Loading..

ম্যাগাজিন

১৬ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:২২ অপরাহ্ণ

ডালিয়া ফুল, মোছাঃ মার্জুয়ারা বেগম, প্রধান শিক্ষক, দক্ষিণ বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডিমলা, নীলফামারী।

ডালিয়া ফুলের পরিচিতি:

  • ফুলের নামঃ  ডালিয়া,
  • ইংরাজি নাম: Dahlia,
  • বৈজ্ঞানিক নামঃ Dahlia variabilis,
  • পরিবারঃ Compositae

ডালিয়া ফুলের নামকরণ: ডালিয়া ফুলের নামকরণের ইতিহাস দীর্ঘদিনের।  সুইডেনের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ আন্দ্রিয়াস গুস্তাভ ডালের  নামানুসারে এই ফুলের নাম হয়েছে ডালিয়া।

ডালিয়া ফুলের বৈশিষ্ট্য: 

  • এটি একটি কন্দজাতীয় ফুল,
  • প্রতি গাছে ফুলের সংখ্যা প্রায় ১৫-১৬ টি থাকে,
  • সাধারণত ফুল সতেজ থাকে  ৭-৮ দিন পর্যন্ত।

ডালিয়া ফুলের রং:

ডালিয়া ফুলের পাপড়ির সুন্দর ও অসাধারণ বিন্যাস ফুলটিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। ডালিয়া ফুল বিভিন্ন আকারের ও রংয়ের হয়। যেমন লাল, সাদা, কমলা, বেগুনি, হলুদ, ডিপ গোলাপি ইত্যাদী।

ডালিয়ার জাত বা শ্রেনী: কোলারেট ডালিয়া,সিঙ্গল ফ্লাওয়ার্ড ডালিয়া, অ্যানিমোল ফ্লাওয়ার্ড ডালিয়া,পমপন ডালিয়া,ক্যাকটাস ডালিয়া,ফর্মাল  ডেকরেটিভ ডালিয়া,ইন ফর্মাল ডেকরেটিভ ডালিয়াবল ডালিয়া,ডবল শো ফ্যান্সি,রয়্যাল হোয়াইন,ভ্যারাইটি গার্ল,পিত্তনী ফ্লাওয়ার্ড,স্টার ফ্লাওয়ার্ড ডালিয়া, ইত্যাদী।

ব্যবহারঃ ডালিয়া ফুল টবে,বাড়ির উঠান, ঘরের বারান্দা ইদ্যাদি জায়গায় সাজালে সেখানকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

টবে ডালিয়া ফুলের চাষের জন্য যা করা দরকার তা হলঃ

বংশবিস্তার পদ্ধতি: ডালিয়া ফুল তিন প্রকার পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা সম্ভব।

  • বীজ থেকে বংশবিস্তার করা সম্ভব।
  • কন্দ থেকে বংশবিস্তার করা সম্ভব।
  • শাখা কলম পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা যায়।

জলবায়ু

ডালিয়া গাছের চাষের জন্য আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি যাতে বেশী ভিজে কাদা কাদা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কোনো কারণে মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে সেই কয়দিন জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বৃষ্টির সময়ে গাছের ওপর ঢাকনা দিলে  ভালো হয়। এছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে জল দেওয়া উচিৎ।

টব..ডালিয়াফুল চাষের জন্য মাঝারি ও বড় যে কোনো আকারের টব প্রয়োজন।

মাটি.. দোঁয়াশ ও বালি যুক্ত দোঁয়াশ মাটিতে ডালিয়া গাছের ভাল চাষ হয়।আপনি যদি টবে ডালিয়া চাষ করতে চান তাহলে প্রথমেই যেটি করবেন, পরিমান মতো  দো-আঁশ মাটি, সম পরিমান বালি, সম পরিমান কাঠের ছাই বা কয়লার গুঁড়ো, এর অর্দ্ধেক পরিমান পাতা পচা সার, অর্দ্ধেক পরিমান গোবর, অর্দ্ধেক পরিমান খৈল ও অর্দ্ধেক পরিমান  টিএসপি সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করলে ভাল হয়।

সার.. গোবর সার ও রাসায়নিক সার এই গাছের জন্য ভাল।

সার প্রদান

বর্ষাকালে চাপান সার দিতে হবে।

বর্ষা শুরু হওয়ার পর ২১ দিন ছাড়া তরল সার দিতে হবে।

চাষের নিয়ম

ডালিয়ার চারা বীজ,মূল বা কাটিং এর দ্বারা সম্পন্ন হয়। তবে নার্সারি থেকে ছোট টবে বসানো মূল এর কাটিংই ভাল। এই কাটিং পাতাসার/গোবর সার/কম্পোস্ট সাথে দোঁয়াশ মাটি,ম্যাগনেশিয়াম সালফেট, মিউরিয়েট অফ পটাশ, ইউরিয়া,সুপার ফসফেটের সারমাটির সঙ্গে  প্রায় ১ মাস টবে ধরে রাখতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে গাছ বেড়ে উঠবে। 

পরিচর্যা

আপনাকে প্রথমে প্লাস্টিকের পাইপ, শক্ত বাখারী, পাট কাঠি জোগাড় করতে হবে। এরপর এগলি দিয়ে গাছগুলিকে ঠেকনা দিয়ে রাখা যায়। এরপর সার হিসেবে চাপান সার বা তরল সার দিতে হবে। এরপর কিছুটা অন্য পদ্ধতিতে মাঝখানের বড় কুঁড়িটা রেখে বা না ধরে অন্যগুলি খুঁটে দিতে হবে।

ডাল ছাঁটাই

একটি সতেজ গাছ তৈরির প্রক্রিয়াটি হল গাছটি বড় হলে ডগাটি ছেটে দিতে হবে। এরপর কয়েকদিন পর কান্ডের পাশ থেকে শাখা বের হবে, তাদের মধ্যে কয়েকটি শাখা রেখে বাকীগুলি ছিড়ে ফেলুন। এরপর গাছের গোড়ায় মাটি দিন। সতেজ গাছ রাখতে হলে একটি সোজা শাখা ও ৪-৫ টি পার্শ্ব শাখা রাখতে হবে। গাছের পার্শ্ব কুঁড়িগুলি ছাটলে, অনেক ফুল হবে। তবে আকারে সেগুলি ছোটো হয়। বড় ফুল পেতে হলে গাছের উর্দ্ধমূখী আগার কুড়িটি রেখে বাকী পার্শ্বকুঁড়িগুলি ছেটে ফেলা উচিত। বেশী ফুল পেতে হলে গাছের আগা ভেঙ্গে দিন। এতে ঝাকড়ানো গাছ হবে। তবে ফুলের সাইজ ছোটো হবে।


ডালিয়া ফুলের পোকামাকড় ও প্রতিকার:

জাব পোকা,জডিস ও থ্রিপস পোকার আক্রমণঃ ডালিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু জাবপোকা। এছাড়াও রয়েছে খুব ছোট ও বাদামী বা কালো রঙের থ্রিপস পোকা। এধরনের পোকা গাছের পাতা, ডগা,বর্ধনশীল অংগ  যেমন ফুলের  রস চুষে খেয়ে গাছের ক্ষতি করে। কুঁড়ি আক্রান্ত হয়। পাতা কুঁকড়ে যায়। বিবর্ণ হয়। অনেক সময় কুঁড়ি ফোটে না।

প্রতিকার:

  • ভাইরাসজনিত এ ধরনের রোগের সাধারনত সে অর্থে কোনো ঔষধ নাই। পারলে রোগাক্রান্ত গাছগুলি তুলে পুড়িয়ে ফেললে ভাল হয়। যদি না তুলে গাছগুলি রাখতে হয় তাহলে নিচের পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
  • শুরুতে আক্রান্ত পাতা বা ফুল ছিঁড়ে ফেলা উচিত। তাহলে পোকাগুলি আর থাকবে না।
  • হলুদ ফাঁদ ব্যবহারও করা যেতে পারে।
  • সাবান গুড়ো ৫-৬ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ১০ দিন পর পর ২ বার স্প্রে করতে হবে ।
  • পোকার বেশী আক্রমণের ক্ষেত্রে ডাইমেথয়েট জাতীয় কীটনাশক ২.০-৩.০ মিলি/লিটার জলে মিশিয়ে ৮-১০ দিন  পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।  তাহলেই ফল পাওয়া যায়।
  • এছাড়া ১০ মিলি নিম তেল + ১০ মিলি ট্রিক্স জলে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর  ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  •  থ্রিপস পোকার ক্ষেত্রে আক্রমণ বেশী হলে ফিপ্রনিল গ্রুপের কীটনাশক ১ লিটার জলে ১.০ মিলি হারে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা ১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  • তবে সুস্থ থাকতে জলে ডিমেক্রন ১০০ ই.সি. মিশিয়ে  ১০ দিন অন্তর সেপ্র করলে এইধরণের পোকা অনেকটা দমন করা যায়।
  • টবে ডালিয়ার চারা বসানোর সময় গাছের গোড়ায় থাইমেট-১০জি প্রয়োগ করলে, এই সব কীটনাশকের উপদ্রব অনেকটা কমে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি