সহকারী শিক্ষক
১৬ অক্টোবর, ২০২১ ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ
প্রতিবন্ধীরা জাতির বোঝা নয়, সম্পদ।
প্রতিবন্ধিতা বলতে স্বাভাবিক ক্ষমতার অভাবকেই বুঝায়। এটি কোন রোগ নয়। তাই যাদের স্বাভাবিক কাজের ক্ষমতা নাই তাদের প্রতি করুনা নয়, প্রয়োজন সহযোগিতার মনোভাব পোষন। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ প্রতিবন্ধী। বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির 'অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা' নিশ্চিতকরনে আইন প্রণয়ন করে। এভাবে আমাদের জাতীয় উন্নয়নে তারাও বড় অবদান রাখতে পারবে।
তাই তাদের কাজের জায়গা ও সুযোগ আমাদের ঠিক করে দিতে হবে। 'প্রতিবন্ধী' শব্দটা খুব অপ্রিয় শোনায়। তাই বর্তমানে তাদের 'বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী' বলা হয়। কারন এই বিশাল জনগোষ্ঠী নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে অলিম্পিকের মত বিশাল পরিসরেও। তাই শুধু সরকার নয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে।
জামিলা খাতুন শিউলি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। ২ বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয়ে দুই পা অচল হয়ে যায়। স্কুলে যাওয়ার বয়সে কারো সহযোগিতা না পেয়ে হামাগুড়ি দিয়ে একাই স্কুলে যাওয়া। কিন্তু পরিবার ভেবেছিল —প্রতিবন্ধীর আবার পড়ালেখা? তাই ঋশিল্পী নামে একটি এনজিওতে চলে যাওয়া। ঋশিল্পী প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে, সেরজো (ইটালিয়ান) একটি হুইল চেয়ার উপহার দেন। ২০০৪ সালে এসএসসি, ২০০৮ সালে এইচএসসি আর ২০১৪ সালে স্নাতক পাস করি।
২০১৩
সালে
সরকারি
প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে
“সহকারী
শিক্ষক”
পদে
চাকুরিতে
যোগদান।
বর্তমানে
সাতক্ষীরা
সদরের
চুপড়িয়া
সরকারি
প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে
কর্মরত।
২০১৫
সালে
ICT প্রশিক্ষণ আর
২০১৬-১৭
শিক্ষাবর্ষে
ডিপিএড
প্রশিক্ষণে
প্রথম
স্থান
অধিকার
করি।
বাবা
দ্বিতীয়
বিয়ে
করে
চলে
গেলেও
মাকে
নিয়ে
থাকি।
ছোট
ভাইকে
পড়ালেখা
শিখিয়েছি
—ভাইটি
এখন
ব্যাংক
কর্মকর্তা।
আমি
সম্প্রতি
ICT4E-জেলা শিক্ষক
অ্যাম্বাসেডর
এর
জন্য
আবেদন
করছি।
প্রতিবন্ধীদের অক্ষমতা না দেখে তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে খুঁজে বের করে কাজে লাগাতে হবে। তারা বোঝা নয় বরং সহযোগিতা পেলে তারাও দেশের সম্পদে রূপান্তরিত হতে পারে। এজন্য ব্যক্তি ও সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তন জরুরি। বর্তমান সরকার ১০ টি লক্ষ্য নির্ধারন করে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরি উভয় জায়গায় প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সরকারের টার্গেট আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে অন্তত তিন হাজার প্রতিবন্ধীর চাকরি নিশ্চিত করা।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের প্রতি সদয় হলেও সঠিক কাউন্সেলিং ও কার্যকারিতা না থাকায় অধিকাংশ প্রতিবন্ধীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ এ মহলকে এগিয়ে নেওয়া দেশ ও জাতির কর্তব্য।
একীভূত শিক্ষার ধারণাটি কেবল উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেই নয়, উন্নয়নশীল বিশ্বেও দেখা যায়। এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশে অন্যতম। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও একীভূত শিক্ষার বিকাশ ঘটেছে অতিদ্রুত। বর্তমানে সরকার প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সঙ্গে তাদের সহকারীসহ শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি, বেসরকারি সংস্থা ও এনজিও একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
গুরুত্বের বিবেচনায় সাধারণ শিক্ষার চেয়ে একীভূত শিক্ষার গুরুত্ব ব্যাপক বিস্তৃত। বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিহাজারে দুই শিশু প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। তাদের মধ্যে ৫ থেকে ৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। অন্যরা এখনো বিদ্যালয়ের বাইরে। এই বিশাল সংখ্যক শিশুকে শিক্ষার বাইরে রেখে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। একীভূত শিক্ষাই পারে এসব প্রতিবন্ধীসহ দেশের সব শিশুকে তাদের শিক্ষার অধিকারের আওতায় আনতে।
মানবসেবাই পরম ধর্ম । কারণ ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ —একথা সকল মানব প্রেমিকেরাই বলে গেছেন । তাই এদের পাশে থেকে তাদের বন্ধু হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে । যদি আমরা তাদের ভালোবেসে কাছে টেনে না নিই তাহলে তাদের চোখের জল আমাদের মসৃণ পথ পিছিল করে দেবে । মনে রাখতে হবে প্রতিবন্ধীরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের বাদ দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব না। সচেতন নাগরিকরা যদি তাদের কাজে লাগাতে পারে তাহলে তারা দেশের বোঝা নয়, বরং সম্পদে পরিণত হবে।