Loading..

খবর-দার

১৬ অক্টোবর, ২০২১ ১০:৪৪ অপরাহ্ণ

বছরজুড়েই হাঁচি-সর্দি

অ্যালার্জি সর্দি নাকের একটি সমস্যা, যা নাসিকা ঝিল্লির প্রদাহের ফলে হয়ে থাকে। যেহেতু এর ব্যাপ্তি চারদিকে; তাই বলা যায় এটি বিশ্বময় স্বাস্থ্য সমস্যা। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০-২৫ ভাগ জনসমষ্টি নাকের এ রোগের শিকার। যদিও নাকের অ্যালার্জি সর্দি কোনো মারাত্মক রোগ নয়, তবে এ রোগের কারণে দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ ব্যাহত হয়। যেমন শিশুদের স্কুলের শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়, আবার অন্যদিকে পেশাজীবীদের কর্মস্থলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। মাঝেমধ্যে অ্যালার্জিজনিত সর্দি ও হাঁচি জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ।

নাকের অ্যালার্জির কারণ

যদিও অতিসংবেদনশীলতা অ্যালার্জির মূল কারণ; তবে ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

মাইট (এক ধরনের কিট), যা পুরোনো বইপত্র বা পত্রিকায় থাকে, বাসার পুরোনো ধুলা (ঘুণে ধরা), কসমেটিকস, ফুলের রেণু ও পশুপাখির লোমে অ্যালার্জেন (যা অ্যালার্জি সৃষ্টি করে) থাকে। এ ছাড়া গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া, শিল্পকারখানার বিভিন্ন উপাদানও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। কিছু খাবার যেমন- ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, চিংড়ি, বেগুন, হাঁসের ডিম কারও কারও ক্ষেত্রবিশেষে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। এখানে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, শীতকালে এ ধরনের সমস্যা বেশি হলেও কারও কারও সারা বছরই এ সমস্যাগুলো রয়ে যায়, বিশেষ করে আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে এমনটা হতে পারে। শীতকালে শুস্ক আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকে, তাই এই সময় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। বাসস্থান পরিবর্তন করে নতুন পরিবেশে গেলেও অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হানা দিতে পারে। শতকরা ১২ ভাগ শহরবাসী নিঃশ্বাসের সঙ্গে পথের ধুলা/বায়ুবাহিত অ্যালার্জেন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

নাকের অ্যালার্জি কীভাবে হয়?

যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলে রক্তে আইজিইর মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং এই আইজিই নাকের ভেতরে থাকা মাস্ট সেল নামক কোষকে ভেঙে দেয়। ফলে এই কোষ থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে নাকে প্রদাহ ঘটায়। শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়া নাসারন্ধের স্নায়ুকোষের রিসেপ্টরকে উদ্দীপ্ত করার ফলে হাঁচির উদ্রেক করে।

নাকের অ্যালার্জিজনিত সমস্যার লক্ষণ

নাক চুলকানো, একনাগাড়ে কয়েকটি হাঁচি, নাক দিয়ে পানি ঝরে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাঝেমধ্যে এর সঙ্গে মাথাব্যথা। অনেক সময় এসবের সঙ্গে কারও কারও চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়। অনেক দিন ধরে এ ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত রোগীদের নাসারল্প্রেব্দর পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) ফুলে গিয়ে থলির মতো বড় এবং বিবর্ণ হয়ে যায়।

অ্যালার্জি প্রতিরোধ

অ্যালার্জি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো কারণ শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলা। এ জন্য রোগীকে সতর্কতার সঙ্গে খুঁজে বের করতে হবে, তার শরীরে কী কী কারণে অ্যালার্জি হয়। এ জন্য বলা হয়ে থাকে অ্যালার্জি চিকিৎসার প্রথম ধাপ হলো হেলথ এডুকেশন। যাদের এই সমস্যা আছে তারা শীতের ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে অথবা রাস্তায় গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে রক্ষা পেতে মুখবন্ধনী বা মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।

চিকিৎসা

যে যে পরিস্থিতিতে অ্যালার্জির উদ্ভব হতে পারে, তা এড়িয়ে চলতে হবে অর্থাৎ অ্যালার্জেন বা অ্যালার্জির কারণ এড়িয়ে চলাই এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। তবে এর সঙ্গে ওষুধ প্রয়োগ করে অনেকটাই উপশম বা মুক্তি পাওয়া যায়। মনে রাখবেন ওষুধপত্র দেওয়া হয় উপসর্গ অনুযায়ী। এ রোগের চিকিৎসায় প্রধান ওষুধ হলো অ্যান্টি-হিস্টামিন, স্টেরয়েড জাতীয় নাকের স্প্রে। এ ছাড়া বয়সভেদে মন্টেলুকাস্ট জাতীয় ট্যাবলেট বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। স্টেরয়েড জাতীয় নাকের স্প্রে এই ক্ষেত্রে একনাগাড়ে অনেকদিন (৩ মাস বা এর অধিক) ব্যবহার করলে নাকের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই নাকের স্প্রে একজন নাক-কান-গলা রোগে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতে, ব্যবহার করবেন। কোনোভাবেই নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে নিজে থেকে কিনে ব্যবহার করা যাবে না।

দীর্ঘমেয়াদি অ্যালার্জি ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যারা অনেকদিন ধরে অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে ভুগছেন এবং ওষুধ দ্বারাও কোনো ফলাফল পান না, তাদের ক্ষেত্রে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ সার্জনরা নাকের ভেতরে ফুলে যাওয়া মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) পুড়িয়ে দিয়ে (Electrocauterization) চিকিৎসা করে থাকেন; তবে সেটা খুব কম। সুখবর হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা অ্যালার্জির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি পদ্ধতি চালু হতে পারে।

নাকের অ্যালার্জিজনিত হাঁচি-সর্দির সুচিকিৎসা না হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থেকে শতকরা ২৫ ভাগ রোগীর হাঁপানি হতে পারে। এ ছাড়া নাকের অ্যালার্জিজনিত সর্দি থেকে সাইনোসাইটিস, নাকের পলিপও হতে পারে। ঘর, পর্দা, বিছানার চাদর ভালোভাবে পরিস্কার রাখুন এবং রাস্তায় বের হলে নাকে রুমাল অথবা মাস্ক ব্যবহার করুন। ঘরের ভেতর পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসার ব্যবস্থা রাখুন। কারও হাঁচিজনিত অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে, হাঁচির উদ্রেক এলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে শিষ্টাচার মেনে হাঁচি দিতে। নিয়ম মেনে চললে ভালো থাকা কোনো কঠিন বিষয় নয়।
[নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ, প্রাক্তন সহকারী রেজিস্ট্রার, সিওমেক হাসপাতাল]