Most Marju Ara Begum
প্রধান শিক্ষক
১৩ অক্টোবর, ২০২১ ১১:০২ অপরাহ্ণ
পদ্ম ফুল, মোছাঃ মার্জুয়ারা বেগম, প্রধান শিক্ষক, দক্ষিণ বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডিমলা, নীলফামারী।
বর্ষা মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে পরিচিত এক নাম পদ্ম। হাওর, ঝিল ও কিছু কিছু পুকুরে ফুটে লাল, সাদা ও নীল রঙের পদ্ম ফুল। অনেকে আবার একে শাপলা ফুল মনে করেন। কিন্তু শাপলা আর পদ্মের মাঝে বিস্তর ফারাক। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের কারণে পদ্মকে জলজ ফুলের রাণী বলা হয়। তাছাড়া শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে এই ফুল ফোটে বলে একে শ্রাবণের রাণী বলেও আখ্যায়িত করেছেন গবেষকরা।
‘পদ্ম’ কন্দ জাতীয় ভূ-আশ্রয়ী বহু বষর্জীবী জলজ উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম : Nelumbo nucifera (নিলাম্বো নুচিফেরা)। এর বংশ বিস্তার ঘটে কন্দের মাধ্যমে। পাতা পানির ওপরে ভাসলেও এর কন্দ বা মূল পানির নিচে মাটিতে থাকে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে গাছ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাতা বেশ বড়, পুরু, গোলাকার ও রং সবুজ। পাতার বোটা বেশ লম্বা, ভেতর অংশ অনেকটাই ফাঁপা থাকে। ফুলের ডাটার ভিতর অংশে থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য ছিদ্র। ফুল আকারে বড় এবং অসংখ্য নরম কোমল পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্টি পদ্ম ফুলের। ফুল ঊধ্বর্মুখী, মাঝে থাকে পরাগ। ফুটন্ত তাজা ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে। ফুল ফোটে রাত্রি বেলা এবং ভোর সকাল থেকে রৌদ্রের প্রখরতা বৃদ্ধির পূর্ব পযন্ত প্রস্ফুটিত থাকে।
সরেজমিনে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইনিয়নের মেদেনিমহল ঝিলে, পাঁচগাঁও ইউনিয়নের সরকারবাজার, উত্তরভাগ ইউনিয়ন ও রাজনগর সদর ইউনিয়নের অনেক গ্রামে সাদা ও লাল রঙের পদ্ম দেখা যায়।
গবেষকদের মতে, পদ্মর একটু সুবাস বেশি, শাপলার সুবাস তুলনামূলক কম। গাছ দুটোই দু’ধরণের জাত। ফুল, পাতা আলাদা আলাদা। পদ্ম ফুল শাপলা ফুল থেকে আকারে বড়। অপরদিকে পদ্মফুল আকারে ছোট। পাপড়িগুলো চিকন এবং লালচে রঙের। তবে পদ্মফুলে এক জাতীয় ফল হয়। পদ্মকে অনেকে ভারতের জাতীয় ফুল বলে মনে করেন, কিন্তু সাংবিধানিকভাবে তা নয়।
জানা যায়, শালুক (শাপলা) দেখতে পদ্মফুলের মতো হলেও শালুক পরিবারের (Nympheaceae) এর সঙ্গে পদ্ম পরিবারের (Nelumbonaceae) এর খুব একটা নিকটত্ব নেই। এদের পাতা দেখলে সহজেই পৃথক করা যায়। শ্রাবণ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত গ্রামীণ জনপদে পদ্মের খোঁজ মিলে। পদ্মের বিভিন্ন নামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কমল, শতদল, সহস্রদল, মিনাল, পংকজ, মিরজ, শরজ, নলিনি ইত্যাদি।
উপজেলা হিন্দু যুব পরিষদের সি. যুগ্ম সম্পাদক শাওন নন্দী বলেন, পদ্ম ছাড়া মনষা পূজা হয় না। ১০১ টি পদ্ম দিয়ে মনষা পূজা করা হয়। অনেক সময় পদ্ম পাওয়া না গেলে শাপলা ফুল দিয়ে পূজা করা হয়। তবে ফুলের সংখ্যা বিজোড় হতে হয়। মনষা পূজা প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শেষ তারিখে হয়।
কথা হয় মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মেহেরুন্নেছার সাথে। তিনি বলেন, পদ্ম আর শাপলা এক নয়। এদের নাম, পরিবার, আকার ভিন্ন। গ্রামীণ জনপদের অনেকেই শাপলা আর পদ্মকে নিশ্চিত করতে চিন্তায় পড়ে যান।মেহেরুন্নেছা বলেন, জাতীয় ফুল শাপলা আর ফুলের রাণী পদ্ম। শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে এই ফুল ফোটে বলে গবেষকেরা একে শ্রাবণের রাণী বলেছেন।