Loading..

ম্যাগাজিন

০৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০৯:১৮ অপরাহ্ণ

সকল আধুনিক পাখিকে নিওর্নিথিস উপশ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বিবেচনা করা হয়, মোছাঃ মার্জুয়ারা বেগম,প্রধান শিক্ষক, দক্ষিণ বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডিমলা নিলফামারি।

পাখি (লাতিনস্পেনীয়পর্তুগিজইতালীয়: Ave, জার্মানVogelইংরেজিBirdফরাসিOiseau) পালক ও পাখাবিশিষ্ট দ্বিপদী প্রাণী। কিছু পতঙ্গ এবং বাদুড়ের পাখা থাকলেও কেবল পাখিদেরই পালক আছে। পৃথিবীতে পাখির প্রজাতি রয়েছে প্রায় ১০০০০ টি। এমনিতে সব জীবিত পাখিই নিঅর্নিথিস উপশ্রেণীর অন্তর্গত। পাখির শ্রেণীকে (Aves) মোট ২৩টি বর্গ, ১৪২টি গোত্র, ২০৫৭টি গণ এবং ৯৭০২টি প্রজাতিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে।[২] তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে এবং পুরোনো কিছু প্রজাতিকে বিভাজন করে নতুন প্রজাতি নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত জীবাশ্ম নির্দেশ করে যে পাখিদের আবির্ভাব হয়েছিল জুরাসিক যুগে, প্রায় ১৬ কোটি বছর আগে। জীবাশ্মবিজ্ঞানীদের মতে, সাড়ে ৬ কোটি বছর আগের ক্রিটেশাস-প্যালিওজিন বিলুপ্তির পর পাখিরাই চার উপাঙ্গবিশিষ্ট ডাইনোসরের একমাত্র বংশধর। জীবিত পাখিদের মধ্যে মৌ হামিংবার্ড সবচেয়ে ছোট (মাত্র ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চি) আর উটপাখি সবচেয়ে বড় (২.৭৫ মিটার বা ৯ ফুট)।

মাছউভচরসরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ীদের মত পাখিরাও মেরুদণ্ডী প্রাণী। আধুনিক যুগের পাখিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- পালক, দন্তবিহীন চঞ্চু, শক্ত খোলকবিশিষ্ট ডিম যার সাহায্যে এরা এদের বংশধর রেখে যায়, চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট হৃৎপিণ্ড, উচ্চ কোষীয় জৈব-রাসায়নিক হার, হালকা কিন্তু মজবুত হাড় ইত্যাদি। সব পাখিরই ডানা আছে, একমাত্র ব্যতিক্রম অধুনালুপ্ত নিউজিল্যান্ডের মোয়া। সামনের উপাঙ্গ বিবর্তিত হয়ে আসলে ডানার রূপ লাভ করেছে। প্রায় সব পাখি উড়তে পারে এবং উড্ডয়নে অক্ষম পাখিগুলিও (যেমন উটপাখিপেঙ্গুইন) উড়তে সক্ষম পূর্বপুরুষের বিবর্তনের ফসল। উড়তে অক্ষম পাখিদের বেশিরভাগই কতিপয় দ্বীপের স্থানিক বাসিন্দা। পাখিদের পরিপাক ও রেচন প্রক্রিয়া তাদের সহজভাবে ওড়ার জন্য অনুকূল এবং অন্য সব প্রাণীদের থেকে একেবারেই আলাদা। পাখিদের মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি, বিশেষত কাক ও টিয়ার কয়েকটি প্রজাতি, প্রাণিজগতে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। কয়েক প্রজাতির পাখি ছোটখাটো হাতিয়ার বানানো ও তা ব্যবহারের কৌশল রপ্ত করেছে। কিছু কিছু সামাজিক পাখির মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান সঞ্চালন করে যেতে দেখা যায়।

পাখিদের মধ্যে অনেকেই পরিযায়ী। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এরা বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে একস্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। এ ধরনের স্থানান্তর থেকে বেশি দেখা যায় স্বল্পদৈর্ঘ্যের অনিয়মিত গতিবিধি। বেশিরভাগ পাখিই সামাজিক জীব। এরা দৃষ্টিগ্রাহ্য সংকেত এবং ডাক বা শিষের মাধ্যমে একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করে। বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপেও এরা অংশ নেয়, যেমন- একই ঋতুতে প্রজননে অংশ নেয়া, একসাথে কলোনি করে বাসা করা, ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানো, দলবদ্ধ ভাবে খাবার খোঁজা এমনকি দল বেঁধে শত্রুকে তাড়িয়ে দেয়া। অধিকাংশ পাখিই কেবলমাত্র একটি প্রজনন ঋতুর বা সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য একগামী, সারা জীবনের জন্য জুটি বাঁধার ব্যাপারটি কমই দেখা যায়। বহুপতি বা বহুপত্নী প্রথাও পাখিদের মধ্যে দেখা যায়। পাখিরা সাধারণত তাদের প্রস্তুতকৃত বাসাতেই ডিম পাড়ে এবং বাবা-মা তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বেশিরভাগ পাখি বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পরও বেশ কিছুদিন সময় পর্যন্ত বাচ্চার প্রতিপালন করে।

পাখির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। খাদ্য হিসেবে এদের গুরুত্ব অপরিসীম। মাংসের জন্য এদের বহু প্রজাতিকে শিকার করা হয় আর কিছু প্রজাতিকে বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। ঘরের পোষা পাখি হিসেবে টিয়াময়নাতোতাচন্দনা, বহু প্রজাতির গানের পাখি আর বাহারি পাখির বেশ কদর রয়েছে। পাখির বিষ্ঠা থেকে উৎপন্ন গুয়ানো সার হিসেবে উৎকৃষ্ট ও এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে। সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এমনকি সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাখি এক বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে। ১৭শ শতক থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপে ১২০ থেকে ১৩০টি পাখি প্রজাতি দুনিয়া থেকে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে। তারও আগে আরও একশ'টির মত প্রজাতি একই ভাগ্য বরণ করেছে। মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে বর্তমানে প্রায় বারোশ'র মত প্রজাতি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

বিবর্তন ও শ্রেণীবিন্যাস[সম্পাদনা]



পাখিদের শ্রেণীবিন্যাসকরণ প্রথম ঘটে ফ্রান্সিস উইলোবি ও জন রে'র হাত ধরে।[৩] ১৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাদের গ্রন্থ অর্নিথোলজিতে (Ornithologiae) তারা পাখির শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। ১৭৫৮ সালে শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার উন্নয়ন ঘটান এবং দ্বিপদ নামকরণের প্রবর্তন করেন যা এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে।[৪] লিনিয়াসের নিয়মে পৃথিবীর সকল পাখি প্রজাতিকে অ্যাভিস (Aves) শ্রেণীর আওতাভুক্ত করা হয়েছে। জাতিজনি শ্রেনীবিন্যাসে অ্যাভিসকে ডাইনোসরের শাখা থেরোপোডার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[৫] সরীসৃপ আর্কোসরিয়া ক্লেডের জীবিত বংশধর হচ্ছে অ্যাভিস এবং তাদের সহযোগী গোষ্ঠী ক্রোকোডিলিয়া। ১৯৯০-এর শেষের দিকে অ্যাভিস শ্রেণীকে আধুনিক সকল পাখি প্রজাতি এবং আর্কিওপ্টেরিক্সের উৎস হিসেবে বিবৃত করা হয়।[৬] পরবর্তীকালে জ্যাক গোথিয়ে প্রদত্ত আরও পূর্বের একটি প্রস্তাবনা একুশ শতকে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। গোথিয়ে অ্যাভিস শ্রেণীতে কেবলমাত্র আধুনিক পাখিদের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতি ছিলেন, যাকে তিনি নামকরণ করেন ক্রাউন গ্রুপ হিসেবে। তিনি জীবাশ্ম থেকে পাওয়া দল ও প্রজাতিসমূহের জন্য আলাদা আরেকটি দল অ্যাভিলি-এর প্রস্তাব করেন।[৭] মূলত চার উপাঙ্গবিশিষ্ট থেরোপড ডাইনোসরদের সাথে আর্কিওপ্টেরিক্সের সম্পর্ক নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের জন্যই তার এই প্রস্তাবনা।

সব আধুনিক পাখিই ক্রাউন গ্রুপ নিওর্নিথিস-এর অন্তর্ভুক্ত।[৮] এটি আবার দুটি বড় ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগ হল প্যালিওগন্যাথি; বেশিরভাগ উড্ডয়নে অক্ষম পাখিরা এ দলের অন্তর্ভুক্ত।[৯] আরেকটি ভাগের নাম নিওগন্যাথি; যাতে আর বাকি সব পাখিরা অন্তর্ভুক্ত।[৫] ফলে এই উপবিভাগটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। অনেকসময় এই দুটি বড় দলকে মহাবর্গ নামে শ্রেণীবিন্যাসগত ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১০] শ্রেণীবিন্যাসগত দিক থেকে পৃথিবীতে বর্তমানে জীবিত পাখি প্রজাতির সংখ্যা ৯,৮০০[১১] থেকে ১০,০৫০টি[১২]

আধুনিক পক্ষীবর্গসমূহের শ্রেণীবিন্যাস[সম্পাদনা]

সকল আধুনিক পাখিকে নিওর্নিথিস উপশ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বিবেচনা করা হয়। বর্তমান তালিকাটিতে পুরোন শ্রেণীবিন্যাসের (তথাকথিত ক্লিমেন্টস অর্ডার) পরিশীলিত রূপ ব্যবহার করা হয়েছে। এ পরিশীলিত রূপটি দিয়েছে সিবলি-মনরোর শ্রেণীবিন্যাস।


Struthioniformes
 (স্ট্রুথিওনিফর্মিস)—উটপাখিএমুকিউইক্যাসোয়ারি ও তাদের সহজাতউপশ্রেণী নিওর্নিথিস
উপশ্রেণী নিওর্নিথিস দুটি মহাবর্গে বিভক্তs – মহাবর্গ প্যালিওগন্যাথি:

মহাবর্গ নিওগন্যাথি:

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

মানুষের সাথে সাথে পৃথিবীজুড়ে সমানতালে পাতি চড়ুইয়ের বিস্তৃতি বেড়েছে।[১৪]

পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই পাখিরা বিস্তৃত, অর্থাৎ সাতটি মহাদেশের সবখানেই পাখি দেখা যায়। বেশিরভাগ পাখির বায়বীয় অভিযোজন ঘটেছে বলে এদের অবাধ গমন সম্ভব হয়েছে।[১৫] উড়বার জন্য দেহ হালকা হয়েছে এবং দেহের আকৃতি মাকুর মত হয়েছে। বায়ু অভিযোজন হলেও খাদ্য গ্রহণ, আত্মরক্ষা, প্রজনন ইত্যাদি কারণে অরণ্য সমভূমি, পর্বত-গাত্র, লোকালয়, নদ-নদী, খালবিল, সাগর সর্বত্রই পাখিদের বিস্তৃতি ঘটেছে।[১৬] এমন কয়েক গোত্রের পাখি রয়েছে যাদের পানিতে বিশেষভাবে অভিযোজন ঘটেছে। কিছু সামুদ্রিক পাখি তাদের জীবনের সিংহভাগ কাটায় সমুদ্রে, কেবল ডিম পাড়ারজন্য ডাঙায় আসে।[১৭] কয়েক প্রজাতির পেঙ্গুইন সমুদ্রের ৩০০ মিটার (প্রায় ৯৮০ ফুট) গভীর পর্যন্ত ডুব দিতে পারে।[১৮] পৃথিবীর সর্বদক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ৪৪০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে তুষার পেট্রেলের প্রজনন কলোনির সন্ধান পাওয়া গেছে।[১৯] গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে পাখিদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। পূর্বে ধারণা ছিল যে এসব অঞ্চলে পাখিদের প্রজাত্যায়নের হার বেশি বলে প্রজাতির সংখ্যাও বেশি। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে গ্রীষ্মকালীন অঞ্চলের তুলনায় অন্যসব অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে পাখিদের বিলুপ্তির হার ছিল বেশি।[২০] সে কারণে সেসব অঞ্চলে তাদের বৈচিত্র্য কম।

বেশ কিছু প্রজাতির পাখি মানুষের মাধ্যমে তাদের আদি আবাস থেকে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেখানে সফলভাবে বংশবৃদ্ধি চালিয়ে যাচ্ছে।[২১] এ ধরনের অবমুক্তকরণের ফলে বেশ কিছু পাখি প্রায় সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে; যেমন পাতি মথুরা (Phasianus colchicusশিকারযোগ্য পাখি হিসেবে সারা বিশ্বে বিস্তৃত।[২২] আবার মানুষের অনিচ্ছায় কিছু প্রজাতি অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন উত্তর আমেরিকার বহু শহরে খাঁচা থেকে পালিয়ে যাওয়া মুনি টিয়ারা তাদের নতুন ঘাঁটি গেড়ে বসেছে।[২৩] আবার কৃষিকাজে উন্নয়নের ফলে গো বগা,[২৪] হলদেমাথা কারাকারা[২৫] ও গালাহ্[২৬] তাদের আদি আবাস থেকে বহু দূরে স্বাভাবিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

পাখির উড্ডয়ন[সম্পাদনা]

ফ্ল্যাপিং পদ্ধতিতে উড্ডয়ন

উড্ডয়ন পৃথিবীর বেশিরভাগ পাখির চলাফেরা করার সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। পৃথিবীর প্রায় বেশিরভাগ প্রাণী থেকে পাখিকে এই একটিমাত্র বৈশিষ্ট্য দিয়ে আলাদা করা যায়। খাদ্য সংগ্রহ, প্রজনন, শিকারীর হাত থেকে রক্ষা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে পাখির উড্ডয়ন ক্ষমতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পাখির শারীরিক গঠন এমনভাবে অভিযোজিত হয়েছে যাতে উড়ে বেড়াতে সহজ হয়। সামনের দু'টি উপাঙ্গ বহু বছরের বিবর্তনে অভিযোজিত হয়ে ডানায় রূপান্তরিত হয়েছে এবং এই ডানার বিভিন্ন ব্যবহারের ফলেই পাখি আকাশে ভেসে বেড়াতে পারে। উড্ডয়ন-কৌশলের উৎপত্তি সম্পর্কে তিনটি প্রধান মতবাদ পাওয়া যায়। পাউন্সিং প্রোঅ্যাভিস মতবাদ, কার্সোরিয়াল মতবাদ এবং আর্বোরিয়াল মতবাদ। পাউন্সিং প্রোঅ্যাভিস মতবাদ অনুসারে পাখিরা আসলে শিকারী প্রাণী থেকে উদ্ভূত হয়েছে যারা উঁচু স্থান থেকে অ্যাম্বুশ করে শিকার করত। এ সময় তারা তাদের সামনের দুই উপাঙ্গ ব্যবহার করত শিকার আঁকড়ে ধরার কাজে। প্রথম দিকে তারা শিকারকে টেনে নিয়ে যেত। পরে শিকার বহন করে নিয়ে যেত। শিকার ধরার সময় যে সময়টুকু এরা শূণ্যে ভেসে থাকত, সে সময় তাদের সামনের উপাঙ্গের গতি-প্রকৃতি ও গঠনের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। কার্সোরিয়াল মতবাদ অনুসারে ভূমিতে দ্রুত দৌড়ানোর ফলে পাখির উড্ডয়নের উৎপত্তি ঘটেছে। পাখির পূর্বপুরুষ দীর্ঘ লেজযুক্ত দৌড়বাজ দ্বিপদী প্রাণী ছিল। এরা দ্রুত দৌড়াতে পারত এবং শক্তিশালী পশ্চাদপদের ওপর ভর দিয়ে লাফ দিতে পারত। এরা বাতাসের মধ্যে অগ্রপদ বিস্তৃত করতে পারত। আবার আর্বোরিয়াল মতবাদে বলা হয়েছে, পাখির পূর্বপুরুষ বৃক্ষবাসী প্রাণী ছিল। তারা গাছে চড়ত এবং সেখান থেকে গ্লাইড করে মাটিতে নামত বা অন্য গাছে যেত। এ ধরনের পাখি গাছ বা উঁচু জায়গা থেকে কিছুটা দূরত্বে বাতাসের মধ্যে দিয়ে গ্লাইড করতে বা উড়ে যেতে সক্ষম ছিল। সময়ের ব্যবধানে অগ্রপদ ক্রমশ বড় হয় এবং ডানাতে পরিণত হয়। যা প্রাণীকে উড়বার সময় ভর রক্ষা করতে সহায়তা করত।

পাখি বিভিন্ন পদ্ধতিতে উড়ে বেড়ায়; যেমন: ফ্ল্যাপিং, সোরিং, গ্লাইডিং বা স্কিমিং, হোভারিং ইত্যাদি। পাখির উড্ডয়ন পদ্ধতি এর ডানার গঠন আর দেহের আকারের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও পৃথিবীতে প্রায় ৬০ প্রজাতির পাখি আছে যারা একেবারেই উড়তে পারে না[২৭] অধিকাংশ বিলুপ্ত পাখি উড়তে অক্ষম ছিল। এসব পাখিদের অধিকাংশই দ্বীপবাসী। ধারণা করা হয়, দ্বীপে কোন শিকারী প্রাণী না থাকায় এসব পাখির পূর্বপুরুষদের আত্মরক্ষার জন্য উড়বার প্রয়োজন পড়েনি।[২৮] সে কারণে ক্রমে ক্রমে তাদের উড়ার ক্ষমতা লোপ পায়। এধরনের পাখিরা তাদের ডানাকে উড়বার মত করে ব্যবহার করতে পারে না। তবে পেঙ্গুইনঅক প্রভৃতি উড্ডয়ন-অক্ষম পাখি পানিতে সাঁতার কাটার সময় ঠিক উড়ার মত করে ডানা ব্যবহার করে।[২৯]

স্বভাব[সম্পাদনা]

বেশিরভাগ পাখিই স্বভাবে দিবাচর। তবে বেশ কিছু প্রজাতির প্যাঁচারাতচরা ও ব্যাঙমুখো নিশাচর জীব। বহু প্রজাতির পাখি আবার সন্ধ্যায় বা ভোরে সক্রিয় থাকে। হাঁসজাতীয় পাখি আর বকেরা পূর্ণিমা রাতেও খাবার খুঁজে বেড়ায়। আবার পানিকাটা পাখিরা খাদ্যের জন্য জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল বলে এদের দিন বা রাত নিয়ে কোন সমস্যা নেই। দিন হোক বা রাত হোক, জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে এরা সক্রিয় হয়।[৩০]

পরিযান[সম্পাদনা]

পৃথিবীর উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণে নিউজিল্যান্ডে দাগিলেজ জৌরালির (Limosa lapponica) পরিযান পথ। কোথাও না থেমে একটানা উড়ে একস্থান থেকে আরেক স্থানে পরিযান করার রেকর্ড রয়েছে এ প্রজাতিটির; প্রায় ১০,২০০ কিলোমিটার (৬,৩০০ মাইল।)

কিছু প্রজাতির মাছ, স্তন্যপায়ী প্রাণী এমনকি পোকামাকড়ও ফিবছর পরিযান ঘটায়। তবে পাখির মত এত ব্যাপক আর বিস্তৃতভাবে কেউই পরিযানে অংশ নেয় না। পৃথিবীর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১৮৫৫ প্রজাতিই (প্রায় ১৯%) পরিযায়ী।[৩১] বহু প্রজাতির পানিকাটাজলচরশিকারী ও ভূচর পাখিরা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পরিযান করে। পাখি পরিযানের অন্যতম দু’টি কারণ হচ্ছে খাদ্যের সহজলভ্যতা আর বংশবৃদ্ধি। উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ পরিযায়ী পাখি বসন্তকালে উত্তরে চলে আসে পোকামাকড় আর নতুন জন্ম নেয়া উদ্ভিদ ও উদ্ভিদাংশ খাওয়ার লোভে। এসময় খাদ্যের প্রাচুর্যের কারণে এরা বাসা করে বংশবৃদ্ধি ঘটায়। শীতকালে বা অন্য যে কোন সময়ে খাবারের অভাব দেখা দিলে এরা দক্ষিণে রওনা হয়।[৩২][৩৩] আবহাওয়াকে পাখি পরিযানের অন্য আরেকটি কারণ হিসেবে ধরা হয়। শীতের প্রকোপে অনেক পাখিই পরিযায়ী হয়। হামিংবার্ডও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে খাবারের প্রাচুর্য থাকলে প্রচণ্ড শীতেও এরা বাসস্থান ছেড়ে নড়ে না।[৩২] বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্য পরিযানের ধরনও বিভিন্ন।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি