Loading..

প্রকাশনা

৩০ অক্টোবর, ২০২১ ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

বয়ান হযরতজী মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ ছাহেব কান্ধলভী দামাত বারাকাতুহুম বাদ ফজর , শনিবার, ২৩/০৬/১৮ ইং বাংলাওয়ালী মসজিদ বসতি হযরত নিজামুদ্দিন মার্কাজ, দিল্লী, ভারত

 


তিনি চিঠি পড়লেন। চিঠি হাতে থাকতেই থলে উঠালেন। পানির পাত্র রাখলেন। খেজুর রাখলেন। লোটা রাখলেন ওজুর জন্য। মদিনার দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। ২০০০ কী:মি: রাস্তার ছফর পায়দল চললেন। হযরত ওমর রা: দূর থেকে দেখে চিনে ফেললেন। জিম্মাদাররা নিজের অধীনস্থদের চিনতে হবে। দূরে রেখে কাজ করুক বা কাছে রেখে কাজ করুক নিজের সাথীকে যেন চিনতে পারেন কে কী করছেন। হযরত উমায়েরের চুল বড় হয়ে গেছে। চেহারা ধুলিমিশ্রিত হয়ে গেছে। পায়দল সফর করে এসেছেন। হযরত ওমর রা: জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এটা কী হাল করে রেখেছ চেহারা সুরতের ?

 

الحمد لله نحمده ونسوينه ونستغيره وتؤمن به ونتوكل عليه ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له وتشهد أن لا إله إلا الله وحده لاشريك له ونشهد أن سيدنا ونبينا ومولانا محمدا عبده ورسوله صلى الله تعالى عليه وعلى اله وصحبه و بارك وسلم تسليما كیرا كرا و أما بعد فاعوذ بالله من الشيطان الرجیم بسم الله الرحمن الرحيم اللَّهُ يَصطَفي مِنَ المَلائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النّاسِ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَميعٌ بَصيرٌ ২২:৭৫. وقال الله سبحانه وتعالى وإذ ابتلى إبراهيم ربه بكلمات فأتمهن قال إني جاعلك للناس إمامة قال ومن ڈریتی قال لا ينال عهدي الظاليين . وقال عليه الصلاة والسلام أويت في الله ما لم يود أحده

মেরে মুহতারাম দোস্তো বুযুর্গো আর আজিজো!

এই কাজের সাথে আল্লাহপাকের এক খাছ সম্পর্ক আছে। এর সাথে আল্লাহপাকের এক খাছ নেজাম ও দস্তুর হলো এই, আল্লাহপাক তার এই কাজে বান্দাদেরকে খোদ চয়ন ও নির্বাচন করেন। দুনিয়াবী কাজে মানুষ পারস্পরিক সম্পর্কের কারণে আগে বাড়ে। দুনিয়ায় যত ধরণের কাজ আছে এতে আগে বাড়বার জন্য মাধ্যম হলো মাল।

মাল দ্বারা হুকুমত করা মাল দ্বারা নির্বাচন করা মাল দ্বারা আগে বাড়া। মালের দ্বারাই কাউকে পিছে হটানো। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে দুনিয়াতে নিজেকে নির্বাচন করা ও আগে বাড়ানো হয়। এই দস্তুর দুনিয়ার। যেহেতু দুনিয়া আল্লাহপাকের কাছে অভিশপ্ত। মকবুল নয় গ্রহনযোগ্যও নয়। যদি আল্লাহপাকের কাছে দুনিয়ার মূল্য মশার একটি পাখা সমতুল্যও হতো তাহলে কাফেরদেরকে এক ঢোক পানিও দিতেন না।

হাদিসে পাকে ছাফ এসেছে, এই দুনিয়া অপদস্ত। এর কোন গ্রহনযোগ্যতা বা বাস্তবতা মশার পাখা বরাবরও নেই যে কারণে আল্লাহপাকের কাছে এর মাধ্যমে কবুলিয়াত বা গ্রহনযোগ্যতা পাওয়া যেতে পারে না। জাররা পরিমানও এর মূল্য নেই। খুব ধ্যানের সাথে কথা শুনুন। মালের কারণে দ্বীনের লাইনে অনেকের আগে বাড়ার দরওয়াজা বন্ধ। কেউ মালের মাধ্যমে কেউ অন্য কোন সোর্সে আগে বাড়বার প্রচেষ্টা চালায়। এটা দুনিয়া ওয়ালাদের নিয়ম ও তরীকা। দুনিয়ায় শুহরত ও প্রসিদ্ধী হাসেল করা হয় মাখলুক ও মালের মাধ্যমে।

দ্বীনের লাইনে এবং আল্লাহপাকের কাছে কবুলিয়াত হাসেল করা হয় আ’মালের মাধমে। একারণে আগে বাড়ার রাস্তা তো দাওয়াত ও তবলীগের মেহনত। এমন নয় যে মালের দ্বারা এতে কেউ আগে বাড়তে পারে। ইসলামে আগে বাড়ার জন্য নিজের ব্যক্তিগত যোগ্যতার দখল নেই বা অন্য কোন পন্থা নেই। ইসলামে আগে বাড়ার সম্পর্ক আল্লাহপাক আ’মালের ভেতরে রেখেছেন। আল্লাহপাকের জাতে আলীর সাথে সুগভীর সম্পর্কের জন্য সর্বযুগে তাকওয়া ওয়ালা আ’মাল ছিল। “এই কারণে আল্লাহপাকের নিকট সবচেয়ে কাবেলে এহতেরাম (সম্মানের উপযুক্ত) সেইই যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করেন” (৪৯_হুজুরাত-১৩) ।إِنَّ أَكرَمَكُم عِندَ اللَّهِ أَتقاكُم ۚ

এমন বলেননি- তোমাদের ভেতরে যিনি সবচেয়ে বেশী কাবিলিয়ত ও যোগ্যতা ওয়ালা বা মালওয়ালা সে সম্মানের পাত্র। হুজুর সা: ফরমান, এমন বহু লোক আছেন যাদের চুল এলোমেলো অপরিচিত। দরওয়াজা থেকে ধাক্কা দিয়ে হটিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের বাহ্যিক অবস্থা অবর্ণনীয় এত জীর্ণশীর্ণ যে মানুষ তাদের পাত্তা দেয়না। কিন্তু আল্লাহপাকের কাছে তাদের মকবুলিয়াত এতখানি যে তারা যদি আল্লাহর কাছে কোন কসম খেয়ে বসেন তাহলে আল্লাহপাক সাথে সাথে তা করে দেখান।“ রুব্বা আশআছা আগবারা মাছফু’হিনিল আবওয়া’বী লাউ আকসামা আলাল্লাহি লা’বাররাহ”زب أشعث أغبر مصفوح عن الأبواب لو أقسم على الله لأبره

‘এমন বহু লোক আছেন জাহেরী হাল তাদের অতি জরাজীর্ণ। দরওয়াজা থেকে ধাক্কা দিয়ে হটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আল্লাহপাকের সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, কোন ব্যাপারে যদি আল্লাহর কাছে কসম খেয়ে বসেন। আল্লাহপাক সঙ্গে সঙ্গে তা পুরো করে দেখান। এজন্য নয় যে তিনি খুব মালওয়ালা আধিপত্যওয়ালা বরং তাদের হালাত এমন যে, জরাজীর্ণতার কারণে তাদেরকে কেউ পাত্তা দেয়না। কিন্তু আল্লাহপাক তাদের খুব একরাম করবেন। এটা তাদের তাকওয়ার কারণে। তাদেরকে যে কোন খায়ের ও মঙ্গলের কাজে ব্যবহার করা হয়। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁদের একরাম করেন। আহলে খায়েরদেরকে আহলে খায়েরের সঙ্গে একত্রিত করেন ও কাজে সহযোগীতা করেন। الخَبيثاتُ لِلخَبيثينَ وَالخَبيثونَ لِلخَبيثاتِ ۖ وَالطَّيِّباتُ لِلطَّيِّبينَ وَالطَّيِّبونَ لِلطَّيِّباتِ(২৪_সুরা নুর-২৬) একটু খেয়াল করে শুনবেন আমার কথা। এই আয়াতের মর্মতত্ত্ব শুধু এটা নয় যে, নেককারদের বিবাহ নেককারদের সাথে হবে আর বদকারদের বিবাহ বদকারদের সাথে হবে। একটু মনযোগের দরকার; বরং এই আয়াতের মতলব এটাও যে- দুনিয়ায় যত খায়েরের কাজ আছে, খায়েরের কাজের সহযোগীতার জন্য দুনিয়ায় আল্লাহপাক নেককারদেরকে নেককারদের সাথে জুড়ে দিবেন। আর যাদের মধ্যে খায়ের নেই তাদের এবং নেককারদের মাঝে তাফরীক (বিভেদ) পয়দা করে দিবেন। তাদের ভেতরে পরস্পরে ভেদাভেদ ও বিচ্ছিন্নতা তৈরী করে দিবেন। এটা তাদের নির্জনতায় গুনাহের কারণে হবে। (নির্জন মূহুর্তে ও একাকীত্বে আল্লাহকে ভয় করার নাম তাকওয়া ) এজন্য বলেন- তোমাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশী তাকওয়া ওয়ালা তাঁদেরকে বাছাই করে করে দ্বীন ও মানুষের মঙ্গলের জন্য ও খায়েরের জন্য কবুল করেন। তাঁদের থেকে দ্বীনের কাজ নেন।

এক সাহাবী ছিলেন হযরত উমায়ের বিন সা'দ রা:ওমর রা: তাঁকে হিমসের গভর্ণর বানালেন। বললেন, যাও তুমি ওখানে আমীন (গভর্ণর) হয়ে থাকবে। তিনি গেলেন। এক বছরের মধ্যে তিনি হজরত ওমরের সাথে যোগাযোগ করেননি। হযরত ওমর রাঃ এর চিন্তা হলো, এক বছরে তার যত জাকাত উঠেছে সেগুলোর কী করেছেন। আমার কাছে তিনি কোন হিসেব পাঠাননি।

আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করুন। আল্লাহর সাথে যার মোয়ামালা (সম্পৰ্ক) সঠিক হয়ে যায় তার সঙ্গে নেককারদের সম্পর্ক ঠিক করে দেন। খায়েরের কাজের জন্য তাকে কবুল করা হয়। মানুষের মনে তার মহব্বত ঢেলে দেন। কেননা আল্লাহপাক তাকে মহব্বত করেন। এক সাহাবী দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আমার দিলে তাদের মহব্বত ঢেলে দিন ও তাদের সাথে আমাকে শরীক করুন যারা আপনাকে মহব্বত করে ও আপনার ফেরেশতা এবং আপনার নেককার বান্দাদেরকে মহব্বত করে।“আল্লাহুম্মাজ আলনি’ মিম্মাই ইউহিব্বুকা ওয়া ইউহিব্বু মালা’ইকাতিকা ওয়া ইউহিব্বু ঈবাদাকাচ্ছ’লিহি’ন”اللهم اﺟعلﻦىﻢ من يحبك ويجب ملائكتك ويجب عبادك الصالحيএজন্য যে মুত্তাকী হবে তাকে খায়ের ওয়ালাদের সাথে জুড়ে দিবেন। যে মুত্তাকী হবে সে সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকবে। বলেছেন , "ইত্তাকুল্লাহা ওয়া কুনু মায়াচ্ছদিকীন” এটা বুঝতে হবে এই আয়াত কোন মওকার? "ইত্তাকুল্লাহা ওয়া কুনু মায়াচ্ছদিকীন”(৯_তওবা_১১৯) اتَّقُوا اللَّهَ وَكونوا مَعَ الصّادِقينَ

এটা তাদের জন্য এসেছে যারা আল্লাহর দ্বীনের মেহনতের জন্য নকল ও হরকতের উপর আছে তাদের সাথে হয়ে যাও। "ইত্তাকুল্লাহা ওয়া কুনু মায়াচ্ছদিকীন” এজতেমাঈয়তের সাথে তারাই কাজ করতে পারবে যারা তাকওয়া ওয়ালা হবে। আল্লাহপাক তাকওয়া ওয়ালাদের দ্বারা একাম করাবেন। ঐ সাহাবীর একবছর হয়ে গেছে কোন খোজ নেই। কোন খেয়ানত হচ্ছে কীনা ! ওমর রা: চিঠি লিখলেন। এই মর্মে চিঠি লিখলেন যে, চিঠি হাতে পৌঁছামাত্র হাত থেকে চিঠি রাখার আগেই মদীনার দিকে রওয়ানা হয়ে যেও। তিনি চিঠি পড়লেন। চিঠি হাতে থাকতেই থলে উঠালেন। পানির পাত্র রাখলেন । খেজুর রাখলেন। লোটা রাখলেন ওজুর জন্য। মদিনার দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। ২০০০ কী:মি: রাস্তার ছফর পায়দল চললেন ।

হযরত ওমর রা: দূর থেকে তাকে দেখে চিনে ফেললেন। জিম্মাদাররা নিজের অধীনস্থদের চিনতে হবে। দূরে রেখে কাজ করুক বা কাছে রেখে কাজ করুক নিজের আমলাকে যেন চিনতে পারেন কে কী করছেন । হযরত উমায়েরের চুল বড় হয়ে গেছে। চেহারা ধুলিমিশ্রিত হয়ে গেছে। পায়দল সফর করে এসেছেন। হযরত ওমর রা: জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এটা কী হাল করে রেখেছ চেহারা

সুরতের ?

হযরত উমায়ের রা: বললেন, দেখছেন না? আমি মুসলমানের মাল থেকে আমার রক্তকে পাক রেখেছি! আর কী চাই? হযরত ওমর রা: বললেন, জাকাতের সেই মাল কোথায়? যেসব তুমি মানুষের থেকে উসূল করেছ। তিনি বললেন, ওমর! কীসের মাল? এটা জাকাতের মাল ছিল। জাকাতের মাল না আমার আর না আপনার। জাকাতের মাল ফুকারাদের জন্য। আমি ধনীদের থেকে মাল উসুল করে গরীবদেরকে দিয়েছি।

হযরত ওমর রা: বললেন, তুমি পায়দল কেন এসেছ? বহুত খারাপ মুসলমান তারা। এক বছর খেদমত করেছ তাদের অথচ তোমার জন্য কোন সওয়ারীর ব্যবস্থা করেনি। তিনি বললেন, ওমর! আল্লাহকে ভয় করো মুসলমানের গীবত করোনা। আল্লাহপাক গীবত করাকে হারাম করেছেন। ওমর রা: দেখলেন, তাঁর থলেতে শুধু লোটা, খেজুর, পানি। তিনি ঘরে চলে গেলেন।

হজরত ওমর রা: হারেছ নামক একজন সাথীকে ৩০০ আশরাফীসহ পরীক্ষামূলক তার বাড়ীতে পাঠালেন এই বলে যে, তিনি সাদাসিদা খাবার গ্রহন করে থাকেন নাকী আড়ম্বরপূর্ণ বিলাসী আহার গ্রহন করেন এটা যাচাই করতে। হাঁ, এভাবে নিজের অধিনস্থ কাম করনেওয়ালাদের পরীক্ষা করা হতো। হযরত উমায়ের বিন সা'দের বাড়িতে হযরত হারেছ তিন দিন মেহমান হলেন, তার জন্য প্রতিদিন একটি রুটি আসতো। তিন দিন পর উমায়ের বিন সা’দ রা: মেহমানকে দরখাস্ত করলেন। বললেন, আপনি অন্য বাড়িতে চলে যান। আজ তিনদিন যাবৎ আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে না খেয়ে আছি। আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন একটি রুটি তৈরী হয় এটিকে দু’ভাগ করে অর্ধেক আমি এবং অর্ধেক আমার স্ত্রী খেয়ে থাকী। হযরত হারেস চিৎকার দিয়ে উঠলেন। বললেন, তোমার ঘরোয়া জীবন সাদাসিদে নাকী বিলাসিতাপূর্ণ তা জানার জন্য হযরত ওমর রা: আমাকে পাঠিয়েছিলেন। সাথে এই ৩০০ আশরাফি হাদিয়া দিয়ে পাঠিয়েছেন তোমার জন্য। নিজের কাজে ব্যবহার করো।

হযরত উমায়ের রা: তা নিতে অস্বীকৃতী জানালেন। তিনি বললেন, এখানে ফুকারায়ে মুহাজিরিনরা আছেন তাদের মাঝে বন্টন করে দেন। হযরত হারেছ ফিরে যাওয়ার আগে আগেই সবটুকু বন্টন করে দিলেন। হযরত হারেছ ফিরে গিয়ে জানালেন তার ঘরের দারিদ্রতার অবস্থা।

হযরত উমায়েরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই আশরাফি কী করেছ? হযরত উমায়ের রা: বললেন, হে ওমর! যেই মাল তুমি দিয়ে দিয়েছ সেটা জিজ্ঞেস করার হক তোমার নেই। তবে হাঁ, আমি আমার আখেরাতের জন্য তা অগ্রিম পাঠিয়ে দিয়েছি। হযরত ওমর রা: বললেন, উমায়েরকে এই পরিমান গল্লা (শষ্য) দিয়ে দাও আর এই পরিমান কাপড় দিয়ে দাও। হযরত উমায়ের রা: বললেন, না না। আমার গল্লা দরকার নেই। আজকের গল্লা (শষ্য) ঘরে আছে। কালকে আমার গল্লা আল্লাহপাক দিবেন। তিনি বললেন, একদিনের বেশী গল্লা ঘরে রাখা এটা ইসলাম নয়। হাঁ, একটা কাপড় আমার স্ত্রীর জন্য নিচ্ছি, আমার স্ত্রীর কাপড় নেই। এরপর আবার চলে গেলেন। এর কীছুদিন পর হযরত উমায়ের রা: ইন্তেকাল করলেন। তার ইন্তেকালের উপর হযরত ওমর রা: সকল মানুষকে জমা করলেন। বললেন, এই মুহুর্তে যার যা ইচ্ছা আশা করো আর দোয়া করো।

কেউ দোয়া করলো, হে আল্লাহ! আমাকে এত এত মাল দিবেন যেন সব আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে পারি। কেউ দোয়া করলো হে আল্লাহ! আমার এত এত গোলাম হয় যে আমি আল্লাহর রাস্তায় আজাদ করতে পারি। কেউ বললো হে আল্লাহ! আমাকে এত শক্তি আর হাত সুস্থ করে দাও যেন সারাক্ষণ হাজীদের পানি পান করাতে পারি। একেক জন একেক দোয়া করলেন। হযরত ওমর রা: বললেন, আমি কী দোয়া করেছি বলবো?

আমি দোয়া করেছি হে আল্লাহ! হযরত উমায়ের বিন সা'দের মত আমানত ওয়ালা ও তাকওয়া ওয়ালা কর্মী (আমেল) আমার আশপাশে তৈরী করে দাও যেন আমি তাদেরকে দ্বীনের কাজে ব্যবহার করতে পারি। এজন্য আমি বলছিলাম যাঁরা তাকওয়া ওয়ালা হয় আল্লাহপাক তাদেরকে দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী ও নেক লোকদের সহযোগী বানিয়ে দেন। আর যদি খায়েন (খেয়ানতকারী) হয় আর নির্জনতায় গোনাহ থেকে বেঁচে না চলে তাহলে এস্তেমাইয়াত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।

কেননা আল্লাহপাক যেমন মুস্তাগনী (অমুখাপেক্ষী) তেমন আল্লাহপাকের দ্বীন সকলের থেকে অমুখাপেক্ষী। এমন নয় যে, তোমরা রহমতের প্রত্যাশি হবেনা আর জোরপূর্বক তোমাদের প্রতি রহমত ঠেলে দেওয়া হবে। “আনুল ঝিমুকুমু’হা ওয়া আংতুম লাহা কা’রিহুন।”                                                                                                                           তোমরা রহমত (হেদায়েত) থেকে বিমুখ হয়ে থাকবে আর তোমাদিগের জন্য তা অবশ্যাম্ভাবী করে দেওয়া হবে এমন নয়। আল্লাহপাকের জাত মুস্তাগনী (অমুখাপেক্ষী)। তিনি কারো ঠেকা নন। তার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু সকলেই তার প্রতি দুদিকেই ঠেকা। দ্বীনের লাইনেও ঠেকা দুনিয়ার লাইনেও ঠেকা। আমি আরজ করছিলাম নিজেদেরকে আল্লাহপাকের কাছে কবুল করানো ।

আল্লাহ রব্বুল ইজ্জতের কাছে নিজের তায়াল্লুক (সম্পৰ্ক) এমন বানিয়ে লও যেন তিনি তার কাজের জন্য তোমাকে এন্তেখাব করেন (বেছে নেন)। গভীর ভাবে শুনুন , এন্তেখাব এটাকেও বলে যে তাঁর কাজে ব্যবহার করছেন। দেখুন, এন্তেখাবের দলীল হলো এই, আল্লাহ মাফ করুন একটি মুদ্দত (কীছুকাল) তবলীগে চলাকে কেউ কেউ কবুলিয়াত মনে করেন। এটা কবুলিয়তের আলামত নয়। আর এটা কবুলিয়তের সনদ নয়। বরং কবুলিয়াত ও এস্তেকামাতের আলামত হলো মানুষ এর উপর মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর আগে কোন ভরসা নেই।

হযরতজী রহ: কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এস্তেকামাত কী? কেউ মনে করেন উসুলের সাথে কাজ করা। আবার কেউ মনে করেন একটি কাজকে বা আমলকে সর্বদা ধরে রাখা। বলেন, না এগুলো এস্তেকামাত নয়। বলেন, এতেকামত হলো- এই কাজের উপর মৃত্যুবরণ করা। “ওয়ালা তামু তুন্না ইল্লা ওয়া আংতুম মুসলিমুন” (ইমরান-১০২) وَلا تَموتُنَّ إِلّا وَأَنتُم مُسلِمونَএই কাজের উপর মৃত্যুবরণ করা মানে তোমাদের মৃত্যু যেন এতাআতের হালতে আসে। এমন নয় যে অনেকদিন করতে করতে বা বেশী করতে করতে ছেড়ে দিবে।

বরং নতুন হোক কিন্তু এতাআত করতে করতে মৃত্যু হয়। হুজুর সা: বলেছেন, সর্বোত্তম দ্বীন তার যে (ছেড়ে দেয়না) দাওয়াম (অটলতা) এখতিয়ার করে। আমি বলছিলাম এস্তেকামাত মানে এটা নয় যে একাজে দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। বরং প্রশ্ন হলো এ কথার যে মৃত্যু কীসের উপর হলো।“কামা তাহ ইয়াওনা তামু’তু’না ওয়া তাহইয়াওনা কামা তুহশারুন”

كما تحيؤن تموتون وتحيون كما تحشرون

মানে যেমন হায়াত হবে তেমন মৃত্যু, আর যেমন মৃত্যু হবে তেমন হাশর । এই তিনটি একটি অপরটির সংলগ্ন। এজন্য সাহাবায়ে কেরামের ভয় সংক্রান্ত ঘটনা শুনতে থাকুন। তাদের খোদাভীতির ঘটনাবলী শুনলে ভেতরে তাওয়াজু নম্রতা ও তাকওয়া সৃষ্টি হয়। আর নিজের কারনামা কৃতিত্ব চিন্তা করলে ও শুনলে শুনালে অহংকার সৃষ্টি হয়। নিজের কোতাহি তালাশ (নিজের ক্রটি অন্বেষণ) করলে ভয়, তাওয়াজু ও বিনয় পয়দা হয়। নিজের ত্রুটি নিয়ে ভাবতে হবে। নিজের কারনামা ও কৃতিত্ব নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতে থাকলে (দিশেহারা হয়ে) অহংকারী হয়ে পড়বে।

আমরা কীছু না করেই নিজেদের পরিচয় করাই-

দু'জন মানুষ হযরত সালমান ফারসী রা: এর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তাঁর এলাকায় পৌঁছলেন। হযরত সালমান ফারসী রা: সাহাবী ছিলেন। হুজুর সা: যখন তার সঙ্গে কথা বলতেন তখন তৃতীয় কেউ হতোনা। তাঁর সম্মান এত। খন্দক খুন করার মাশওয়ারায় তাঁর রায়ের দখল ছিল।

তারা তাঁর এলাকায় পৌঁছলেন। লোকেরা বলল, সালমান ফারসী রা: বড় সাহাবী। তাঁর সাথে মোলাকাত করো। তারা গিয়ে বললেন, আপনি রসুলের সাহাবী? তিনি বললেন, না। না। আমি সাহাবী নই। শুনুন গভীর ভাবে । এজতেমাঈ কাজে তো ব্যবহার হইনা। আল্লাহ মাফ করুন আমরা কীছু না করেই নিজেদের তাআরুফ (পরিচয়) করাই। আমরা এটা করেছি এটা করেছি। কেউ কেউ নিজ জীবদ্দশাতেই সাওয়ানেহ (জীবনী) লেখাই।

দুইজন বলাবলি করতে লাগলেন ইনি তো সেই সালমান ফারসী নন। চলো চলে যাই। আমাদেরতো ঐ সালমান ফারসী দরকার যিনি হুজুর সা: এর জমানা পেয়েছেন। তারা যেতে লাগলে হযরত সালমান ফারসী ডেকে বললেন, শুনো সালমান ফারসী তো আমিই। আমি হুজুর সা: এর জমানা পেয়েছি। তারা বলল, এটা কীভাবে হতে পারে যে আপনি হুজুর সা: কে দেখেছেন আর আপনি সাহাবী নন। তিনি বলেন, আমি যদি হুজুর সা: এর সঙ্গে হাশরের ময়দানে উঠতে পারি। তাহলে আমি সাহাবী।

আল্লাহপাক এমতেহান-পরীক্ষা নেন যে এই কাজের সত্যতার উপর কার কতটুকু একীন তৈরী হলো-

 এক সাহাবী ছিলেন আবদুল্লাহ বিন সা'দ বিন সারাহ। তার কাজ ছিল হুজুরের উপরে যত ওহি নাজিল হতো তা লিখে রাখা। দেখুন কাজ করতে করতে অনেক সময় দিলে ওয়াসওয়াসা পয়দা হতে পারে। কাজকে ইনকার তো সহজে করতে পারেনা। আল্লাহপাক এমতেহান নেন। কার কতটুকু একীন কোরআনের আয়াতের উপরে হয়েছে। কেউ সরাসরি ইনকার তো করতে পারেনা।

কিন্তু হালাত (এমতেহান) আসলে কেউ টিকে কেউ টিকেনা। ঐ জমানার আম মুসলমানের অবস্থা এই ছিল কোরআনের আয়াতের উপর অগাধ বিশ্বাস ছিল। একদিন আবদুল্লাহ বিন সা'দ বিন সারাহের কী হলো? মানুষের সৃষ্টির ধারাবাহিকতা সংক্রান্ত আয়াতটি নাজিল হচ্ছিল। আয়াতের শেষে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, “ফাতাবা’রা কাল্লাহু আহসানুল খ’লিকীন। (মুমিনুন-১৪)“فَتَبارَكَ اللَّهُ أَحسَنُ الخالِقينَ এই বাক্যটি হুজুরের জবানে উচ্চারিত হওয়ার আগেই সে বলে উঠলো, “ফাতাবা’রা কাল্লাহু আহসানুল খ’লিকীন।“হুজুর সা: বললেন হাঁ; এটা আয়াতের শেষাংশ এটা লিখে রাখো। তিনি বললেন, না না এটা ওহি নয়’ (নাউজুবিল্লাহ)। হুজুর সা: বলা সত্বেও সে তার কথায় অটল রইল। অহি নয় বলে অস্বীকার করে বসলো। পরে সে বলে উঠলো আপনার উপর কোন অহি আসেনা' (নাউজুবিল্লাহ)। নিজের থেকে যা মনে হয় তা লিখে রাখতে বলেন (নাউজুবিল্লাহ)। তার উপর এমতেহান পরীক্ষা নেমে এলো। পুরো নবুওয়তকে তিনি অস্বীকার করে বসলেন।

শেষ পর্যন্ত এই সাহাবী মুরতাদ হয়ে মারা যান। হুজুর সা: বলেন যদি বায়তুল্লাহর পর্দা জড়ানো অবস্থায়ও তাকে পাওয়া যায় তবু তাকে কতল করতে হবে। আল্লাহপাক কাজের মওকা দিবেন ফের এমতেহান নেবেন। আল্লাহপাক দেখতে চান যে এই ব্যক্তি আমার কাজের নাকী অন্য কোন মতলবের। বহু মেহতকারী পুরাতন সাথি অনেকের পায়ের তলে তক্তা উল্টে যেতে দেখা গেছে।

আল্লাহপাক হুকুম আনবেন তবিয়তের খেলাফ (অভ্যাসের উল্টো)। হুকুম আনবেন মেজাজের খেলাফ (রুচি ও মনের উল্টো)। হুকুম আনবেন হাইছিয়তের খেলাফ (অবস্থান ও পদমর্যাদার উল্টো)। এতায়াতের প্রশ্নে যে আহকাম আসে তা বিলকুল তবিয়তের খেলাফ হয়ে থাকে। আম্বিয়া আ: সব মওকায় সর্বাবস্থায় হুকুম পুরো করে দেখাতেন। ইবরাহীম আ: এর উপর যেই হুকুমই এসেছে পুরা করে দেখিয়েছেন।

ফেরেশতাকুলের সামনে যখন আদমকে সেজদার হুকম এসেছে

আল্লাহ পাকের সামনে সেজদা করার হুকুম এলে তো ইবলিছের কোন সমস্যাই ছিলনা। আল্লাহর চেয়ে বড় আর কে হতে পারবে? তাকে তো সেজদা করা সমস্ত মালায়েকা ও আযাজিলের জন্য মুশকীকীছু নয়। ফেরেশতাগণ কেউ সারাক্ষণ সেজদায় কেউ রুকুতে আছেন। কিন্তু হুকুম এসেছে সেজদা করো আদমকে। হায়ছিয়তের (প্রেষ্টিজের) খেলাফ যা হুকুম এসেছে তা মানো। “আনা খয়রুম মিনহু” (তুলনা করলে আমি ভাল) কখনো দিলে আসতে পারে এরা নতুন আমরা পুরাতন উনি নিম্নের আমরা উপরের’ । আল্লাহপাকের হুকুমের ভেতরে ওখানে মুখ্য বিষয় এটা ছিল না কে বড় কে ছোট। বরং মাসআলা (বিষয়টি) ছিল আল্লাহর হুকুম মানার। হুকুম না মানার কারণে বঞ্চিত ও মাহরুমির কারণ হতে হয়েছে।

এটা এতাআ’ত নয় যে, হাঁ আমার হায়ছিয়ত অনুযায়ী আপনার যে হুকুম হোক মানতে তৈরী আছি। কিন্তু যেই হুকুম আপনি দিয়েছেন তা তো আমার হায়ছিয়তের নীচে। এটা কীভাবে মানা যায়! যখন হুকুম ইনকার (অস্বীকার) করেছে আল্লাহ বের করে দিয়েছেন। সকল মাহরুমী ও বঞ্চনার কারণ হয়েছিল। নিজেকে উত্তম মনে করা। তার চেয়ে আমি উত্তম, আমার সামনে তার কী হায়ছিয়ত আছে!!

যখন নিজে বের হয়ে গেছে তখন অন্যের উপর মেহনত করা শুরু করেছে। যার কারণে আমি বের হয়েছি তাকে আমি অবাধ্য করে ছাড়বো। এর জন্য শয়তান আদম ও হাওয়া আ: এর জন্য সীমাহীন হিতাকাঙ্খী সেজেছে। “ইন্নি’লাকুমা’ লামিনান্না’ছিহিন” (আরাফ-২১) وَقاسَمَهُما إِنّي لَكُما لَمِنَ النّاصِحينَআমি তোমাদের সদুপদেশ দিচ্ছি। আমি তোমাদের হিতাকাঙ্খী। যদি না মানো একদিন তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের হয়ে যেতে হবে। যদি সর্বদা জান্নাতে থাকতে চাও যা বলছি শুনো।

শয়তান এমন হালাত শুনাবে- সবক ও পট্টি পড়াবে যে মানুষ অপারগ হয়ে যাবে গলতি অন্যায় ও অবাধ্যতার দিকে পা বাড়াতে। শয়তানের কথায় ফিকীরে পড়ে যাবে যে- এই অবস্থায় কী করা যায়? শয়তান অন্যকে বের করে ছাড়বে। বের হয়ে যাওয়া লোকদের পরিণাম নিয়ে মানুষ পেরেশান হয়ে যায়। এই অবস্থায় এখন কী করা যায়? এদেরকে তো বের করেছে এখন তো আমাদেরকেও বের করা হবে।

পেরেশানীর কী আছে? বের হওয়ার কারণ হুকুমের নাফরমানি আর অবাধ্যতা। দাওয়াতের কাজ করছি আল্লাহর হুকুম মানার জন্য করছি। এ আল্লাহর আম’র (হুকুম)। যেমন এবাদত আল্লাহর হুকুম তেমন দাওয়াত ও এতাআ’ত আল্লাহর হুকুম। হুকুমের তায়াল্লুক (সম্পৰ্ক) আল্লাহর সাথে। হুকুমের ভেতরে ইল্লত (কারণ) খুঁজে ফিরবো না। ইল্লত (কারণ) তালাশের জন্য হুকম পুরা করা নয়। শয়তান হুকুমের মধ্যে ইল্লত খুঁজেছিল। কেন দেওয়া হলো এই হুকম?

শয়তান হযরত আদম ও হাওয়া আ: কে পাঠিয়েছে। যদি এই গাছের থেকে এখন খাও তাহলে আজীবন জান্নাতে থাকতে পারবে। যদি এখন না খাও ইজ্জত ও স্থায়িত্ব মিলবেনা। সুতরাং তারা খেয়ে ফেললেন। এই আশায় খেয়েছিলেন যে জান্নাতে সর্বদা থাকতে পারবেন। ইল্লত (কারণকে) সামনে রেখে নাফরমানি হয়ে গেল। জান্নাতে যা খেতে নিষেধ করা হয়েছিল সেই হুকুম বাস্তবায়ন ছিল মূল বিষয়।

“তোমরা নিজেরা খোদ ফায়সালা করোনা”। আসলে জান্নাতে হামেশা থাকা না থাকার চিন্তা মুখ্য বিষয় নয় বরং হুকুম পুরা করা মুখ্য বিষয়। হুকুম পুরা করতে পারলে কারো পরওয়া নেই। যারা কারণ খুঁজতে থাকে-‘যদি এটা না করি তাহলে ওটা হয়ে যেতে পারে। ওটা না করলে সেটা হয়ে যাবে।‘ তারাই সন্দেহ এবং দো’মন দশায় পড়ে যায়। জান্নাতে হামেশা থাকার উদ্দেশ্যে নাফরমানি করিয়ে ফেলেছে।

পার্থক্য হলো এই যে, শয়তান ভুল করেছিল কিন্তু নাদেম হয়নি (লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়নি)। কিন্তু মানুষ (আদম আ:) নাদেম হয়েছেন লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়েছেন। সত্যিকার নাদামত (অনুতাপ) দরজা বুলন্দ করে দেয়। সত্যিকারের তওবা মানুষকে আগের চেয়ে উঁচু মাকামে নিয়ে যায়। গুনাহ করার আগে যেই স্তরে ছিল তার চেয়ে উপরে চলে যায়। আর যদি গুনাহের উপরে আটল থাকে তাহলে মাহরুম হয়ে যায় অন্যকেও পথভ্রষ্ট করে।

একাকীত্ব জীবন অসহনীয় হয়ে উঠে-

 যারা খায়ের ও কল্যান থেকে সটকে পড়ে- একাকীত্ব জীবন অসহনীয় হয়ে উঠে। তখন তারা চায় মানুষ আমাদের সঙ্গ দিক। তারা বুঝায় তুমি আমাদের সাথে আসো তুমি আমাদের সাথে থাকো। শয়তান অন্যকে ভ্রষ্ট করার কারণও তাই ছিল। আমি কেন একা ভুগবো অন্যকেও ভোগান্তিতে ফেলবো।“ ক’লা ফাবি ঈঝ্ঝাতিকা লা-উগহুয়ি ইয়ান্নাহুম আজমাঈ’ন”(ছোয়াদ-৮২,হিজর-৩৯) قالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغوِيَنَّهُم أَجمَعينَ -তোমার ইজ্জতের কসম! আমি সবাইকে গোমরাহ করে ছাড়বো। এজন্য নিজের হায়ছিয়তকে কোরবানী করো। এই কাজে যখন আগে বেড়ে যাবে তখন মালের খরচ সহজ হয়ে যাবে । হুকম পালনের জন্য হায়ছিয়তকে কোরবানী করা মালের কোরবানীর চেয়ে অনেক কঠিন। মালের কোরবানী করা এই কাজে এবতেদায়ী (প্রাইমারী) জিনিস। যে ব্যাক্তি এই কাজে আগে বাড়বে তার সামনে এমতেহান আসবে, এখতেলাফ আসবে।

হুকুম আসবে হায়ছিয়তের খেলাফ। আদম আ:কে সেজদা দেওয়ার হুকুম ইবলিসের হায়ছিয়তের খেলাফ ছিল । ইবরাহিম আ: এর জজবা ছিল ছেলের প্রতি ভালবাসা। তার উপর জবেহের হুকুম এসেছে জজবার খেলাফ। আল্লাহ হুকুম দেন পরীক্ষার জন্য- কষ্টে ফেলার জন্য নয়। আল্লাহপাক হুকুম দেন। দেখতে চান বান্দা কী ইল্লত (কারণ) তালাশ করে, নাকী হুকুমের সামনে মাথা পেতে দেয়। ইবলিসের অধপতনের মূলে ছিল সে হুকুমের কারণ তালাশ করেছিল। আমি তো পুরানো সৃষ্টি- এই নতুন সৃষ্টির সামনে কেন সেজদা করতে হবে আমাকে?

ইবরাহীম আ: জবেহের কারণ জিজ্ঞেস করেননি। ছেলেকে জবেহ করে দাও। সঙ্গে সঙ্গে ছুরি চালিয়ে দিয়েছেন। কারো প্রশ্নের ধার ধারেননি- ‘এত ছোট বাচ্চার জবেহের কী আছে। ছোট বাচ্চা তারও তো একটা এখতিয়ার আছে। নানা প্রশ্নের তলানীতে পড়েননি । আল্লাহর এতায়াত বলা হয় সেটাকে। যা বলা হয় তা করে ফেলা। 'ইফ আল মা’তুউমার’-(ছফফাত-১০২) افعَل ما تُؤمَر سَتَجِدُني إِن شاءَ اللَّهُ مِنَ الصّابِرينَযা হুকুম করা হয়েছে তা করে ফেলুন।

যখন কোন কাজের হুকুম করা হয় সেই কাজে রোকাওট (বাধা ও সমস্যা) তখন পয়দা হয় যখন কাম করনেওয়ালারা কারণ অনুসন্ধান করতে থাকে। এটা কেন করানো হচ্ছে’? ‘এটা ছিলনা এটা করানো হচ্ছে, ওটা ছিলনা এখন ওটা করানো হচ্ছে। প্রত্যেক মানুষের একটা মামুল (অভ্যাস) থাকে। সেই মামুলের দিকে তার নজর থাকে। মামুল থেকে আগে বেড়ে কাজ করাটাই তরক্কী ও উদ্দেশ্য।

আগে এটা করতাম এখন ওটা করতে হবে মানুষ যে যাই বলুক। দুনিয়াওয়ালাদের ব্যাপারে আগে বাড়লে বলে তরক্তি করছে। ঠেলাগাড়ি চালাতে চালাতে এখন দোকান নিয়ে বসেছে। কেউ বলেনা এটা তো নতুন কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর যদি দ্বীনের কাজের তরক্কী হয় এক শেকেল থেকে আরেক শেকেলে উন্নত হয় তাহলে বলাবলি চলে- “এটা কী নতুন শুরু হয়ে গেলো।“ আল্লাহ রবুল ইজ্জত প্রত্যেক যুগে এতায়াতের পরীক্ষা নেন ।

আল্লাহপাক দেখেন যে, মামুল একটা চলছিল এর খেলাফ আরেকটি হুকুম দিয়ে দেখেন যে, মামুল ও অভ্যাস ছেড়ে কে হুকুমের দিকে আগে বাড়ে। এদের এস্তেমাইয়াত কতটুকু? এজতেমাঈয়তের পরীক্ষা নেন এতায়াতের মাধ্যমে। এরা কী একত্রিত নাকী বিক্ষিপ্ত । জজবার খেলাফ হুকুম দেন । আল্লাহপাক জানতে চান এরা হুকুম পুরা করে নাকী হুকুমের কারণ তালাশে লেগে যায়।

ওজাহ বা কারণ সে জানতে চায় যার ভেতরে- “আমাকে জিজ্ঞেস করা হোক এই মনোভাব আছে। সাহাবাগণ বলতেন এটা আল্লাহ ও তার রাসুল ভাল জানেন । ইবরাহীম আ: বাচ্চাকে জবেহের কারণ জানতে চাননি। বলেননি যে বাচ্চা বড় হোক তার কথার তো এতেবার (গুরুত্ব) আছে । হুকুম এলে কেউ কেউ ভাবে সময় তো আরেকটা ছিল এখন তো সেই সময়টা নেই। এখনতো সেই হুকুম নেই ।

তোমাদের জজবা বাচ্চা পালার আর ইবরাহীম আঃ এর জজবা ছেলেকে জবেহ করার। এভাবে হুজুর সা: সাহাবাদের মাঝে এস্তেমাইয়াত ও এতায়াত কে পরীক্ষা করেছেন। এক সাহাবী তার বাবাকে খুৰ মহব্বত করতেন। হুজুর সা: বললেন, যাও তোমার বাবার মাথা কেটে আনো। সঙ্গে সঙ্গে দৌড় দিল কারণ তালাশ করেননি। কী ব্যাপার কোথায় যাও? আপনার হুকুম হয়েছে বাবার মাথা কাটতে। বলেন- না না আমি তো তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছি যে- আমার মহব্বত বেশী নাকী তোমার বাবার মহব্বত।

এজতেমাঈ কাজে ফায়সালা জরুরী-

কেউ যদি কারণ জিজ্ঞেস করে করে কাজ করছে তাহলে তো সে হুকুম মনে করে করছে না । হুকম আসবে মামুলের খেলাফ। উম্মতের মাঝে এস্তেমাইয়াত দেখতে আল্লাহপাক হুকুম আনবেন। কীছু লোকের এই রায় কারো ঐ রায়। কিন্তু প্রত্যেক এজতেমাঈ কাজে ফায়সালা জরুরী। ফায়সালা এজন্য ফরজ যে উম্মতের মধ্যে যেন তাকসিম না হয় ।

যদি ফায়সালা না হয় উম্মত গ্রূপ গ্রূপ হয়ে যাবে। যাদের রায় যাদের সাথে মিলবে তাদের সাথে তারা জুড়বে। রায়ওয়ালা রায়ওয়ালারা বিভক্ত হয়ে যাবে। তা হবেনা- সকলে এক রায়ের উপরে জমতে হবে। এজন্য ফায়সালা দরকার । ইমাম ছাড়া নামাজের অবস্থা যেমন ‘জামাত’ বলা যায়না। যদিও এক লক্ষ মানুষ। এক ময়দানে নামাজ পড়ছে রুকু, সেজদা, জলসা, কাদা, কওমা সব এক সাথে করছে কিন্তু ইমাম নেই তবু ‘জামাত’ বলা যাবেনা।

হাঁ এক মুক্তাদি আর একজন ইমাম তবু ‘জামাত' বলা হবে। এক লক্ষ মানুষের নামাজ হওয়া স্বত্ত্বেও এনফেরাদী নামাজ বলা হবে। এটা বলা হয়নি আকছারিয়ত হওয়ার কারণে ১ লক্ষকে ‘জামাত’ বলা হবে। আল্লাহপাক কেবলাকে বদলালেন দেখতে চাইলেন কে রসুলের এত্তেবা করে- আর কে পৃষ্ঠপ্রদর্শণ করে। নামাজ চলাকালিন সময়ে হুকুম এসে পড়েছে কেউ বলেননি যে, নামাজই তো পড়া দরকার একদিকে পড়লেই হলো। কেউ বলেননি- এখন জোহর চলছে আগে জোহর পড়তে দাও। বা বলেননি এখনি কেবলা পরিবর্তনের কী আছে, ঠিক আছে আছরের থেকে কার্যকর করা হবে।

নামাজ এমন এক এবাদত যে এর মাঝে কোন ওয়াকফা (বিরতি) নেই।। নামাজে সার্বক্ষণিক ব্যস্ততা ও জিকীরের উপর থাকতে হয়। তাকবীরে তাহরিমা থেকে সালাম ফেরানো পর্যন্ত কেয়ামে, কেরাতে, রুকুতে, তাসবীহে কোন জায়গায় কোন ফাক নেই। নামাজের আমল মুছালছাল মাঝে কোন ওয়াকফা নেই। এর মাঝামাঝি সময়ে হুকুম এনেছেন। দুই রাকাত হয়েছে এমতাবস্থায়। হুকুম এনেছেন। ‘আপনি আপনার মুখ কাবার দিকে করুন।‘ (বাকারা-১৪৪) فَوَلِّ وَجهَكَ شَطرَ المَسجِدِ الحَرامِ ۚ নামাজের মাঝামাঝি সময়ে হুকুম আসামাত্র সাথে সাথে হুজুর সা: ঘুরে গেছেন সাহাবাগণও ঘুরে গেছেন।

আল্লাহপাক দেখতে চান পরস্পরে এস্তেমাইয়াত কতটুকু আছে। কে রসুলের এত্তেবা করে আর কে সাবেক মামুলের উপর আঁকড়ে থাকে। “ওয়ামা জায়ালনাল কীবলাতাল্লাতি কুংতা আলাইহা ইল্লা’লি নায়ালামা মাই ইয়াত্তাবিউর রসু’লা” (বাকারা-১৪৩)। وَما جَعَلنَا القِبلَةَ الَّتي كُنتَ عَلَيها إِلّا لِنَعلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسولَ“আপনি যে কেবলার উপর ছিলেন, তাকে আমি এজন্যই কেবলা করেছিলাম, যাতে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কে রসূলের অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়।এসব ঘটনাবলী শোনানো এজন্য যে আল্লাহপাকের নিকট এন্তেখাবের জন্য ও কবুল করানোর জন্য এসব কুরবানী ও এসব সিফাত দরকার।

এতায়াতের সামনে নিজের জজবাকে নিজের হায়ছিয়তকে নিজের মামুলকে সবকীছু ছাড়তে হবে। এতায়াতের উপরে এনে নিজেকে কবুল করাতে হবে। আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত নিজের বান্দাদেরকে নিজের কাজের জন্য এভাবে এন্তেখাব করেন। এন্তেখাবের আওতায় পড়তে হলে এই সিফত দরকার। সবচেয়ে আহাম ও গুরুত্বপূর্ণ সিফত হলো ‘ছবর।

নাগাওয়ারী (অপছন্দনীয় অবস্থা) ইসলামে বহুত আছে । যিনি নাগওয়ারার উপর দিয়ে ছবর করে অতিবাহিত হবেন তিনি খায়ের পাবেন। সাহাবায়ে কেরাম বলেন আমরা সকল খায়ের পেয়েছি নাগওয়ারির ভেতর দিয়ে। নাগাওয়ারির ভেতর দিয়ে গমন হলে খায়ের পর্যন্ত পৌছবে। এজন্য প্রত্যেক নাগাওয়ারীর উপর দিয়ে ছবরের সাথে চলতে থাকতে হবে।

আগে বাড়া তাআল্লুকাতের মাধ্যমে (কারো সঙ্গে খাতির থাকলে) হয়না। আগে বাড়া সিফাতের দ্বারা হয়। সবচেয়ে বড় সিফত ছবর । আর ছবর এমন একটি সিফত যা নবুওতের আলামতের একটি নিদর্শন। এটা আলামতে নবুওয়ত, সিফাতে নবুওয়ত। নবুওয়তের অনেক আলামত আছে। নবির নবি হওয়ার দলীল ছবর’ । হুজুর সা: কে যত পরীক্ষা করা হয়েছে আর কাউকে এত পরীক্ষা করা হয়নি। তার পরীক্ষা ছবরের ভেতরেও হয়েছে।

বিজাতি ও বিধর্মীরা হুজুর সা:কে ছবরের মাধ্যমে পরীক্ষা নিত । তিনি এর উপর যে ছবর অবলম্বন করেছেন তাতে বিজাতিরা বুঝতে পেরেছে যে ইনি আমাদের হেদায়েত ও মঙ্গল চান। যদি তিনি আমাদের ভাল না চাইতেন তাহলে তিনি আমাদের নির্যাতনের পরও এই পরিমান ছবর করতেন না। নির্যাতন পাওয়ার পরও যে ছবর এখতিয়ার করে বুঝা যায় যে- সে তাদের ভাল চায়’ । যে অন্যের হেদায়েত চায় সে ছবর করে । ছবরের দ্বারা হেদায়েতের রাস্তা খুলে । وَجَعَلنا مِنهُم أَئِمَّةً يَهدونَ بِأَمرِنا لَمّا صَبَروا“ওয়া জায়ালনা’মিনহুম আ’ইম্মাতাই ইয়াহদু’না বি আমরিনা লাম্মা ছবারু ” (৩২_সেজদা-২৪)  তারা সবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে আমির মনোনীত করেছিলাম।‘ কওমের হেদায়েতের জরিয়া হয় আম্বিয়া আ:দের ছবর করার দ্বারা । কেয়ামত পর্যন্ত এই ধারাবহিকতা চলতে থাকবে। এই কাজে যে যত ছবর করবে আল্লাহপাক তার দ্বারা কাজ নিবেন । “ওয়া জায়ালনা’মিনহুম আ’ইম্মাতাই ইয়াহদুনা বি আমরিনা লাম্মা ছবারু ”, এটাই উসূল-হেদায়েতের কাজ ছবর করনে ওয়ালাদের থেকে নিবেন। এজন্য হুজুর সা: কে লোকেরা ছবরের পরীক্ষা নিত।।

যায়েদ বিন সা’না ইহুদীদের বড় আলেম। তিনি আসমানী কীতাবে পেয়েছেন হুজুর সা: এর সিফাতের বর্ণনা- তার চেহারা , হুলিয়া মোবারক, সিফাত, শেকেল ও সূরত ইত্যাদি। তার তালাশে বের হয়ে যখন খোদ হুজুর সা: কে দেখেছেন। সঙ্গে সঙ্গে একীন হয়ে গেছে ইনিই শেষ নবি। কিন্তু পরীক্ষামূলক তার একটি বিষয় জানার ছিল। সে কীতাবের বর্ণনায় পেয়েছিল , শেষ নবির ছবর ও ধৈর্য্যের উচ্চতা এত হবে যে তাঁকে যতই নির্যাতন, জ্বালা-যন্ত্রণা ও বিরক্ত করা হবে ততই তার ধৈর্য্যের পরিচয় বাড়বে। ছবরের কোন মুদ্দত নেই। অর্থাৎ ছবরের শুধু সিঁড়ি আছে কিন্তু কোন ছাদ নেই।

ছবরের কোন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এক বছর দুই বছর চার বছর কোন মুদ্দত (সীমা) নেই। হুজর সা: বলেন হে আবু জর! ছবর করতে থাকবে। করতে থাকবে যদিও তোমাকে বের করে দেওয়া হবে। যেখানে পাঠানো হয় চলে যেও ছবর করতে থেকো এমনকী আমার সাথে হাউজে কাউছারে এসে মিলিত হবে। হে আবু জর! ছবরের কোন মুদ্দত নেই ছবর করতে করতে আমার সাথে হাউজে কাউসারে মিলিত হবে। ইহুদি আলেম পরীক্ষা চালানোর জন্য যে তার সাথে বাড়াবাড়ি করা হলে ধৈর্য্যের চরম পরিচয় দিবেন- সেই সুযোগের তালাশে রইল।।

একদিন হুজুর সা: মসজিদে নববীতে তাশরীফ নিয়েছেন। যায়েদ বিন ছানা এলো। মসজিদে কথা চলছিল, মুসলমানদের জন্য কর্জ দরকার। সুযোগের মুহুর্তে যায়েদ বিন সানা কর্জ দিতে প্রস্তুত হয়ে গেল। হুজুর সা: নির্দিষ্ট পরিমান খেজুর মেপে ওজন করে নিবেন পরিশোধের দিন তারিখ ধার্য্য করা হলো। কর্জ পরিশোধের সময়সীমা এখনো বাকী আছে। সময়সীমা না আসতেই একদিন সে এলো। অস্বাভাবিক ভাবে ও দূর্ব্যবহার করে কর্জ ফেরৎ চাইল। তার প্রয়োজন হলে সে স্বাভাবিকভাবে তাকাজা করলেই হুজুর সা: কর্জ পরিশোধ করে দিতেন। হুজুর সা: এর বাণী হলো, পাওনাদার চাই তারিখের আগে চেয়ে বসে বা পরে তার পাওনা তাকে দিয়ে দাও। না দিতে পারলে র্দুব্যবহার করোনা।

জায়েদ বিন সানার জন্য নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার ছিল। কিন্তু তাতে তো যায়েদ বিন সা’নার উদ্দেশ্য নবির ধৈর্য্যের পরীক্ষা করা হয়না। হুজুর সা: জান্নাতুল বাকীতে অবস্থান করছিলেন। যায়েদ বিন সানা শেষ সময়সীমার ৩দিন আগে এসে হুজুর সা: এর বুকের কাপড় চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা দিল। আমরা সাথী হলে বলতাম আমার তো কোন দোষ নেই, আমার কোন ভূল নেই। বয়ান করেছি চেয়ারে, কিন্তু যখন কোন কষ্ট আসে তখন বলি- রাস্তায় আমার সাথে এই দূর্ব্যবহার কেন? নবিওয়ালা কাজ নিয়ে চলনেওয়ালার মুখে শেকায়েত!! আমাদের সাথে এমন কেন করা হচ্ছে? নবিওয়ালা কাজে তো নবিওয়ালা কষ্ট আসবে। ষ্টেশন পর্যন্ত যেতে তার সামনে সব কীছু মিলবে। বাজার মিলবে, নর্দমা মিলবে, এর মাঝে যাকীছু আছে সব পার হতে হবে।

নবিওয়ালা রাস্তা নবিওয়ালা সকল কষ্ট মসিবত নির্যাতন মিলবে। কাজ তো করে নবিওয়ালা কিন্তু শেকায়েত! শেকায়েত করোনা। দাওয়াত ওয়ালা কাজ নবিওয়ালা কাজ এই কাজে মসিবত আসবেই। হযরতজী রহ: ফরমাইতেন, এই রাস্তার সকল কষ্টকে নবিওয়ালা কষ্ট মনে করো।

হুজুর সা:কে বলা হয়েছে, কাফেরদের পক্ষ থেকে আপনাকে কটু কথা যা বলা হয় এটা আপনার জন্য খাছ নয়। সবকীছু আগের নবিদের উপর বলা হয়েছিল ও অতিবাহিত হয়েছিল । “ মা’জা’ ক্বলু’লাকা ইল্লা’মা’ক্বদ ক্বী’লাহুম” আমরা চাই সুনাম, এস্তেকবাল ও একরামের সাথে ইজ্জত সম্মানের সাথে এই কাজ করবো। অথচ এই কাজে বদনামী জিল্লতি নবিদের খাছ ছিফত ও নবুওয়তের খাছিয়ত।

এজন্য ভয় করা চাই। কোন নবি নেই যাকে কলঙ্কিত করা হয়নি। নাউজুবিল্লাহ! মুয়াশারার লাইনেও আম্বিয়াদের উপর বদনাম লাগানো হয়েছিল। এজন্য কাজ ছেড়ে বসে থাকা যাবেনা। এমন নয় যে এখন হালাত খারাপ এখন আপাতত কাজ করার দরকার নেই। কেননা তোহমত ও অপবাদ লেগেছে। অবস্থা ঠিক হলে মোকদ্দমায় কামিয়াব হলে তারপর আবার কাজ করা যাবে। কাজ করতে থাকতে হবে। হজরত ইউসুফ আ: জেলখানায় বিপজ্জনক অবস্থায় বসেও এবং বদনামের সাথে থেকেও দাওয়াতের কাজে লেগেছিলেন। মেহনত চালিয়েছেন।

কাজ বন্ধ করার জন্য বিবির উপর তোহমত লাগানো হলো-

দায়িকে কলঙ্কিত ও বদনাম করা হয় এজন্য যেন মানুষের দৃষ্টিতে তার গ্রহনযোগ্যতা কমে যায়। যেন মানুষ তার কথা না শুনে। মেহনত ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ে। হুজুর সা: এর কাজ বন্ধ করার জন্য বিবির উপর তহোমত লাগানো হলো। যেন মানুষ তাকে খারাপ নজরে দেখে তাঁর কথা গ্রহনযোগ্য না হয়। ‘তার এই দোষ’ ‘তার ঐ দোষ’ যেন মানুষ তাঁর কথা না শুনে। কিন্তু তিনি কাজ ছেড়ে বসে থাকেননি। নবি আ: আয়েব থেকে পাক হওয়া চাই। (ওহির মাধ্যমে। পবিত্রতার ঘোষনা দিয়েছেন)। “ফাবার্রা আহুল্লা’হু মিম্মা ক্ব’লু”। আল্লাহপাক কওমকে এর বদল দেখিয়ে আয়াত নাজেল করে নবির স্ত্রীর পবিত্রতা জানিয়ে দিলেন। এটা দেখিয়ে দিলেন যে, নবির ভেতরে ভেজাল নেই। তোমরাই গলদ ও অসত্য বলতেছ। এখন সেই অপকৌশল অবলম্বন করছে মুসলমান মুসলমানদের মধ্যে। কাজ করনেওয়ালা কাজ করনেওয়ালার বিরুদ্ধে কলঙ্ক লেপন করছে। যেন লোক সমাজে তার গ্রহনযোগ্যতা শেষ হয়ে যায়। মানুষ তার কথা না শুনে।

তার সম্মান পড়ে যাক আর আমাদের মাকাম বাড়ে। আশ্চর্য কথা ! (অথচ মুসলমানের দোষকে লুকানোর হুকুম এসেছে) মুসলমানকে অপদস্ত করনেওয়ালা আল্লাহর দৃষ্টিতে আগেই অপদস্ত হয়ে গেছে। এখন কোথ্থেকে তার ইজ্জত মিলবে? আল্লাহপাকের ওখানে ফায়সালা হয়েছে তার জিল্লতের আর সে অসদুপায়ে চেষ্টা করছে ইজ্জত হাসিলের জন্য! মনে করছে এদের বদনাম হয়ে যাবে আর আমরা আগে বেড়ে যাবো।

এজন্য দাওয়াতের ময়দানে বদনামের সাথেই লেগে থাকতে বলা হয়েছে। ফরমান, এই রাস্তায় তোহমত (অপবাদ) লাগবে। তাহলে কী করতে হবে? এদেরকে মাফ করো আর কাজে লেগে যাও। যদি তোমাদের ও আল্লাহপাকের মাঝে মোয়ামালা সঠিক হয়ে যায় তাকওয়া অবলম্বন করো তাহলে আল্লাহপাক সকল অপবাদ থেকে মুক্ত করবেন। সম্মান বৃদ্ধি করবেন। হুজুর সা: কে মুত্তাহাম (কলঙ্কিত) করার পাঁয়তারা এজন্য করা হয়েছিল যেন দাওয়াতের কাজ স্থবির হয়ে যায়।

হযরত আয়েশা রা: এর উপর তোহমত লাগানো হয়েছিল। আর এটাকে মোনাফিকরা খুব ঘটা করে ছড়িয়েছিল যেন তাঁর পরিবার হেদায়েতের জরিয়া না হতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা তার পরিবারের নির্দোষ হওয়ার ও পবিত্রতার আয়াত নাজিল করেছেন। যারা অপবাদ ছড়িয়েছিল, রুছওয়া (অপদস্ত) করার চেষ্টা করেছিল, আল্লাহপাক তাদেরকে রুছওয়া (অপদস্ত) করে দিয়েছেন।

আর আল্লাহপাকের দস্তুর হলো এই যে, যারা দুনিয়ায় ফেতনা ও ফাহেশা ছড়াতে চেষ্টা করে আর মোমেনদেরকে অপদস্ত করতে চেষ্টারত থাকে তাদেরকে আলাহপাক ডবল আজাব দিবেন। দুনিয়ায় জিল্লতি ও অপদস্ত করবেন আর আখেরাতে রয়েছে শক্ত আজাব।।“ইন্নাল্লাজিনা ইউ হিব্বু’না আংতাশি’য়াল ফা’হিসাতা ফিল্লাজিনা আ’মানু লাহুম আজাবুন আলিমুন ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ”(২৪_নুর_১৯) إِنَّ الَّذينَ يُحِبّونَ أَن تَشيعَ الفاحِشَةُ فِي الَّذينَ آمَنوا لَهُم عَذابٌ أَليمٌ فِي الدُّنيا وَالآخِرَةِ ۚ

“যারা পছন্দ করে ঈমানদারদের মাঝে কটু কথার ছড়াছড়ি হোক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে কঠিন আজাব”। এ জাতীয় লোকদের উভয় জগতে আজাৰ হবে । দুনিয়ায় তাদের আজাৰ হলো জিল্লতি আর সাহারা (পায়ের নীচের ঠাই) সরে যাবে। আর আখেরাতে তো আজাব আলাদা আছেই। এই কাজে তোহমত লাগতে থাকবে। এই কাজের থেকে ফারেগ হওয়া যাবেনা। কাজ করতে থাকো এবং আল্লাহ তায়ালার সাথে মোয়ামালা দুরস্ত রাখো । যে আল্লাহপাক ও তার মাঝের মোয়ামালা ঠিক করে নেয় তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহপাক তার ও মাখলুকের মধ্যকার মোয়ামালা অতিসত্বর ঠিক করে দেবেন।।

যায়েদ বিন ছানা হুজুর সা:এর সাথে বাড়াবাড়ি করেছে। তার কাপড় ধরে টান দিয়েছে, তাঁকে ধাক্কা দিয়েছে। বদসুলুকী করেছে। নিজের হকের মোতালাবা (দাবি) করেছে। পাওনা পাবে স্বাভাবিক ভাবে চাইতে পারে কিন্তু সখতি (কর্কশতা ও নিষ্ঠুরতা) অবলম্বন করেছে । হযরত ওমর রা: গর্জে গেলেন । যায়েদ বিন ছানাকে কতল করার জন্য উদ্যত হলেন । হুজুর সা: ওমর রা: কে থামিয়ে দিলেন। পক্ষপাতিত্বের সুযোগ দিলেননা ।।

গভীর ভাবে শুনুন, হুজুরের তালীম হলো, অন্যায়ের যে হেমায়েত করে পক্ষপাতিত্ব করে তাকে দাবাও। আর যে তোমাকে কষ্ট দেয় তাকে পুরস্কৃত করো। যে অন্যায়ের পক্ষ নিয়ে তোমার সাহায্য করে তাকে দাবিয়ে রাখো। এখানে মোয়া মালা (ব্যাপারটা) পুরোপুরি উল্টো (যে অন্যারের সাহায্য করে তাকে বাহ বাহ দেওয়া হয়)। বর্তমানে ব্যবহারটা হলো, যেকোন মূল্যে কষ্টদাতাদের মোকাবালা করা। পক্ষপাতিত্ব কারীদের সমীহ করা হয়, বলা হয় এরা আমাদের লোক ওরা আমাদের লোক।

আমি সত্য বলছি, আজ উম্মত বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ হলো, যারা (না বুঝে কষ্ট দেয়) তাদের সাথে মোকাবেলার স্পৃহা ও প্রতিশোধ নেওয়া। অপরদিকে অন্যায়ের পক্ষপাতিত্ব কারীদেরকে সহযোগীতা করা। অর্থাৎ যারা পক্ষপাতিত্ব করে তাদেরকে আমাদের লোক মনে করে কাছে রাখা। আর যারা বিরোধীত করে তাদেরকে পর মনে করে দুরে রাখা । অথচ হুজুর সা: তার মেহনতের দ্বারা এটা খতম করে দিয়েছেন।

বললেন, হে ওমর! তুমি এটা কী করলে? তুমি আমাকে বলতে আপনি তার হক আদায় করে দিন । তুমি তাকে বলতে ভদ্রভাবে তোমার হকের তলব করো। তুমি তাকে তালীম দিতে ইসলাম ধর্মে হকের তলৰ কীভাবে করা হয়। ইসলাম কী শেখায় কীভাবে হক চাইতে হয় । সবাইকে মোয়াল্লিম বানিয়েছেন।

মোয়াল্লিম মানে কেউ যদি জাহেলী আচরণ করে তাহলে তাকে ইসলামী আচরণ দিয়ে শিখিয়ে দাও । ওমর! তোমার ভুল হয়ে গেছে। তুমি তলোয়ার বের করে ফেলেছ। তোমার উচিৎ ছিল তাকে ইসলামী তরীকা বলতে, ইসলামী তালীম দিতে। হুজুর সা: বললেন, যাও ওমর! তাকে নিয়ে যাও। তাকে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও আর বিশ ছা’ খেজুর অতিরিক্ত দিয়ে দাও। কষ্টদাতাদের পুরস্কৃত করো। তার হক আদায় করে দিয়েছেন, এখন বিশ ছা' খেজুর অতিরিক্ত দিচ্ছেন।

যায়েদ বিন ছানা জিজ্ঞেস করলেন, ওমর! হক তো পেয়েছি। অতিরিক্ত ২০ ছা কীসের? বলেন, এটা হুজুর সা: এর হুকুম। তিনি বলেছেন, তোমার হক আদায় করে দিয়ে আরো অতিরিক্ত ২০ ছা’ এহছান করতে কেননা আমি তোমার আচরণে বাড়াবাড়ি করেছিলাম। হযরত ওমরের তলোয়ার বের করার কারণে বলেছেন অতিরিক্ত ২০ ছা’ বেশী দিতে।

যায়েদ বিন ছানা বলে উঠল, তিনি হক নবি। আমি বাড়াবাড়ি করেছি কিন্তু তিনি পুরস্কৃত করেছেন। দূর্ব্যবহারের বদলায় দূর্ব্যবহার করেননি। দূর্ব্যবহারের বদলায় এহছান করেছেন। এহছানের বদলায় এহসান এটা তো বড় কীছু নয়। দূর্ব্যবহারের বদলায় এহছান এটা নবিয়ালা তরীকা। দূর্ব্যবহারের বদলা দূর্ব্যবহার নয়, এটা ফাসাদের রাস্তা।

আজ তো সাথীদের এই কাজে দীর্ঘ সময় পার হলেও মুখে থেকে বের হয়। খারাপের বদলে খারাপ করো। অথচ আল্লাহপাক বলেন,”ইদফা’আ বিল্লাতি হিয়া আহসান, ফাইজাল্লাজি’ বাইনাকা ওয়া বাইনাহুম য়াদা’ওয়াতুং কায়ান্নাহু ওয়ালিউন হামিম”(৪১:৩৪) وَلا تَستَوِي الحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادفَع بِالَّتي هِيَ أَحسَنُ فَإِذَا الَّذي بَينَكَ وَبَينَهُ عَداوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَميمٌ

কষ্টদাতাদের সাথে এহসানের মোয়ামালা করো। যদি তোমার এহসান আল্লাহপাকের কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পুরা হয়ে যায় ও আল্লাহর কাছে পছন্দ হয়ে যায়- তাহলে শত্রুর অন্তর আল্লাহর হাতে তাকে তোমার জন্য অন্তরঙ্গ বন্ধু বানিয়ে দিবেন। চব্বিশ ঘন্টা যে ব্যক্তি হুজুর সা: এর কতলের ষড়যন্ত্র করতো সে এসে হুজুরের চির সাহায্যকারী হয়ে গেছে।  যে এই রাস্তায় ছবর করতে থাকবে আল্লাহপাক তার ছবরের কারণে মানুষের অন্তর থেকে দুশমনি ও শত্রুতা বের করে দিয়ে মহব্বত পয়দা করে দিবেন। এটা ছবরের ফায়দা। মুজাহিদের কুরবানী ও ছবরের কারণে আল্লাহ দশমনের দিলের থেকে দুশমনি বের করে দেন। হযরত ওমরের ইসলামের সঙ্গে সংঘর্ষ ছিল। বহু কাফের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা কোনদিন ইসলাম কবুল করবেনা। যেকোন মূল্যে ইসলামকে মিটাতে হবে।

আর তাদের দ্বারা এমন কাজ হয়েছে যা অন্যদের দ্বারা খুব কমই হয়েছে। ওমর রাঃ এর ইসলাম গ্রহনের পেছনে হুজুর সাঃ এই দোয়া করেননি যে হে আল্লাহ! ওমরকে খতম করো। আমরা অনেকে মনে করি যে অমুক ব্যক্তি যদি না হতো তাহলে ইসলামের ফায়দা হতো। অমুক ব্যক্তি যদি না হতো তাহলে ইসলামের বিজয় হতো। যদি অমুক না হতো তাহলে অবস্থা খারাপ হতোনা ।

এমন কোন ব্যক্তি মিলবেনা যার ব্যপারে হুজুর সা: অথবা সাহাবায়ে কেরাম এ ধরণের উক্তি করেছেন যে, অমুক না হলে ইসলামে শক্তি পাওয়া যাবে। ইসলামের তরক্কি হবে, ইসলাম একটু উম্মুক্ত হতে পারবে ইত্যাদি। বরং হুজুর সা: ভাল ছাড়া অন্য কোন মন্তব্য করেননি। যারা ইসলামের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী কঠোর ছিলেন- হযরত ওমর ও আবু জেহেল, তাদের হেদায়েতের ব্যাপারে হুজুর সা: বড় আকাঙ্খী ছিলেন। হুজুর সা: চাইতেন তাদের দ্বারা ইসলাম জিন্দা হোক। তাদের খতম হওয়ার দোয়া কখনো করেননি।

আর এখন? অমুক অমুক না হলে ভাল হতো , এটা হতো ঐটা হতো । হজরতজী ইলিয়াস রহ: এর কাছে একজন বিশ্বস্ত লোক কারো ব্যাপারে মন খুলে খুব শেকায়েত করল। সব ধরণের কথাই সে বলল যে, অমুকে এটা করেছে ঐটা করেছে। এই সমস্যা করেছে ঐ সমস্যা করেছে!! হযরতজী সব কথা শুনার পর বললেন, দেখো তোমার এইসব কথায় আমার কোন আশ্চর্য লাগছেনা । আমার আশ্চর্য এতে নয় যে, সে এটা করেছে ঐটা করেছে। বরং অবাক হচ্ছি এতে যে, আল্লাহপাক তার থেকে দ্বীনের কাজ কেন নিচ্ছেন !!

অভিযোকারী ব্যক্তি বলেন, আমি তারপর থেকে তওবা করেছি আর কখনো কারো শেকায়েত করবোনা। যখন আল্লাহ তায়ালা তার থেকে কাজ নিচ্ছেন তাহলে কার কী সমস্যা? কে তাকে বের করবে? “কাজ আল্লাহপাকের”। জবাব দিন।

যদি কোন কারখানার কোন কর্মচারী ক্রটি করে তাহলে তার সাসপেন্ড করা বা বের করে দেওয়া আরেক কর্মচারীর দায়িত্ব নাকী মালিকের দায়িত্ব? কেউ কাউকে বের করতে পারেনা । “কাজ আল্লাহপাকের”। এধরণের মন্তব্য করা যে, অমুক অমুককে বের করে দিয়েছে। এটা কোরআন হাদিস আর আল্লাহপাকের চিরাচরিত কানুনের খেলাফ। কোন কর্মচারী কোন কর্মচারীকে বের করতে পারেনা। “কাজ আল্লাহপাকের” তাকে ভয় করতে থাকো- যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে কাজ নিবেন এটা তার খুশি। শেকায়েত নিয়ে গেলে পাত্তা নাও দিতে পারেন।

কারখানার ১০০০ কর্মচারী আছে কেউ কারো ধার ধারেনা। কেউ কারো অধীন নয়। হযরতজীর রহ: নিকট দু'টি কথা পাওয়া গেল। এক, অভিযোগকারীর কথায় আমার অবাক লাগছেনা। বরং অবাক লাগছে যে আল্লাহপাক তার থেকে কীভাবে কাজ নিচ্ছেন!! ২য় কথা পাওয়া গেল, যদি তোমার অভিযোগ সত্য হয় তাহলে আল্লাহপাক তাকে হেদায়েত দিন। আর যদি তোমার অভিযোগ সত্য না হয় তাহলে আল্লাহপাক তোমাকে হেদায়েত দিন।

মুশরিকরা হুজুরকে সব ধরণের নির্যাতন করেছে তবুও তিনি বলেননি আল্লাহপাক অমুক অমুককে হালাক করে দিন। অমুক অমুকের জন্য রোকাওট (সমস্যা) হচ্ছে তাকে সরিয়েদিন। হুজুর সা: নিজের নির্যাতনকারীদেরকে বাকী রেখেছেন বাঁচিয়ে রেখেছেন। আল্লাহপাক ধ্বংসের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তায়েফের ঘটনায় দু’দিকের জাবালে আহমারজাবালে আবু কুবায়েছ পাহাড়দ্বয়কে মিলিয়ে ধ্বংস করে দিতে চাওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি বাধা দিয়েছেন। আল্লাহপাকের অনুমতি ছিল, মাঝখানের সকল অধিবাসীদেরকে নি:ষ্পেষিত করে দেওয়ার , তবুও তিনি তা করেননি। কিন্তু অতীতের অনেক নবি আ: সর্বশেষ নিরাশ হয়ে এই প্রস্তাব গ্রহন করে আজাবের হাতিয়ার ব্যবহার করেছেন। নূহ আ: তুফানের মাধ্যমে, হুদ আ: বাতাসের মাধ্যমে। হুজুর সা: নির্যাতন কারীদের কারো ধ্বংস চাননি। বরং যখন বলা হয়েছে, এদের ভেতরে কেউ ঈমান আনবেনা। তখন তিনি বলেছেন, এরা ঈমান না আনলেও তাদের বংশের সন্তানেরা ঈমান আনবে।।

যদি নির্যাতনকারীদের ধ্বংস করে দেওয়া হয় তাহলে তাদের বংশ ও আগামী প্রজন্ম হালাক হয়ে যাবে। যেই মাখলুক এখনো দুনিয়ায় আসেনি তাদের হেদায়েতের জন্য নিজের নির্যাতনকারীদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। যেন আগন্ত প্রজন্মের হেদায়েত মিলে।

কষ্টদানকারীদের সন্তানদের হেদায়েত চাচ্ছেন। আরজ করছিলাম, এই কাজে দিলের প্রশস্ততা চাই। সংকীর্ণ দিলে এই কাজ হয়না। কে আমার? কে কার? এসব দিয়ে কাজ হবেনা। তঙ্গেদিল (সংকীর্ণ মন) দিয়ে ফেরকা তৈরী হয়, উম্মত তৈরী হয়না। উম্মত হওয়ার জন্য বড় দিল দরকার । হযরতজী ইলিয়াস রহ: ফরমাইতেন, দায়ীর দিল আসমান ও জমিনের চেয়ে বেশী প্রশস্ত হওয়া চাই। সকল মাখলুক এতে আসতে পারে।

মেরে দোস্ত! এটা এই কাজের মেজাজ। এই কাজে নিজেকে আগে রাখার জন্য কোরবানী চাই। তাকওয়া আর কোরবানীর মাধ্যমে আগে বাড়ো। আমাদের ভেতরে তাকওয়া আর ভয় তৈরী হয়। মানুষ কথা কবুল করবে তাওয়াজু ও নম্রতার কারণে। তাওয়াজুর ছিফত পয়দা না হলে নিজের ভেতরেও হককে ইনকার করার মেজাজ তৈরী হবে। যে ব্যক্তি হককে ইনকার করে কীবিরের কারণেই এটা করে থাকে।

এক ব্যক্তি হুজুর সা: এর পাশে খাবার খাচ্ছিল। সে বাম হাতে খাচ্ছিল। হুজুর সা: ফরমালেন , ডান হাতে খাও। কীছু মানুষের অভ্যাস আছে, যখন তাকে কোন গলদ কাজে টোকা হয় তখন তার কাছে খারাপ লাগে। তখন সে চেষ্টা করে অহংকার করত: মিথ্যা ওজর পেশ করে। ভাল মানুষ বলবে, ওহ! মনে ছিলনা মাফ করবেন। আর অহংকারী নিজের দোষ ঘুচাতে নিজের গলত ওজর পেশ করে। সে বললো আমি ডান হাতে খেতে পারিনা। সে অহংকারের কারণে অস্বীকার করেছে। বলল , আমি মাজুর হয়ে গেছি।

হুজুরের জানা ছিল তার ডান হাতে কোন অসুবিধা নেই। তিনি আবার বললেন, ডান হাতে খাও। পুনরায় জিদ ধরার কারণে হুজুর সা: বদদোয়া দিলেন, আল্লাহ করে তোমার ডান হাত কাজ না করে। রেওয়ায়েতে আছে, ঐ সময়ই তার ডান হাত বেকার হয়ে গেছে আর কখনো উপরে ওঠেনি। অথচ ডান হাতে খাওয়া ফরজ ওয়াজিব কীছুই ছিলনা। ডান হাতে খাওয়া সুন্নত। একটি হুকুম অস্বীকার করেছে। মিথ্যা ওজর পেশ করেছে। এটা অস্বীকার করেনি যে ডান হাতে খাবেনা। বলেছে ডান হাত উঠেনা। অহংকারের কারণে ঐ সময় হুকুম পুরা করেনি। হুজুর সা: বদদোয়া দিয়েছেন, রেওয়ায়েতে এসেছে ঐ সময়ই তার ডান হাত অচল হয়ে গেছে। সারা জীবন সে ডান হাতে খেতে পারেনি। এজন্য যখন যেই হুকুম আসে তৎক্ষণাৎ তা মানা চাই। আল্লাহ না করুন” যদি কেউ ইনকার করে বসে অস্বীকার করে কোন ওয়াজিবের বা ফরজের! কতবড় জুলুম হবে। একটি খাওয়ার সুন্নতের ইনকারের কারণে যদি এত বড় মাহরূমী! হাত বেকার হয়ে গেল। এজন্য যখন যে কাজের হুকুম করা হয় সেটা করা চাই। সাথে সাথে তা মানা চাই। “ওয়া মা আরসালনা’ মিররসু’লিন ইল্লা লি ত্ব’য়া বিইজনিল্লাহ” (৪_নিসা-৬৪) وَما أَرسَلنا مِن رَسولٍ إِلّا لِيُطاعَ بِإِذنِ اللَّهِ - সকল নবিদেরকে পাঠানো হয়েছিল তাদেরকে এতাআ’তের জন্য তাদেরকে মানার জন্য।

হুকুমের ইনকার করার কারণে ও অহংকারের কারণে অনেক সময় বঞ্চিত হয়ে যেতে হয়। সে ডান হাত থেকে বঞ্চিত হয়েছে অহংকারের কারণে। সে ইনকার করেছিল ডান হাতে খাবার খেতে। এজন্য নবিদের কোন হুকুমই ছোট নয়।।

আমাদের সকলকে এতাআ’তের সাথে এবং এজতেমাঈতের সাথে ও ছিফতে কবুলিয়তের সাথে এবং প্রশস্ত দিলের সাথে ও মাফ করতে করতে চলতে হবে। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। “সারা রাস্তা কোরবানীর” নাগাওয়ারী ও (অপছন্দনীয় অবস্থায়) চলবো তাহলে আল্লাহপাক ব্যবহার করবেন, কাজ নিবেন। কেননা আল্লাহপাকের কাছে কোরবানীর অনেক কদর রয়েছে। আল্লাহপাক বান্দার কোরবানীকে নষ্ট করেননা। বান্দা নিজের কোরবানীকে নিজে নষ্ট করে ফেলে।

আল্লাহপাক কারো কুরবানীকে নষ্ট করেননা। এজন্য নিজেকে নিজে এ কাজে আল্লাহর কাছে কবুল করাতে হবে। আর কবুলিয়তের জন্য বুনিয়াদী জিনিস হলো কোরবানী। যেমন পাখি নিজেকে বুলন্দিতে উঠাতে নিজের দুই ডানার সহযোগীতায় কষ্ট করে উপরে উঠে। পাখিকে কেউ সাহারা দেয়না (সাহায্য করেনা)। তদ্রুপ এই কাজের দুই ডানা হিজরত ও নছরত। হিজরত ও নছরতের দুই ডানার উপর কায়েম থাকতে হবে। তরক্কী করতে হলে মানুষের নিজের কোরবানী জরুরী। এর দ্বারাই আমাদেরকে আগে বাড়াতে হবে। খোদ নিজেরা নিজেকে পাবন্দ বানাতে হবে।

এজন্য আযম করি এরাদা করি। নিজেরা নিজেকে আমলের পাবন্দ বানাতে হবে তাহলে আমলী দাওয়াত চলবে। যে পাবন্দী করবেনা তার কথা তো শুধু কথার কথাই থেকে যাবে। আমাদের কাজে আমাদেরকে আমলী দাওয়াতের সাথে চলতে হবে। এজন্য আযম করুন। আমাদেরকে দাওয়াতের কাজে এই মেজাজ ও সিফতের সাথে চলতে হবে। কাজও আমানত এবং দ্বীনও আমানত। আমানত দারীর সাথে এই মেজাজ ও ছিফাতের সঙ্গে আমাদেরকে পুরা আলমে পৌঁছতে হবে। এজন্য আযম করুন এরাদা করুন। যাদের চার মাস লেগেছে তারা বেরুণের (বিদেশের) এরাদা করুন

সংগৃহীত

শিক্ষক বাতায়ন

প্রোফাইল

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি