ্দীন ও কাজ কর্ম না পেয়ে ঘরে বসে থাকে। তখন তার পাশের পাড়া থেকে শরনার্থী হয়ে আসা সাবানাকে মনে ধরে। রেশমা বুঝেছে তার কপাল পুড়েছে।  বন্যা চলে যাবার পর রইছ উদ্দীন মনের সুখে ঘর বাঁধে। তার মনে সুখের জোয়ার। এর কয়েক দিনের মধ্যেই রইছ উদ্দীন সাবানাকে বিয়ে করে ঘরে তুলল। রেশমা শুনেছে বন্যায় অনেক মানুষ মারা গিয়েছে তার শুধু আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা তার কোন কিছু হলোনা। এখন আর রেশমা স্বপ্ন দেখেনা,তার চোখে শুধু শূন্যতা। ছেলে কোথায় যায় কি করে তার খবর রাখে না। এখন আর রেশমা আপামনিদের গিয়ে বলে না রাহেল কে একটু দেখবেন।   

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি